Advertisement
০৩ মে ২০২৪

পরিচয় লুকিয়ে সঙ্কটে বিহুরানি

বিয়ের কথা গোপন করে, নামধাম লুকিয়ে অসমের বিহুরানি হয়েছিলেন চয়নিকা চাংমাই। কিন্তু তাঁর স্বামীর আত্মহত্যার ফলে বেরিয়ে এল চয়নিকার প্রকৃত পরিচয়। এ দিন চয়নিকার শ্বশুরবাড়ির তরফে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০২:১১
Share: Save:

বিয়ের কথা গোপন করে, নামধাম লুকিয়ে অসমের বিহুরানি হয়েছিলেন চয়নিকা চাংমাই। কিন্তু তাঁর স্বামীর আত্মহত্যার ফলে বেরিয়ে এল চয়নিকার প্রকৃত পরিচয়। এ দিন চয়নিকার শ্বশুরবাড়ির তরফে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। অন্য দিকে, কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ‘বিহুরানি’ খেতাবও। বিহুরানি হওয়ার বাসনায় এমন কাণ্ডে অবাক শিল্পীমহলও!

গুয়াহাটির ঐতিহ্যমণ্ডিত লতাশিল বিহুমঞ্চে প্রতি বছর বিহু প্রতিযোগিতায় বেছে নেওয়া হয় রাজ্যের ‘বিহুরানি’। ওই মঞ্চে সেরার মুকুট মাথায় পরার স্বপ্ন দেখতেন যোরহাটের চয়নিকা। কিন্তু প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার প্রথম শর্ত অবিবাহিতা হওয়া। এ দিকে প্রেমপর্বের পরে বছর দেড়েক আগে চয়নিকার বিয়ে হয়ে যায় বোকাখাতের করৈআটি গ্রামের বাসিন্দা হিমাংশু দত্তর সঙ্গে। কিন্তু গ্রামের বদ্ধ জীবন চয়নিকাকে খুশি করতে পারেনি। সযত্নে বিহুরানি হওয়ার স্বপ্ন লালন করছিলেন তিনি।

এ বছর লতাশিল বিহু কমিটি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় নিজের নাম চয়নিকা কশ্যপ বলে উল্লেখ করে অংশ নেন চয়নিকা। যোরহাট বা বোকাখাতের পরিবর্তে দেন গোলাঘাটের ঠিকানা। দক্ষ নর্তকী চয়নিকার মাথাতেই শেষ পর্যন্ত বিহুরানির মুকুট ওঠে। অবিবাহিত ও চয়নিকা কশ্যপ হিসেবেই বিহু কমিটির সঙ্গে চুক্তিও করেন তিনি।

এর পরেও স্বামীগৃহে ফেরেননি চয়নিকা। বিহুরানি হওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন নাচের অনুষ্ঠান নিয়ে। স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য চরমে ওঠে। সম্প্রতি শ্বশুরবাড়িতে এলেও বেশি দিন থাকতে চাননি চয়নিকা। হিমাংশুর প্রতিবেশীরা জানান, বিবাহিত চয়নিকা যে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে বিহুরানি হয়েছেন, তা লতাশিল কমিটিতে ফোন করে জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু কমিটি তা বিশ্বাস করেনি। চয়নিকা চলে যাওয়ার পর থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন হিমাংশু। তাঁর মা জানান, গত কাল বিকেল পর্যন্ত ঘরের দরজা না খোলায় সকলের সন্দেহ হয়। পরে দরজা ভেঙে হিমাংশুর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘরে মেলে তাঁর লেখা আট পৃষ্ঠার সুইসাইড নোড। মায়ের দাবি, ছেলেকে মানসিক
নির্যাতন চালানো পুত্রবধূর উচিত সাজা হোক। হিমাংশুর পরিবার এ দিন চয়নিকার নামে থানায় অভিযোগ করে। ৩০৬ ধারায় চয়নিকার বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে।

পুলিশ জানায়, হিমাংশুর দেহ আজ ময়নাতদন্তের জন্য গোলাঘাটে পাঠানো হয়। সুইসাইড নোটে কাউকে সরাসরি মৃত্যুর জন্য দায়ী না করলেও চয়নিকা ও তাঁর পরিবারের দুর্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন হিমাংশু। ক্ষমা চেয়েছেন বাবা-মার কাছে। এ দিন স্বামীর মৃতদেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন চয়নিকা। পুলিশ চয়নিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

এ দিকে, লতাশিল বিহু কমিটির তরফে কৈলাশ শর্মা বলেন, “খেতাবের লোভে এমন কাজ ভাবাই যায় না। আমাদের সঙ্গে অবিবাহিতা হিসেবেই চুক্তি করেছেন চয়নিকা। প্রতিযোগিতায় ভুল তথ্য দিয়ে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তাই তাঁর খেতাব ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এ নিয়ে আইনি পদক্ষেপ করব আমরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

women assam FIR
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE