সমালোচনার জবাবে পাল্টা বিতর্কিত মন্তব্য। তার পাশাপাশি নিত্যনতুন ধর্ষণের খবর। এ সব নিয়েই জাতীয় সংবাদমাধ্যমে উত্তরপ্রদেশের উপস্থিতি যেন এখন রোজনামচা।
বদায়ূঁতে জোড়া গণধর্ষণ ও খুনের পর এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে মুখ খুলে একাধিক বার বিতর্কে জড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। প্রশাসনের বেশ কয়েক জন শীর্ষ আধিকারিককে তড়িঘড়ি সরিয়ে দিয়ে অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টাও করেছেন। প্রশাসন যে তৎপর তা বোঝাতে আজই যেমন আচমকা হানা দিয়ে শ্রাবস্তীর জেলাশাসক ভানুচন্দ্র গোস্বামী-সহ ৬ জনকে সাসপেন্ড করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর সব চেষ্টায় জল ঢেলে দিয়েছেন খোদ বাবাই।
ছেলের শাসনকালে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো মুলায়ম সিংহ যাদবের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। তেড়েফুঁড়ে উঠে মুলায়মের জবাব, “আপনারা নিজেদের কাজটা করুন তো। আমাদেরটা আমাদেরই করতে দিন।” এক মাস আগে মুলায়মেরই একটি মন্তব্যে
হইচই শুরু হয়েছিল দেশ জুড়ে। সে বার ধর্ষণ প্রসঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “ছেলেরা তো ছেলেই। মাঝেমধ্যে ভুলচুক করে ফেলে। তাই বলে তাদের ফাঁসির সাজা দেওয়া মোটেই উচিত নয়।”
দিনকে দিন বাড়তে থাকা নারী নির্যাতনের ঘটনাকে তাঁরা যে বিশেষ আমল দিতে রাজি নন, মুলায়মের আজকের মন্তব্যেই তা স্পষ্ট। সমাজবাদী পার্টির আর এক শীর্ষ নেতা রামগোপাল যাদবের মন্তব্য ঘিরেও এ দিন জলঘোলা হয়েছে বিস্তর। তাঁর কথায়, “এখন তো ছেলে-মেয়েদের সম্পর্ক সামনে চলে এলেই লোকে ধর্ষণ তকমা দিচ্ছে।” রাজ্যসভার সদস্য, সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর কাকা রামগোপাল অখিলেশের ঢঙেই সংবাদমাধ্যমকে দুষে বলেন, দেশের অন্যত্রও এই
ঘটনা ঘটছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের মতো ফলাও করে তা ছাপা হচ্ছে না। প্রবীণ এই নেতার কথায়, “টিভিতে অশালীন অনুষ্ঠান এখন দিন-রাত্তির দেখানো হয়। ধর্ষণের মতো অপরাধ বাড়ছে এই কারণেই।”
শাসক দলের নেতাদের বিশেষ হেলদোল না থাকলেও উত্তরপ্রদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে আজ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন। বদায়ূঁর ঘটনার রেশ টেনে বুধবার তিনি বলেন, দু’সপ্তাহ ধরে বিশ্ব জুড়ে নারী নির্যাতন লাগামছাড়া ভাবে বেড়ে গিয়েছে। বীভৎস এই অত্যাচার বন্ধের দাবিও জানান তিনি। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র মারি হর্ফও।
উত্তরপ্রদেশে পর পর ধর্ষণের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে যে ভাবে সাড়া পড়ে গিয়েছে তাতে চিন্তিত কেন্দ্রও। গত কাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করে বদায়ূঁ ধর্ষণ সংক্রান্ত সবিস্তার একটি রিপোর্ট তুলে দেন উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল বি এল জোশী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র বলছে, রাজ্যপালের রিপোর্টের ভিত্তিতে সাংবিধানিক ধারা অনুযায়ী এখনই কোনও সতর্কবার্তা অখিলেশ যাদব সরকারকে পাঠানো হচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু সেই সম্ভাবনা খারিজ করাও হচ্ছে না। ঘটনার তদন্ত ও রাজ্য সরকারের আচরণের ওপর আপাতত নজর রাখছে কেন্দ্র।
উত্তরপ্রদেশ নিয়ে কেন্দ্রের এই সক্রিয়তার নেপথ্যে কিন্তু রাজনীতি দেখছেন অনেকেই। তাঁদের মতে, লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে স্যুইপ করার পর হিন্দিবলয়ের বৃহত্তম এই রাজ্যে ক্ষমতা দখল করাকেই এখন পাখির চোখের মতো দেখছে বিজেপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ নিজে উত্তরপ্রদেশের ঠাকুর নেতা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও বটে। তাই এ নিয়ে রাজনাথের ব্যক্তিগত আগ্রহও রয়েছে। আর সেই কারণেই কেন্দ্রের তরফে পদক্ষেপের সম্ভাবনা এখন প্রবল।
রাজনীতির তরজা যা-ই চলুক না কেন, রাজ্যবাসীর ক্ষোভ যে আদতে মিটছে না, বুধবার তা-ই টের পেলেন বরেলীর কমিশনার কে রবিচন্দ্রনায়ক। বদায়ূঁর জোড়া গণধর্ষণে সাত জনের নামে অভিযোগ দায়ের হলেও এখনও অধরা দুই। এ দিন কাটরা গ্রামে গেলে অপরাধীদের গ্রেফতার ও দ্রুত শাস্তির দাবিতে কমিশনারকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। পরে এসপি জানান, পলাতক দু’জনের স্কেচ আঁকাতে দিল্লি থেকে দল আসছে।
বদায়ূঁ ধর্ষণ-কাণ্ডের পর থেকে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে প্রতিদিনই একাধিক ধর্ষণের খবর পাওয়া গিয়েছে। আজও ব্যতিক্রম হয়নি তার। পাখড়ি খাস গ্রামে চকোলটের লোভ দেখিয়ে ছ’বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণ করে প্রতিবেশী এক যুবক। ফিরোজপুরে খেতে কাজ করার সময় বছর পনেরোর এক কিশোরীর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। গত কাল রাতে গাজিয়াবাদ এলাকায় ফাঁকা বাড়ির সুযোগ নিয়ে বউমাকে ধর্ষণ করে শ্বশুর। কনৌজের মধরপুর এলাকায় এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এক জনকে। বাড়ির লোকের সামনেই গ্রেটার নয়ডায় এক মহিলাকে সাত জন মিলে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মহিলা জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর সঙ্গে অভিযুক্তদের ঝামেলা হয়েছিল ক’দিন আগে। তারাই এ দিন বাড়িতে চড়াও হয়ে স্বামী-শ্বশুরকে অন্য ঘরে আটকে ধর্ষণ করে তাঁকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy