প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে ইতিমধ্যেই দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়েছেন নবীন পট্টনায়ক। আগামী মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসছেন জয়ললিতাও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মোদীর বৈঠকে বসার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। যদিও প্রধানমন্ত্রী কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী।
প্রশ্ন হল, তা হলে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক আগামী দিনে কী ভাবে এগোবে?
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক বিষয়গুলি নিয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর সঙ্গে খুব শীঘ্রই বৈঠকে বসতে পারেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, এর মধ্যে দু’জনের কথাও হয়েছে। অমিতকে দিল্লি আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জেটলি। সংসদের অধিবেশেন শেষে দু’জনে বৈঠকে বসতে পারেন বলেও খবর। সেই বৈঠকের আগে রাজ্যের বকেয়া বিষয়গুলি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য মমতা তাঁর আমলাদের দিল্লি পাঠাতে পারেন। মোদী জানেন, মমতা মন্ত্রিসভায় আসবেন না, এনডিএতেও যোগ দেবেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে উন্নয়ন তিনি করতে চাইছেন, তা রাজ্যের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। এই অবস্থায় তিনি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে চান।
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য রাজনৈতিক কারণেই এখন মমতার সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে চলতে চাইছেন। আগামী বছর বেশ কয়েকটি পুরসভা ও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রাজ্য বিজেপির বড় হাতিয়ার তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে শাসক দলের আক্রমণের অভিযোগ। এ নিয়ে তারা ইতিমধ্যেই পথে নেমেছে। একই সঙ্গে রাজ্যে বামেদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নিতেও মরিয়া তারা।
মোদী অবশ্য এখন স্বপ্নপূরণ করে দেখাতে চান। ভোট প্রচারে কলকাতায় গিয়ে দুই হাতে দুই লাড্ডুর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেই প্রত্যাশাই তিনি পূরণে উদ্যোগী। এবং সেটা সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই। প্রধানমন্ত্রী দফতরে পা রেখেই মোদী বিভিন্ন মন্ত্রকের সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন, রাজ্যগুলির সমস্যা মন দিয়ে শুনে সেগুলির সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও একই দাওয়াই দিয়েছেন তিনি। মনমোহন জমানায় বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে উপেক্ষা করার যে অভিযোগ দল বারবার করেছে, এ বারে যাতে তেমন কোনও অভিযোগ না ওঠে, সে বিষয়ে গোড়া থেকে সতর্ক মোদী।
উন্নয়নের প্রশ্নে মমতা, জয়ললিতা, নবীনদের এ ভাবে কাছে টানার পিছনে মোদীর বৃহত্তর কৌশলও রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। লোকসভায় মোদীর দলের যে আসন সংখ্যা, তাতে তাঁর অন্য কারও সমর্থনের প্রয়োজন নেই। কিন্তু রাজ্যসভায় বিজেপি এখনও সংখ্যালঘু। শরিকদের নিয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারেকাছে নেই তারা। ২০১৬ সালে রাজ্যসভায় এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর নেবেন। তখন রাজ্যসভায় অনেক বেশি সাংসদ তারা পাবে। কিন্তু তার এখনও দু’বছর বাকি। ফলে আগামী দু’বছর সংসদে গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি পাশ করাতে বেগ পেতে হবে বিজেপিকে। রাজ্যসভার ২৪৫টি আসনের মধ্যে বিজেপির সাংসদ মাত্র ৪৬ জন। শরিকদের নিয়ে সংখ্যাটা কমবেশি ৬৫। অথচ কোনও বিল পাশের জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ১২৩ জনের সমর্থন।
এই অবস্থায় মোদীর নজর মমতার ১২, জয়ললিতার ১০, নবীনের ৬, মায়াবতীর ১৪, মুলায়মের ৯, করুণানিধির ৪ এবং আরও কিছু ছোট দলের সাংসদের দিকে। কিন্তু তাতেও কংগ্রেস তাদের ৬৮ জন সাংসদ এবং কয়েক জন সহযোগীকে নিয়ে সমস্যা বাধাতে পারে। অন্য একটি পথও রয়েছে বিজেপির সামনে। তা হল, সংসদের যৌথ অধিবেশন ডাকা। সেখানে লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলে সংখ্যা মোদীর অনুকূলে। তবে তাতেও সমস্যা রয়েছে। কোনও সংবিধান সংশোধনী বিল এ ভাবে যৌথ অধিবেশন ডেকে পাশ করানো যায় না। সে কারণে মমতা-জয়া-নবীনদের কাছে টানতে সক্রিয় মোদী।
রাজ্যসভা নিয়ে অঙ্কের এই কচকচানির পাশাপাশি আরও একটি পা ফেলতে চান মোদী। তা হল, জয়ললিতা বা নবীনের মতো নেতারা এনডিএ-তে আসতে চাইলে, তিনি টেনে নেবেন। বিজেপি গোড়া থেকেই জানিয়েছে, প্রয়োজন না থাকলেও কোনও দল এনডিএ-র ছাতার তলায় আসতে চাইলে তাকে স্বাগত। এর পিছনে কৌশলটা হল, বিরোধীদের একেবারে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলা। জয়ের দিনই মোদী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মাত্র পাঁচ বছরের জন্য তিনি কুর্সিতে বসছেন না। অনেক দল যদি এনডিএতে সামিল হয়ে যায়, তা হলে রাজ্যসভার কাঁটা যেমন সহজে দূর হবে, তেমনই কংগ্রেসকেও আরও দুর্বল করার কাজটি সহজ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy