Advertisement
E-Paper

উঁচুতলায় দুর্নীতি-তদন্তে লাগবে না কেন্দ্রের সায়

কেন্দ্রীয় সরকারের যে কোনও স্তরের আমলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মিললে এ বার থেকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করতে পারবে সিবিআই। এর জন্য আর কেন্দ্রের অনুমতি লাগবে না। মঙ্গলবার এই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এত দিন কেন্দ্রের যুগ্মসচিব ও তার উপরের স্তরের অফিসারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের জন্য দিল্লির অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, দুর্নীতির ক্ষেত্রে সিনিয়র-জুনিয়র বিভেদ থাকা কোনও মতেই সমীচীন নয়। দুর্নীতি দুর্নীতিই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০৩:১৯

কেন্দ্রীয় সরকারের যে কোনও স্তরের আমলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মিললে এ বার থেকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করতে পারবে সিবিআই। এর জন্য আর কেন্দ্রের অনুমতি লাগবে না। মঙ্গলবার এই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এত দিন কেন্দ্রের যুগ্মসচিব ও তার উপরের স্তরের অফিসারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের জন্য দিল্লির অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, দুর্নীতির ক্ষেত্রে সিনিয়র-জুনিয়র বিভেদ থাকা কোনও মতেই সমীচীন নয়। দুর্নীতি দুর্নীতিই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, ২০০৩ সালে ‘দিল্লি স্পেশ্যাল পুলিশ এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট’ (যে আইন মেনে সিবিআই কাজ করে) বা ‘ডিএসপিইএ’ সংশোধন করে ৬এ ধারায় সরকারের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ আমলাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ জমা পড়লেও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হতো কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। এতে সংশ্লিষ্ট নথি নষ্ট বা পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত।

এ দিন প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢা-র নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ডিএসপিইএ-র ৬এ ধারাকে ‘দুর্নীতি আড়াল করার প্রবণতা’ বলে উল্লেখ করে। বিচারপতিরা বলেন, “যে দুর্নীতিগ্রস্ত, তার আবার উচ্চ-নীচ কী? নিচু তলার অফিসারদের জন্য এক নিয়ম, আর উচ্চপদস্থদের জন্য আর এক নিয়ম--- এটা চলতে পারে না। এই নিয়ম সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।” প্রসঙ্গত, সংবিধানের ওই ধারায় সমস্ত মানুষকে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। বিচারপতিদের কথায়, “দুর্নীতি এখন দেশের প্রধান শত্রু। যে সব সরকারি অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠবে, তাঁরা সকলে একই নৌকার যাত্রী। ফলে তাঁদের সঙ্গে একই রকম ব্যবহার করতে হবে।”

সম্প্রতি কয়লা কেলেঙ্কারি এবং টু-জি কেলেঙ্কারিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েক জন আমলার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআইকে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, এর আগেও বিভিন্ন দুর্নীতি-মামলায় পদস্থ আমলাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে ডিএসপিইএ-র ৬এ ধারায় বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে সিবিআই। অনুমতি না মেলায় ওই সব আমলাদের অনেকের বিরুদ্ধে তদন্তই করা যায়নি। তাই এ দিনের রায় দুর্নীতি দমন মামলায় সিবিআই-কে অনেক বেশি স্বাধীনতা দিল বলেই মনে করছেন সংস্থার কর্তাদের একাংশ। এক পদস্থ সিবিআই কর্তা বলেন, “শুধু দুর্নীতি-মামলা নয়, অন্য যে কোনও মামলায় পদস্থ অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই অনুমতি না মেলায় তদন্ত সম্পূর্ণ হয় না। দোষীরা শাস্তি পায় না। এই সব অপরাধের ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের নির্দেশিকা কার্যকর হবে কি না, তা আমরা আইনজীবীদের কাছে জানতে চাইব।”

বস্তুত, অনুমতি নেওয়া সংক্রান্ত নিয়মের ফাঁক গলে অভিযুক্ত অফিসারেরা রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করেন বলে এ দিন মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাও। তাঁরা বলেন, এর ফলে সিবিআইয়ের তদন্ত শুরু করতে দেরি হয়ে যায়। কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কে ভি বিশ্বনাথ বলেন, সরকার কোনও দুর্নীতিগ্রস্তকে আড়াল করতে চায় না। তবে উচ্চপদস্থ অফিসারেরা সরকারের নীতি নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত। যুগ্মসচিবের উপরের স্তরের অফিসারেরা অনেক সময়েই কোনও না কোনও দফতরের উচ্চপদে আসীন থাকেন। ফলে, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলে প্রভাব পড়ে সংশ্লিষ্ট দফতরেও। সেই কারণে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ৬এ ধারাটি তৈরি করা হয়েছিল। তবে সিবিআইয়ের এই স্বাধীনতার অপব্যবহারের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়নি প্রশাসনের একাংশ।

vigilance cbi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy