Advertisement
E-Paper

উপত্যকায় কেমন আছেন তাঁরা? মর্মস্পর্শী লেখা পুলিশ-পত্নী আরিফার

আরিফার স্বামী জম্মু-কাশ্মীর পুলিশে কাজ করেন। উপত্যকায় কর্মরত অন্য পুলিশকর্মীদের মতো তাঁর স্বামীও পরিবারকে একফোঁটা সময় দিতে পারেন না। সারা ক্ষণ উদ্বেগের ভিতরেই কাজ করে যেতে হয়।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৩৭
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আরিফা তৌসিফের নাম কেউই জানে না। কিন্তু, সেই অচেনা আরিফারই ছোট একটা লেখা দেশ জুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

তিনি লিখেছেন, খুব দ্রুতই উপত্যকায় পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। শুধু উর্দিধারীরাই নন, জম্মু-কাশ্মীরে এখন জঙ্গি নিশানায় পুলিশকর্মীদের পরিবারগুলিও। সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীর পুলিশকর্মীদের পরিজনদের অপহরণ করেছিল জঙ্গিরা। পরে তাঁদের যদিও মুক্তি দেওয়া হয়। শুধু ওই ক’দিনই নয়, প্রতি দিন প্রতি মুহূর্তে পুলিশ-পত্নীদের কী উদ্বেগ, অশান্তিতে কাটাতে হয়? এমন একটা অবস্থায় কী ভাবে কাটাচ্ছে ওই পরিবারগুলি? নিজের লেখায় সে কথাগুলিই তুলে ধরেছেন আরিফা।

আরিফার স্বামী জম্মু-কাশ্মীর পুলিশে কাজ করেন। উপত্যকায় কর্মরত অন্য পুলিশকর্মীদের মতো তাঁর স্বামীও পরিবারকে এক ফোঁটা সময় দিতে পারেন না। সারা ক্ষণ উদ্বেগের ভিতরেই কাজ করে যেতে হয়। তাঁর উর্দির পরিচয়ের হাত ধরেই পরিবারে নেমে আসে এক রাশ অনিশ্চয়তা। বাবা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে একাকী সন্তানকে বড় করে তুলতে হয়, কী ভাবেই বা নিজের সন্তানদের সঙ্গে তাঁদের বাবাকে নিয়ে দিনের পর দিন মিথ্যা কথা বলতে হয়, কী ভাবে নিজের শ্বশুর-শাশুড়িকে বানিয়ে বলতে হয় তাঁদের ছেলের কথা— লাইনের পর লাইন সে সবই লিখেছেন তিনি।

এমন একটা পরিস্থিতিতে আরিফারা একেবারেই একা। অসহায়। নিজেদের যুদ্ধটা লড়ে দেওয়ার মতো পাশে কেউই নেই। এমনকি তাঁদের সমর্থন করার মতোও কাউকে পাওয়া যায় না বলে ওই লেখায় দাবি করেছেন আরিফা। তিনি লিখছেন, ‘‘বয়ঃসন্ধি কাল থেকেই স্বপ্ন দেখেছিলাম বিয়ের পর একসঙ্গে থাকব। অন্য রকম ভাবে জীবন কাটাব। কিন্তু, পুলিশ কর্মীর স্ত্রী হওয়ার পর সে সব স্বপ্ন এখন বহু দূরের। দুপুর হোক বা রাত, খাবার টেবিলে সেই কাছের মানুষটির জন্য সব সময়েই থাকে অনন্ত অপেক্ষা।’’

আরিফা জানিয়েছেন, নিরাপত্তাহীনতায় সর্বক্ষণ ভোগেন তাঁরা। ঝুঁকি ও বিপদ ওত পেতে থাকে সর্বক্ষণ। পুলিশকর্মীদের গুলিতে কারও মৃত্যু হলে সেই আঁচ পড়ে গৃহিণীদের ওপর। আরিফার কথায়, ‘‘তখন সকলে আমাদেরই দোষী করে। অথচ আমাদের প্রিয়জনদের কেউ যখন হামলায় মারা যান, পাশে কাউকে পাই না।’’

পারিবারিক অনুষ্ঠান বা বাইরে ঘুরতে যাওয়া— একসঙ্গে যাওয়ার কথা তাঁরা ভাবেন ঠিকই। কিন্তু তা আর হয় কই? সন্তানের কাছে নিরন্তর প্রতিশ্রুতিভঙ্গের জন্য আক্ষেপ করেছেন আরিফা। নিজেকে ‘বড় মিথ্যাবাদী’ বলে আরিফা লিখেছেন, ‘‘বাচ্চাদের মিথ্যা কথা বলছি সব সময়। এই তো বাবা সপ্তাহের শেষে আসবে, ইদে বাবা সঙ্গে থাকবে, এ সপ্তাহেই আমরা সকলে মিলে পিকনিকে যাব। বা একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাব। শ্বশুর-শাশুড়িকেও মিথ্যা বলে যাচ্ছি দিনের পর দিন। একটা সময়ে নিজেই মিথ্যা আশ্বাসে জড়িয়ে যাই।’’

স্থানীয় একটি ওয়েবসাইটে এক নিবন্ধে আরিফা নিজেদের দুর্দশার আরও কথা লিখেছেন। ওই লেখাতেই আরিফা বলছেন, ‘‘একা ঘুমোতে যাওয়াটাই শুধু চাপের নয়, তার চেয়েও বেশি উদ্বেগের মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে উঠে বসা পড়াটা। দমবন্ধ হয়ে আসে তখন। কেউ পাশে নেই। শুধু অপেক্ষা, অপেক্ষা এবং অপেক্ষা... এই আশায় যে আজ, কাল কিংবা কোনও এক দিন আমাদের ইচ্ছেপূরণ হবে। প্রিয় মানুষটি বাড়ি আসবে। তবে যখন সে আসেও বা ফোনে কথা বলে, তাদের মন জুড়ে থাকে বাহিনীর প্রতি কর্তব্য, আর কর্তব্য।’’ আরিফা লিখেছেন, ‘‘ঝুঁকি ও বিপদ দিন দিন যেন বাড়ছে। অন্য কোথাও কোনও পুলিশকর্মী মারা গেলে আমাদের জীবন আরও অনিশ্চিত ও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে।’’

কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও কটাক্ষ করেছেন আরিফা। লিখেছেন, ‘‘এখানে পশুচিকিৎসকেরা হয়ে ওঠেন সহকারী পুলিশ সুপার, শারীরশিক্ষার ডিগ্রি নিয়ে কেউ হয়ে যান প্রশাসক, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়ে কেউ হন ঠিকেদার।’’ তবে লেখার শেষে এই হতাশা থেকে বার হওয়ার চেষ্টাও করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘এক দিন হয়তো কালো মেঘ কেটে শান্তি ও সুস্থিতির পথে ফিরবে কাশ্মীর।’’

Police Jammu and Kashmir India Pakistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy