Advertisement
০৬ মে ২০২৪

অরিহন্তেও দুর্ঘটনা, কেন্দ্র অস্বস্তিতে

এক দিন পেরোতে না পেরোতেই ফের দুর্ঘটনার মুখে নৌসেনা! আজ রাতে বিশাখাপত্তনমের বাহিনীর জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্রে নির্মীয়মাণ ডুবোজাহাজ অরিহন্তে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন এক শ্রমিক। আহত আরও দু’জন। গত কালই মাজগাঁও ডকে যুদ্ধজাহাজ কলকাতায় কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস লিক করে মারা যান কম্যান্ডার কুন্তল ওয়াধওয়া নামে নৌসেনার এক ইঞ্জিনিয়ার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

এক দিন পেরোতে না পেরোতেই ফের দুর্ঘটনার মুখে নৌসেনা! আজ রাতে বিশাখাপত্তনমের বাহিনীর জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্রে নির্মীয়মাণ ডুবোজাহাজ অরিহন্তে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন এক শ্রমিক। আহত আরও দু’জন। গত কালই মাজগাঁও ডকে যুদ্ধজাহাজ কলকাতায় কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস লিক করে মারা যান কম্যান্ডার কুন্তল ওয়াধওয়া নামে নৌসেনার এক ইঞ্জিনিয়ার।

কী ঘটেছে এ দিন?

সেনা সূত্রের খবর, পরমাণুশক্তি-চালিত এই ডুবোজাহাজটির হাইড্রলিক ট্যাঙ্কের পরীক্ষা চলছিল। সে সময় একটি ঢাকনা খুলে অমর (২৪) নামে এক শ্রমিকের উপর পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। আহত হন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমজাদ খান ও বিষ্ণু নামে আরও দুই শ্রমিক। তাঁদের বিশাখাপত্তনমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বিশাখাপত্তনমে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও)-র প্রধান অবিনাশ চন্দ্র সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন।

বস্তুত, যুদ্ধজাহাজ কলকাতাকেও নির্মীয়মাণ বলা চলে। কারণ, সেটি বাহিনীতে যোগ দেওয়ার এখনও পূর্ণাঙ্গ ছাড়পত্র পায়নি। পরপর দু’দিন দু’টি নির্মীয়মাণ জাহাজে দুর্ঘটনা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে পড়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা। মন্ত্রক সূত্রের খবর, যুদ্ধজাহাজ কলকাতার দুর্ঘটনা নিয়ে মাজগাঁও ডক লিমিটেডের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটিও গড়েছে নৌসেনা। বাহিনীর মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ডি কে শর্মা বলেন, “কলকাতা যুদ্ধজাহাজের দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটিতে নৌবাহিনীর কর্তাদের পাশাপাশি মাজগাঁও ডক লিমিটেডের বিশেষজ্ঞরাও থাকবেন।” কলকাতার দুর্ঘটনায় কম্যান্ডার ওয়াধওয়ার সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আরও দু’জন। তাঁদের অবশ্য এ দিন হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

নৌসেনার একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, এত দিন দুর্ঘটনার পর বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানায় তৈরি উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ-ডুবোজাহাজে পরপর দুর্ঘটনা ঘটায় প্রশ্নের মুখে পড়ছে খোদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উৎপাদন দফতরও।

নৌসেনা সূত্রের খবর, কলকাতা যুদ্ধজাহাজে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে তদন্তের প্রাথমিক কাজ এগিয়েছে। তাতে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। তবে দুর্ঘটনার মূল কারণ কী, তা নির্দিষ্ট করতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে বলে বাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন।

নৌবাহিনী জানিয়েছে, মহড়া চলার সময় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার কার্বন-ডাই অক্সাইডের সিলিন্ডারের ভালভ খুলে গিয়েছিল। তবে শুধু সেখান থেকেই গ্যাস ছড়িয়েছে, নাকি ব্যবস্থার অন্য জায়গাতেও ত্রুটি ছিল তা খতিয়ে দেখবেন বিশেষজ্ঞরা।

অনেকে মনে করছেন, কার্বন-ডাই অক্সাইড সিলিন্ডার ও পাইপে গ্যাসের চাপ বেশি হওয়ার ফলেই ভালভ খুলে যেতে পারে। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, যুদ্ধজাহাজের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থায় স্বাভাবিক যে গ্যাসের চাপ থাকার কথা, তার চেয়ে দেড় গুণ বেশি চাপে মহড়া চালানো হয়। তাই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার ভালভ ও পাইপগুলির সহনমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে দেড় গুণ বেশি থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভালভ ও পাইপের সহনমাত্রা সেই মতো রাখা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এই দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে আরও একটি সম্ভাব্য কারণের কথাও উঠে এসেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জাহাজ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ বলছেন, ভালভ কিংবা পাইপলাইন বসানোর সময় ঝালাই বা অন্যান্য ছোটখাটো ত্রুটি থেকে যেতে পারে। উচ্চচাপে গ্যাস যাওয়ার ফলে সেই ছোট ত্রুটিই বড় আকার নিতে পারে বলে ওই ইঞ্জিনিয়ারেরা মনে করছেন।

তবে কারণ যাই হোক না কেন, শুক্রবারের দুর্ঘটনায় ফের একটি বড় ধাক্কা খেয়েছে নৌসেনা। কেন?

নৌবাহিনীর পরিভাষায়, কলকাতা যুদ্ধজাহাজটি ‘ডেস্ট্রয়ার’ গোত্রের। গাইডেড মিসাইল উৎক্ষেপণ করার ক্ষমতা ছিল এটির। বস্তুত, নৌসেনায় কলকাতা যুদ্ধজাহাজের যোগ দেওয়ার কথা ছিল চার বছর আগেই। কিন্তু নানা কারণে তা পিছিয়ে গিয়েছিল। বেড়ে গিয়েছিল নির্মাণের খরচও।

অবশেষে চলতি মাসেই বাহিনীতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল ভারতের এই নতুন যুদ্ধজাহাজের। কিন্তু গত কাল দুপুরের দুর্ঘটনা সেই পরিকল্পনায় ফের জল ঢেলে দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE