Advertisement
০২ মে ২০২৪

অনুপম উপত্যকায় উষ্ণ ক’দিন

মাডিকেরির রাস্তা দেখে অনুরাধা বলে ওঠে: ‘পশ্চিমবঙ্গে কেন এমন রাস্তা হয় না! এ যেন আয়নার ওপর দিয়ে গাড়ি চলছে।’ রাস্তার সঙ্গে আয়না, এমন তুলনা ক’জন টানতে পারে! পারে শুধু অনুরাধা। অনু-র সঙ্গে ক’টা দিন। কুর্গ নিয়ে লিখলেন রাজা দত্ত।মাডিকেরির রাস্তা দেখে অনুরাধা বলে ওঠে: ‘পশ্চিমবঙ্গে কেন এমন রাস্তা হয় না! এ যেন আয়নার ওপর দিয়ে গাড়ি চলছে।’ রাস্তার সঙ্গে আয়না, এমন তুলনা ক’জন টানতে পারে! পারে শুধু অনুরাধা। অনু-র সঙ্গে ক’টা দিন। কুর্গ নিয়ে লিখলেন রাজা দত্ত।

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৪ ১৬:০১
Share: Save:

‘আমি জলে নামব।’

আচমকা আরও বেশি আহ্লাদি হয়ে ওঠে অনুরাধা।

দাঁড়িয়ে আছি অনেকটা উঁচু জায়গায়। সেখান থেকে ইরুপ্পু প্রপাত বেশ খানিকটা নীচে। বিস্রস্ত হাওয়ায় উড়ছে অনুরাধার মেঘ রঙা কর্নাটকি সিল্কের শাড়ির আঁচল। অনুরাধার অধম এই সঙ্গী পড়ল বেজায় বিপদে। শরীরটা মধ্য পঞ্চাশেও যথেষ্ট শক্তপোক্ত হলেও যৌবনে খেলতে গিয়ে জখম হয়ে একটা পা একটু কমজোরি। কী করি! ছিপছিপে অথচ উদ্ধত শরীরের অনুরাধার অনুরোধ উপেক্ষা করে আটকাব, এমন শরীর-মনের জোর নেই। তাই জোড় হাত করে বলি, ‘কী দরকার বিপদ বাড়িয়ে। তার চেয়ে চলো সেরা রেস্তরাঁয় জমিয়ে লাঞ্চ করি। যা খেতে চাও।’

বত্রিশ পার অনুরাধা এমন চোখে চাইল যার সামনে যুগে যুগে পুরুষ শুধু পতঙ্গ-প্রাণ হয়েছে।

‘ভিতু কোথাকার’, এই বলে অনুরাধা এই ভুপর্যটককে যেন খানিকটা ক্ষমাই করে দিল। কী আর করা! অকপট স্বীকারোক্তিটা করেই ফেলি, অনুরাধার আবদারের সামনে আমি অসহায়। এটা অবশ্য ও জানে। আর তাই মাঝেমাঝে ও অনাবিল আহ্লাদে অধমকে বেকায়দায় ফ্যালে এবং উদ্ধারও করে। ক্ষমা-সুন্দর দীঘল চোখে বলে, ‘আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে। চলো।’ অহেতুক আশঙ্কিত করে উদ্ধার করা ওর প্রিয় খেলা।

কাল সকালে এসেছি কোডাগু। মানে কুর্গে। বাঙ্গালুরু থেকে। অনুরাধা সঙ্গী হয়ে। কোডাগু পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ঢালে এক অনুপম শৈল-শহর। কোডাগু কর্নাটকের একটা প্রশাসনিক জেলা। কুর্গ কলকাতা নাইট রাইডার্স-এর রবিন উথাপ্পার আপন উঠোন। বড় সুন্দর। এত কফি চিকমাগালুরের পর এ দেশে আর কোথাও উৎপন্ন হয় না।

বেঙ্গালুরু শহরের পূর্ব প্রান্তে মরাঠাহাল্লি। বেশির ভাগই কানাড়ি মানুষের বাস। প্রশস্ত আউটার রিং রোড-এর উপর মরাঠাহাল্লি। একটি বাঙালি পরিবার। বাড়ির নাম ‘তরু-বীথি’। অতীশ বসু-রীনা বসু বাড়ির মালিক-মালকিন। দু’জনের মৃত মায়ের নামে বাড়ি। অতীশ মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসে উচ্চ পদে দীর্ঘ দিন কাজ করে অবসরপ্রাপ্ত। রীনা কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঙ্গীতে এম এ। বাঙ্গালোরের গ্রিন উড স্কুলে একসময়ে শিক্ষকতা করেছেন। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর বি-হাই গ্রেডের শিল্পী। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিক্ষা নিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে ডঃ অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়, ডঃ এম আর গৌতম, প্রয়াতা শিপ্রা বসু এবং পণ্ডিত বিনায়ক তরবির কাছে। কিরানা ঘরানায় মূলত গান গেয়ে থাকেন। কিরানা ঘরানার স্রষ্টা আবদুল করিম খান। স্বর্গত পণ্ডিত ভীম সেন যোশী এই ঘরানায় গান গাইতেন। এখন বিশিষ্ট শিল্পীদের মধ্যে প্রভা আত্রে এই ঘরানায় গান গেয়ে চলেছেন।

মুম্বইয়ের গন্ধর্ব মহাবিদ্যালয়ের নাম সঙ্গীত রসিকরা নিশ্চয়ই জানেন। ‘অলংকার’ নামে এক পরীক্ষা, সারা ভারতব্যাপী, প্রতি বছর এই মহাবিদ্যালয় পরিচালনা করে। রীনা বসু এই পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। পুরস্কার গ্রহণ করেন পদ্মবিভূষণ কেলুচরণ মহাপাত্র, প্রখ্যাত ওড়িয়া নৃত্যশিল্পীর কাছ থেকে। অতীশের অবসরের পর দু’জনের মস্তিষ্কে এক ভাবনা এল। অবাঙালিদের গান শেখানো। শুধুমাত্র শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নয়, রবীন্দ্রসঙ্গীতকে অবাঙালিদের মধ্যে আরও আরও জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। করতে হবে স্কুল এবং সঙ্গীতের যন্ত্রপাতির দোকান। অতীশ-রীনার উদ্যোগে তৈরি হল স্কুল। নাম ‘কলাভবন’। আর দোকানের নাম ‘দ্য সাউন্ড অফ মিউজিক’। আউটার রিং রোডে ভাড়া বাড়িতে চলে একই সঙ্গে স্কুল এবং সঙ্গীতের যন্ত্রপাতির ব্যবসা। ক্রমে ক্রমে কলেবরে বৃদ্ধি হতে শুরু হয়। সঙ্গীত শিক্ষা ছাড়াও তবলা, গিটার, সেতার, ভায়োলিন শিক্ষার ব্যবস্থা হয়। বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিল্পীরা শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

রীনার ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা পঞ্চাশ জন। বয়স সাত থেকে ষাট। এদের মধ্যে সত্তর শতাংশ অবাঙালি। সম্প্রতি রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করল স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। হোয়াইট ফিল্ড বেঙ্গালুরুর অভিজাত জায়গা। হোয়াইট ফিল্ড মিউজিক সার্কেলের উদ্যোগে তাদের আবাসনের হলে অনুষ্ঠিত হল কলাভবন স্কুলের উদ্যোগে রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠান। অবাঙালি ছাত্র-ছাত্রীরা সাবলীল ভাবে পরিবেশন করল রবীন্দ্র গীতিনাট্য। বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত রবীন্দ্র কলাক্ষেত্র, ভারতীয় বিদ্যাভবন, গুরুনানক ভবন, চাওডিয়া মেমোরিয়াল হলে একক এবং স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা অনুষ্ঠান করে চলেছে বছরভর। সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করার যে প্রয়াস রীনা-অতীশ নিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাদের যুগলবন্দি আরও বিস্তৃত হোক। অধ্যবসায়, পরিশ্রম, সততা এবং আকাঙ্ক্ষা ওদের এত দূর এনেছে।

মুম্বইয়ে রয়েছে সাহানা, সঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্র। মুম্বইবাসী বহু বাঙালি ও অবাঙালির বড় প্রিয় এই প্রতিষ্ঠান। সাহানা-র অনুষ্ঠান সব সময়ই মন টানে। তেমনই বাঙ্গালোরের ‘কলাভবন’।

সম্প্রতি বেঙ্গালুরু ভ্রমণ কালে এই অধম কলমচির এঁদের সঙ্গে থাকার এবং এঁদের সহায়তায় কুর্গ ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল। ভেবেছিলাম এই লেখায় শুধু মনোরম পার্বত্য শহর কুর্গ-এর কথাই লিখব। কিন্তু কুর্গ সম্বন্ধে লেখার আগে তাঁদের চমকপ্রদ উদ্যোগ নিয়ে কয়েকটা কথা লিখতে হল কৃতজ্ঞতার কারণে। যে শহরে মান্না দে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন সেই শহরে এমন আতিথেতা অভাবনীয়।

এ বার ফের কুর্গ-এর কথা। বছরের যে কোনও সময় কুর্গ ভ্রমণ করা যেতে পারে। বেঙ্গালুরু থেকে শতাব্দী এক্সপ্রেসে দু’ ঘণ্টায় মহীশুর এবং মহীশুর থেকে ভাড়া গাড়িতে আরও তিন ঘণ্টা। যাত্রাপথ স্টেশন মাত্র ১৩০ কিলোমিটার। রাস্তার ধারে কফি গাছ। গহন অরণ্য। সেগুন, পাইন, টিকউড গাছে ভরা জঙ্গল। এ ছাড়া আছে নানা ধরনের পাহাড়ি ফুল। কর্নাটক রোড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ বছরভর করে। চকচকে মসৃণ পিচ রাস্তা। কোথাও কোনও খানা-খন্দ নেই।

মাডিকেরির রাস্তা দেখে অনুরাধা বলে ওঠে: ‘পশ্চিমবঙ্গে কেন এমন রাস্তা হয় না! এ যেন আয়নার ওপর দিয়ে গাড়ি চলছে।’ রাস্তার সঙ্গে আয়না, এমন তুলনা ক’জন টানতে পারে! পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে আচমকা গাড়ি দাঁড় করতে বলে অনুরাধা। এ বার আবদার, ‘কফি খাব।’ গাড়ি থামাতেই হয়। অনেক ফুল ফুটে আছে কাছে-দূরে। সফেন কফিতে নিঃশব্দে চুমুক দিয়ে অনুরাধা বলে ওঠে: “কুর্গে ঢুকে কফি খাব না? দার্জিলিং গিয়ে মল রোডে কেভেন্টার্স-এর ছাদে বসে সসেজ-সানি সাইড আপ ওমলেট আর অরেঞ্জ পিকো খাব না, হয় নাকি? মুম্বই গিয়ে কোলাবায় লিওপোল্ড-এ বসে মিনি বিশ্ব দেখতে দেখতে স্যান্ডি খাব না! লিমকার সঙ্গে বিয়ার, এটা লিওপোল্ড ছাড়া হয় না। গোয়াতেও না!” কফি শেষ, ফের চড়াই পথে।

আবেদন মাখা কণ্ঠে গান ধরে অনুরাধা: ‘হাউ মেনি রোডস মাস্ট আ ম্যান ওয়াক ডাউন বিফোর ইউ কল হিম আ ম্যান’। চরাচর চুপ হয়ে যায় মুহূর্তে।

ড্রাইভার চন্দ্রশেখর কানাড়ি। হিন্দি এবং ইংরেজি দুটো ভাষাতেই সাবলীল। যাত্রাপথে ওর ধারাবিবরণী বেশ কার্যকর হল। ক্রমশ বুঝতে পারলাম তাপমাত্রার হেরফের। বেঙ্গালুরুর আবহাওয়ার সঙ্গে কুর্গের বাতাসের বিস্তর তফাত। মে মাসের গরমে এই স্নিগ্ধ পরিবেশ শরীর ও মনের পক্ষে কতটা স্বস্তিদায়ক তা মুম্বই বা কলকাতার গরমের দিনে বোঝানো যাবে না।

শহরের ব্যস্ততা এবং ছোটাছুটি থেকে মুক্ত হয়ে যদি কেউ ছুটি উপভোগ করতে চান, তাহলে মাডিকেরি, কর্নাটকের একটি ছোট্ট পাহাড়ি অঞ্চল, যেখানে শিথিল ভাবে ছুটি কাটানোর মনোরম জায়গা।

মাডিকেরি বেঙ্গালুরু থেকে ২৫২ কিমি এবং মহীশুর থেকে ১৩০ কিমি দুরে পর্যটকদের জন্য সুপরিচিত জায়গায়। এটি কুর্গ জেলার সদর দফতর। পাহাড়ি এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে চলা কাবেরী নদীর শীতল জল এই জায়গাটিকে আরও আনন্দদায়ক এবং মনোমুগ্ধকর করেছে। মাডিকেরি তাই সকল পর্যটকের আকর্ষণ এবং এই জায়গা পরিদশর্ন রোমাঞ্চকর এবং পুনর্যৌবন প্রাপ্তির অনুভূতি আনে।

মাডিকেরি পৌঁছে অনুরাধা আবেগ চেপে রাখতে পারল না। শিশুর কোমল অন্ধকার মাখা গালের মতো অভিজাত আভা ছড়িয়ে আহ্লাদি অনুরাধা বলে ওঠে: ‘এখানে কারা থাকে! সত্যি কী ভাগ্যবান যাঁরা এখানে থাকেন। একটা জায়গা এতো নিষ্কলুষ হতে পারে। এমন অরণ্য, এতো রকমের গাছ, এত ফুল! আমি আবার আসব কিন্তু।’ উপায় নেই। বলতেই হল, ‘ঠিক আছে, ভরা শীতে আবার আসব। তবে তখন কিন্তু তোমাকে শীত বস্ত্র পরতেই হবে। কথা দাও।’ মরাল গ্রীবা কাত করে অনুরাধা কথা দেয়, ‘ওকে বাবা।’

মাডিকেরি কফি, চা, এলাচ ইত্যাদি চাষের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। মাডিকেরিকে অনেকেই আদর করে ভারতের স্কটল্যান্ড বলে থাকেন। সিমলা-শিলং-দার্জিলিং-এর মতো প্রায় একশো বছর আগে ব্রিটিশরা এই শহরেরও গোড়াপত্তন করে। শহরের মধ্যিখানে মাডিকেরি ফোর্ট বহু ইতিহাসের সাক্ষী। তৃণশ্যামল উপত্যকা, মনোরম পর্বত, সেগুন, পাইন, ওক কাঠের গহন অরণ্য মনকে উদাস করে দেয়।

কর্নাটকের ত্রিশটি জেলার মধ্যে লোকবসতি কুর্গ জেলায় সবচেয়ে কম। প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ। বেশির ভাগ জমি কৃষির জন্য ব্যবহৃত। কফি চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। কফি অ্যারাবিকা এবং কফি রোবুস্টা এখানে উৎপাদিত হয়। উন্নততর পদ্ধতিতে তৈরি হয় কফি। আছে টাটা কোম্পানির কয়েক হাজার একর জুড়ে কফি বাগান। উৎপাদন হয় এলাচ, কালোমরিচ এবং প্রচুর কমলালেবু। বহু মানুষ এখানে কৃষিজীবী। অনেকে চাষ করেন কোকো, রবার এবং টিক ও সেগুন কাঠ।

কুর্গ বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ। এখানে আছে ব্রহ্মগিরি, টালাকাটেরি এবং পুষ্পগিরি বনজ প্রাণীর পার্ক এবং রাজীব গাঁধী জাতীয় উদ্যান বলে পরিচিত নাগারহোল ন্যাশনাল পার্ক। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বছরের বিভিন্ন সময়ে এখানে আসে। প্রাণিকুলের মধ্যে আছে এশীয় হাতি, বাঘ, চিতাবাঘ, বন্য শূকর এবং বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ।

কফি চাষ প্রসঙ্গে দু’চারটা কথা বলি। গাড়ির চালক স্থানীয়। দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা। তার কাছ থেকে জানলাম, কোনও কোনও কফি গাছ তিনশো থেকে হাজার বছরের পুরনো। মে-জুন মাসে ব্লুজম টাইম এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারি পিকিং টাইম। জুন এবং জুলাই মাস কুর্গে বর্ষাকাল। বৃষ্টির জল কফি গাছের প্রসারের সহায়ক। এ ছাড়া পোকা-মাকড়ের হাত থেকে গাছকে বাঁচানোর জন্য নানা ধরনের স্প্রে করা হয়। স্থানীয় মানুষ শুধুমাত্র কফি চাষ করে। ওড়িশা, বিহার থেকে লোক আসে পিকিং-এর জন্য। এক একটা গাছে ২ কেজি থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত ফল হয়। তার পরে শুকনো করে হয় বিনস।

কুর্গের প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলো বাইলাকেপ্পি, অ্যাবেফলস, ডুবারে এলিফ্যান্ট ক্যাম্প, কাবেরী নিশারগার্বমা, টালা কাবেরী, মাদেকেরি ফোর্ট এবং রাজা সিট। গাড়ি ভাড়া করে দু’ দিনে দেখে নিলাম। প্রত্যেকটি জায়গার ছোট বর্ণনা লিখলাম।

বাইলাকেপ্পি: নির্বাসিত তিব্বতীদের রাজধানী হিমাচল প্রদেশের ধরমশালা। ভারতে একটি কম পরিচিত তিব্বতি শহর কর্নাটকের বাইনাকেপ্পি। কুর্গ বেং মহীশুর সীমান্তে কুশলনগর নামক স্থানে অবস্থিত এই তিব্বতি স্বর্ণমন্দির। বাইলাকাপ্পি একটি তিব্বতি উদ্বাস্তু পুনর্বাসন শিবির। আধুনিক তিব্বতি সংস্কৃতির এক বিশাল আশ্রম। কুর্গ ভ্রমণকারীদের কাছে এই স্বর্ণমন্দির ভ্রমণ এক বিরাট আকর্ষণ।

অ্যাবে ফলস: অ্যাবে জলপ্রপাত মাডেকিরি থেকে আট কিমি দূরে। একটা কফি বাগানের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এই জলপ্রপাত দর্শনে। একটি ঝুলন্ত সেতু থেকে দেখতে হয় এই ঝরনা। সেতুর উল্টো দিকে আছে কালীমাতার মন্দির।

ডুবারে এলিফ্যান্ট ক্যাম্প: এটি বন দফতর দ্বারা পরিচালিত একটি প্রকল্প। দর্শকরা ডুবারে রিজার্ভ ফরেস্টে হাতির পিঠের সওয়ারি হতে পারেন। এ ছাড়া নদীর মধ্যে বোটিং করা যায়। গাইড আপনাকে হাতি সংরক্ষণের ব্যাপারে সম্যক ধারণা দেবে। হাতির সঙ্গে স্নান করা, হাতিকে খাওয়ানো পৃথক পৃথক টিকিট কেটে করা যায়।

কাবেরী নিশারগাদামা: এটা কাবেরী নদী দ্বারা গঠিত একটি সুন্দর দ্বীপ। কুশলনগরের খুবই কাছে। বাইলাকেপ্পি দেখার পর এটা দেখে নেওয়া যেতে পারে। গহন অরণ্য, বাঁশবাগান, সেগুন গাছের সারি সারি এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। পাশেই আছে একটা ডিয়ার পার্ক।

টালাকাবেরী: টালাকাবেরী হল কাবেরী নদীর উৎস। সপ্তসিন্ধুর পবিত্র একটি নদী কাবেরী। এখানে আছে দুটি মন্দির। একটি শিব মন্দির, যাতে আছে বিরল এবং প্রাচীন শিবলিঙ্গ আর একটি ভগবান গণেশকে নিবেদিত ব্রহ্মা-বিষ্ণু মূর্তি। মানুষের বিশ্বাস এখানকার নদীতে স্নান করলে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক ব্যাধি দূর হয়। পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস এখানাকার জলের অলৌকিক ক্ষমতা আছে।

মাদেকেরি ফোর্ট: ১৭০০ সালে তৈরি হয় এই দুর্গ। বিভিন্ন সময়ে এর সংস্কার হয়। গথিক শৈলীতে তৈরি একটি চার্চ আছে। দুর্গের অভ্যন্তর এখন জেলা প্রশাসনের অফিস।

রাজা সিট: রাজার আসন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনের জায়গা। আদতে এটি একটি বাগান। সুন্দর ফুলের গাছে সমৃদ্ধ এবং আছে কৃত্রিম ঝরনা। এখানে এসে অনুরাধা ফের আব্দার করে জলে নামার। ফের হাত জোড় করে নিরস্ত করতে হয়, ভাল ডিনারের কথা বলে। এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায় চমৎকার। প্রতিদিন বিকালে এখানের মিউজিকাল ফাউনটেইনে নানা ধরনের শো হয়। কথিত আছে, কুর্গের রাজা প্রতি সন্ধ্যায় তাঁর পত্নীর সঙ্গে এখানে সময় কাটাতেন।

কুর্গ এমন একটা জায়গা যেখানে শুধু উপত্যকায় হেঁটে বা গাড়িতে ঘুরে প্রকৃতি দর্শন করে তৃপ্তি লাভ করা যায়। এই মনোরম পাহাড়ি শহর ভ্রমণ এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

ও হো! একটা কথা বলা হয়নি। কর্নাটক ভ্রমণে একটা সন্ধ্যা-রাত কাটিয়েছিলাম মহীশূর রাজপ্রাসাদে। অনুরাধার সঙ্গে। ডিনার সেখানেই। রাজকীয় নৈশাহার। মহীশূর রাজপ্রাসাদে অনুরাধার পাশে নিজেকে প্রৌঢ়ত্বের প্রান্তে পৌঁছনো সম্রাট মনে হয়েছিল। মুখ ফুটে কিছু বলা হয়নি। অনুরাধা কিন্তু বলেছিল, “তোমাকে দারুণ লাগছে।” যেমন ভাবে শুধু সে-ই বলতে পারে।

যা না বললেই নয়: অনুরাধা কোনও নিছক নারী নয়। অনুরাধা এক অনুভব। এক ভাবনা। এক বোধ। যে বোধ বুকের ভিতর জড়িয়ে থাকে, ছড়িয়ে থেকেও।

ছবি: প্রতিবেদক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raja dutta coorg
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE