Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
national news

কাতর আর্তি দেখেও দেখল না কেউ, রাস্তাতেই প্রসব করলেন সোনামণি

জাতীয় সড়কের ধারে খোলা আকাশের নীচে সদ্য প্রসব হওয়া সন্তানকে নিয়ে শুয়ে রয়েছেন মা সোনামণি। যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। পাশে বসে অসহায় আরও তিনটি ছোট ছোট সন্তান।

রাস্তাতেই সন্তানের সঙ্গে সোনামনি। নিজস্ব চিত্র।

রাস্তাতেই সন্তানের সঙ্গে সোনামনি। নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
রাঁচি শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৭:৪১
Share: Save:

জাতীয় সড়কের ধারে খোলা আকাশের নীচে সদ্য প্রসব হওয়া সন্তানকে নিয়ে শুয়ে রয়েছেন মা সোনামণি। যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। পাশে বসে অসহায় আরও তিনটি ছোট ছোট সন্তান। পথচলতি মানুষ ছিলেন, ১০০ মিটার দুরে একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রও ছিল, কিন্তু কেউ ফিরেও দেখলেন না দীর্ঘ ক্ষণ। এ রকমই এক অমানবিক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রইল ঝাড়খণ্ডের লাতেহার।

ওড়িশার কালাহান্ডির দানা মাঝি অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে তাঁর স্ত্রীর দেহ ঘাড়ে করে ১০ কিলোমিটার হেঁটেছিলেন। সে ছবি দেখে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়েছিল। আর লাতেহারের হেসলা গ্রামের সোনামণি, ৭৫ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে যখন খোলা আকাশের নীচেই পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন, বহু কাকুতি মিনতিতে তাঁকে ১০০ মিটার দূরের হাসপাতালে পৌঁছতে কেউ এগিয়ে এল না।

পূর্ণ গর্ভবতী সোনামণি তাঁর তিন সন্তানের আধার কার্ড তৈরি করানোর জন্য হেসলা গ্রাম থেকে বেরোন গত কাল, শুক্রবার, দুপুরে। তাঁর এক আত্মীয়া মানু কুমারী বলেন, ‘‘ওই শারীরিক অবস্থার কারণে ওকে একা একা, তিনটে বাচ্চাকে নিয়ে সদরে যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ও বলল, ওই দিনই ওকে যেতে বলা হয়েছে।’’

স্বামী নন্দকিশোর কাজে চলে যাওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা সোনামণি একাই তিনটি বাচ্চা নিয়ে, দশ কিলোমিটার হেঁটে লাতেহারে আসেন। কিন্তু শুক্রবারের সপ্তাহান্তে ততক্ষণে সরকারি অফিসে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সন্ধে নেমে যাওয়ায় বাড়ি ফেরার পথে তিনি জাতীয় সড়কের ধারে একটা ধাবায় তিনটি বাচ্চাকে নিয়ে আশ্রয় নেন। রাতে ধাবা বন্ধ হয়ে গেলে তার পাশে একটা গাছের নীচে শুয়ে পড়েন।

আজ, শনিবার, লাতেহারের জেলা স্বাস্থকেন্দ্রে শুয়ে সোনামণি জানান, রাত থেকেই তাঁর শরীর বেশি খারাপ লাগছিল। ভোর বেলা প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। পথচলতি সবার কাছেই তিনি হাতজোড় করে সাহায্য চান। কেউ এগিয়ে আসেননি। শেষে রাস্তার ধারেই তাঁর বাচ্চা হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত কেউ একটা হাসপাতালে খবরও দেন। কিন্তু তার পরেও অনেক ক্ষণ রাস্তায় সদ্যোজাতকে নিয়েই পড়ে থাকতে হয় সোনামণিকে।

আরও পড়ুন: ‘টাকা দিবি না!’ বলেই রড দিয়ে পিটিয়ে খুন ব্যবসায়ীকে

স্থানীয় বাসিন্দা অজয় প্রসাদের অভিযোগ, ‘‘ওই হেলথ সেন্টারের এক অফিসার মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলেন। তাঁকে আমরা বিষয়টা জানাই। কিন্তু উনি আমাদের কথায় কানই দেননি।’’ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক সুরেন্দ্রপ্রসাদ সিংহকে খবর দিয়েও নাকি লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের সহায়তায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। লাতেহারের এসপি অনুপ বিরথারে বলেন, ‘‘ফোনে গ্রামের লোকদের কাছে খবরটা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ওই মহিলাকে লাতেহারের জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিই।’’

লাতেহারের জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছেন সোনামণি ও তাঁর সদ্যোজাত সন্তান। আর একটু দেরি হলেই বিপদ ঘটতে পারত। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার এসপি সিংহ বলেন, ‘‘মা ও সদ্যোজাত, দু’জনেই এখন ভাল আছে। গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ভাগ্যিস এ দিন ভোরে বৃষ্টি হয়নি।’’ মাত্র একশো মিটার দূরে থেকেও কেন কোনও তৎপরতা দেখায়নি স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি? কেন অ্যাম্বুলেন্স বা কোনও গাড়ি পাঠানো হয়নি? চিকিৎসক সুরেন্দ্র প্রসাদ এ ব্যাপারে নীরব। তবে লাতেহার জেলার সিভিল সার্জেন রাজেশ্বর সিংহ গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘খবর পাবার পরে গাড়ি পাঠাতে দেরি হয়নি। আমাদের কাছে খবর আসে ছ’টা নাগাদ। আমরা পনেরো মিনিটের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স পাঠাই। কিন্তু ততক্ষনে ওই মহিলার বাচ্চা জন্মে গিয়েছে। পরে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সেই ওকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ranchi Woman gave birth Child in Street
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE