Advertisement
E-Paper

জল-তাণ্ডবে বেহাল বেঙ্গালুরু, দু’দিনে লোকসান ২৫ হাজার কোটি

সুনসান হাইওয়ে। টহল দিচ্ছে পুলিশ। তারমধ্যে হঠাৎ একটা চলমান জটলা। যেন একটা মিছিল। সামনে হাঁটছেন বছর পঁচিশের এক তরুণী। পরনে পাটভাঙা হলুদ বেঙ্গালুরু সিল্ক। গা-ভর্তি গয়না। পিছনে আরও জনা কুড়ি মানুষজন। কারও হাতে বাসন, কারও বা কাঁধে বিশাল এক ঘড়া। কেউ বা নিয়েছেন জামাকাপড়ের পুঁটলি। ব্যাপার কী?

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৯
দাঙ্গার পরে। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে পুলিশি টহল। ছবি: পিটিআই।

দাঙ্গার পরে। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে পুলিশি টহল। ছবি: পিটিআই।

সুনসান হাইওয়ে। টহল দিচ্ছে পুলিশ। তারমধ্যে হঠাৎ একটা চলমান জটলা।

যেন একটা মিছিল। সামনে হাঁটছেন বছর পঁচিশের এক তরুণী। পরনে পাটভাঙা হলুদ বেঙ্গালুরু সিল্ক। গা-ভর্তি গয়না। পিছনে আরও জনা কুড়ি মানুষজন। কারও হাতে বাসন, কারও বা কাঁধে বিশাল এক ঘড়া। কেউ বা নিয়েছেন জামাকাপড়ের পুঁটলি। ব্যাপার কী?

ব্যাপার গুরুতর। বুধবার মেয়ের বিয়ে! পাত্রী কন্নড়, কমার্সে স্নাতক, নাম— আর প্রেমা। বাড়ি বেঙ্গালুরুতে। আর পাত্র তামিল। বাড়ি তামিলনাড়ুতে, সীমানা থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে।

জল নিয়ে দাঙ্গার জেরে মঙ্গলবারও চাদর ওঠেনি কার্ফুর। যানবাহন বিশেষ চলেনি বেঙ্গালুরু-মাইসুরু হাইওয়েতেও। যে হাইওয়েতে বাস-ট্রাক পোড়ানো দিয়ে কাল গণ্ডগোলের সূত্রপাত। এ দিকে, প্রথা মেনে প্রেমার বিয়ে হবে ছেলের বাড়িতে। ফলে কিছুটা পথ বাস-অটোয় এলেও শেষ পর্যন্ত হণ্টনের পথই বেছে নিতে হলো কনেযাত্রীর দলকে।

হাইওয়ে ধরে পাক্কা চার কিলোমিটার হাঁটতে হাঁটতে তত ক্ষণে ঘেমে-নেয়া একসা প্রেমা। এরই মধ্যে আবার ফোন ধরতে হচ্ছে হবু বরের— আর কতদূর! বিয়ের আগের দিন কত আচার-অনুষ্ঠান, নিয়ম-কানুন আর আনন্দে ভেসে যাওয়ার কথা ছিল কনের। প্রেমার তাই আক্ষেপ, ‘‘সবটাই জলে গেল। ৬০০ জনকে নেমন্তন্ন করেছিলাম। কিন্তু আসতে পেরেছেন মাত্র কুড়ি জন।’’ এত হাঙ্গামা করে বিয়ে। তবু মনে-প্রাণে চাইছেন, বিয়ের সানাইয়ে যেন চাপা পড়ে যায় বেসুরো বিভেদ।

পড়শি দুই রাজ্যের বিভেদ মুছে যাক, চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। আজই এক বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়াটা কোনও বিকল্প নয়। হিংসা দিয়েও কোনও সমস্যার সমাধান হয় না।’’

বেঙ্গালুরু তবু ছন্দে ফিরছে কই? দাঙ্গার আগুন নিভলেও মঙ্গলবারও তার আঁচ পোহাতে হয়েছে শহরবাসীকে। আজও শহরের অন্তত ১৬টি থানা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি ছিল। পুলিশের গুলিতে গত কালই এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছিল। পশ্চিম বেঙ্গালুরুর এক হাসপাতাল থেকে আজ ফের মৃত্যুর খবর মিলেছে। জানা গিয়েছে, পুলিশি লাঠিচার্জ থেকে বাঁচতেই কুমার নারায়ণ নামে বছর বত্রিশের ওই বিক্ষোভকারী সোমবার এক বহুতল থেকে ঝাঁপিয়ে গুরুতর জখম হন। আজ তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের পরিবারের দাবি, পুলিশ বহুতলের উপরে উঠেও বেধড়ক মারধর করেছিল তাঁকে।

আজও থমথমে চেহারা ছিল শহর জুড়ে। সরকারি অফিস-কাছারিতে ইদের ছুটি থাকলেও কার্ফু-এলাকার বাইরে বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ দিন খোলা ছিল। তবে অনেক অফিসেই তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে কর্মীদের ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করতে বলা হয়। কাল থেকেই খুলছে রাজ্যের বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ। কিছুটা স্বস্তি মিলেছে এয়ার ইন্ডিয়া-সহ বেশ কিছু অন্তর্দেশীয় বিমান সংস্থার ঘোষণায়। ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেঙ্গালুরু ও হুবলি বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে টিকিট বাতিল করলে কোনও টাকা কাটা হবে না বলে জানিয়েছে তারা। প্রয়োজনে উড়ান পরিবর্তনের সুযোগও দিচ্ছে তারা।

এ দিকে, গত দু’দিনে বেহাল দশা ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স সংস্থারও। আজ দিনভর বন্ধ ছিল তাদের অফিস। ফ্লিপকার্টের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের দফতর থেকে যাঁরা গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছে দেন, তাঁদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই অফিস খোলা হয়নি।’’ বন্ধ ছিল ইনফোসিস, উইপ্রো-সহ বহু তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার অফিস। এই বেহাল পরিস্থিতিতে বেঙ্গালুরুর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোয় ২২-২৫ হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে দাবি করেছে অ্যাসোচেম।

কর্নাটক পুলিশের যদিও দাবি, ছন্দে ফিরছে রাজ্য। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত সাতশো কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পৌঁছেছে কর্নাটকে। আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার আর্জি জানিয়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর দাবি, কিছু সংগঠনের নাম করে রাজ্যে বসবাসকারী তামিলদের উপর হিংসা ছড়াচ্ছে কিছু দুষ্কৃতী। সংবাদমাধ্যমকেও গঠনমূলক ভূমিকা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বেঙ্কাইয়া নায়ডু। পাশাপাশি, কাবেরীর জলবণ্টন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই কর্নাটক ও তামিলনাড়ুকে এক টেবিলে বসার ডাক দিয়েছেন তিনি। জলের ভাগ নিয়ে অবশ্য অনড় তামিলনাড়ু।

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নতুন নির্দেশ মেনে দিনে ১২ হাজার কিউসেক করেই জল দেওয়া হবে পড়শি রাজ্যকে। তবে কাবেরীর জলভাগ নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা করতে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে চাইছেন তিনি। তামিলনাড়ুর পাশাপাশি, কেরল ও পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়েও বৈঠকের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী।

Bengaluru Violence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy