Advertisement
০৬ মে ২০২৪

অপসারিত ধর্মান্তরণের পাণ্ডা, বেকায়দায় সঙ্ঘ

ধর্ম নয়, ফের উন্নয়নকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হিন্দুত্বের প্রশ্নে সংস্কার ধাক্কা খাচ্ছে। বিরোধীদের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিতে ধর্মান্তরণের মেঘ সরিয়ে তাই উন্নয়ন মেলে ধরতেই তৎপর হলেন মোদী ও তাঁর সেনাপতি অমিত শাহ। বিজেপি সভাপতি হিসেবে আজ থেকেই প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের কর্মসূচি নিয়ে রাজ্যওয়াড়ি সফর শুরু করলেন অমিত। এ দিনই উত্তরপ্রদেশে ধর্মান্তরণের পুরোধা আরএসএসের প্রচারক রাজেশ্বর সিংহকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছুটিতে পাঠালেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

ধর্ম নয়, ফের উন্নয়নকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হিন্দুত্বের প্রশ্নে সংস্কার ধাক্কা খাচ্ছে। বিরোধীদের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিতে ধর্মান্তরণের মেঘ সরিয়ে তাই উন্নয়ন মেলে ধরতেই তৎপর হলেন মোদী ও তাঁর সেনাপতি অমিত শাহ।

বিজেপি সভাপতি হিসেবে আজ থেকেই প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের কর্মসূচি নিয়ে রাজ্যওয়াড়ি সফর শুরু করলেন অমিত। এ দিনই উত্তরপ্রদেশে ধর্মান্তরণের পুরোধা আরএসএসের প্রচারক রাজেশ্বর সিংহকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছুটিতে পাঠালেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত।

ধর্মান্তরণ বিতর্কে ইতিমধ্যেই তোলপাড় হয়েছে সংসদ। থমকে গিয়েছে বেশ কিছু সংস্কার-বিল। তাই বাধ্য হয়েই অধ্যাদেশ এনে সংস্কারের পথে হাঁটতে হয়েছে মোদীকে। ক্ষুব্ধ মোদী তাঁর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের কাছেও। তার ফল মিলল এত দিনে। সরানো হল রাজেশ্বরকে।

রাজেশ্বর অবশ্য বলছেন, স্বাস্থ্যের কারণে তিনি নিজেই অব্যাহতি চেয়েছেন। মূলত মোদীর চাপেই ধর্মান্তরণ প্রসঙ্গ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সঙ্ঘের একটা অংশ তাতে কার্যতই অসন্তুষ্ট। সঙ্ঘের এক নেতার কথায়, “প্রধানমন্ত্রীর আপত্তিতেই পিছু হটতে হল। এই সরকার আসার পর ৩৭০ অনুচ্ছেদ, রাম মন্দির আন্দোলন নিয়ে টুঁ শব্দটিও করা যাচ্ছে না। এ বার যদি হিন্দুদের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারেও হাত গুটিয়ে থাকতে হয়, তা হলে তো সমূহ বিপদ!” কাল তাঁকে ফের প্রয়োজন হবে বলে, আগাম হঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন খোদ রাজেশ্বরও। ধর্মান্তরণের আগে এই আরএসএস প্রচারকই ‘লাভ জিহাদ’ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, আগরার পর ধর্মান্তরণে তাঁর দ্বিতীয় দফার প্রস্তুতি চলছিল আলিগড়েও। তারই মধ্যে হঠাৎ এই খাঁড়ার কোপে অস্বস্তিতে সঙ্ঘ।

অন্য দিকে, এই মুহূর্তে আরএসএসের চিন্তন শিবির চলছে মোদীর রাজ্য গুজরাতেই। সেখানে আবার সঙ্ঘের পাল্টা ছক। মোদীর প্রবল প্রতিপক্ষ সঞ্জয় জোশীকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সেই শিবিরে। আমন্ত্রিত মোদীও। এই সেই সঞ্জয়, যাঁকে বিজেপি থেকে সরানোর জন্য মুম্বইয়ের কর্মসমিতির বৈঠকেই যেতে রাজি ছিলেন না মোদী। নিতিন গডকড়ী তখন দলের সভাপতি। তাঁর হস্তক্ষেপে সঞ্জয়কে সরানোর পরেই মোদী মুম্বই যান। কিন্তু এ বার সেই সঞ্জয় জোশীকেই ডাক পাঠিয়ে আরএসএস বুঝিয়ে দিল, রাজেশ্বরকে নিয়ে ঢোক গিললেও সব বিষয়ে মোদীকে স্বস্তি দেওয়া তাদের লক্ষ্য নয়।

সঙ্ঘেরই একটি অংশের দাবি, তলে তলে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজের মতো একদা মোদী-বিরোধীরাও জোট গড়ছেন। আবার সঙ্ঘ নেতৃত্ব এটিও ভাল জানেন, মোদীর নামেই কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। ক্ষমতায় থেকে মোদীর শক্তি বাড়লেই সঙ্ঘ নিজেদের প্রভাব বাড়াতে পারবে। তাই মোদীর সঙ্গে সখ্য রেখেই চলতে চায় সঙ্ঘ পরিবার। তাই মোদীর কথা মেনে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে ‘ঘরহ ওয়াপসি’-র কাজে আপাতত ইতি টানা হচ্ছে। তার পরেই মোদীর নির্দেশে আজ থেকে সরকারের উন্নয়নের কর্মসূচি নিয়ে রাজ্যওয়াড়ি সফরে বেরিয়ে পড়েন অমিত শাহ। আজ মুম্বইয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন। কাল করবেন কর্নাটকে।

মুম্বইয়ে মোদী সরকারের কুড়ি দফা উন্নয়নের কর্মসূচি তুলে ধরেন বিজেপি সভাপতি। তাঁর দাবি, গত সাত মাসে মূল্যবৃদ্ধি, পেট্রোল-ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম কমেছে। বিরোধিতা সত্ত্বেও সংস্কারের অধ্যাদেশ আনা হয়েছে জনস্বার্থে। জমি বিলে কৃষকদের অনেক বেশি ক্ষতিপূরণ সুনিশ্চিত করা হয়েছে, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধর্ম মেনে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ‘টিম ইন্ডিয়া’র ধারণায় নীতি আয়োগ গঠন থেকে পণ্য-পরিষেবা করে রাজ্যের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করেন শাহ। তাঁর বক্তব্য, মোদী সরকারের নীতির কারণেই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি। এবং ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মোদীমন্ত্রেই যে এই সাফল্য, জানাতে ভোলেননি বিজেপি সভাপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE