Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কারাটের চাপ বাড়ল, সরতে চান সীতারামও

নেতা বদলের দাবি উঠেছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রাজ্য কমিটির বৈঠকেই। বিমান বসু থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কেউই সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পাননি। এ বার সীতারাম ইয়েচুরিও পলিটব্যুরোর বৈঠকে জানিয়ে দিলেন, তিনি লোকসভা নির্বাচনের খারাপ ফলের দায় নিয়ে পলিটব্যুরো থেকে সরে দাঁড়াতে তৈরি। দলের হাল শোধরাতে তিনি পদ ছাড়তে রাজি আছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০৩:৩৭
Share: Save:

নেতা বদলের দাবি উঠেছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রাজ্য কমিটির বৈঠকেই। বিমান বসু থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কেউই সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পাননি। এ বার সীতারাম ইয়েচুরিও পলিটব্যুরোর বৈঠকে জানিয়ে দিলেন, তিনি লোকসভা নির্বাচনের খারাপ ফলের দায় নিয়ে পলিটব্যুরো থেকে সরে দাঁড়াতে তৈরি। দলের হাল শোধরাতে তিনি পদ ছাড়তে রাজি আছেন।

দলের নিয়ম মেনে এমনিতেই প্রকাশ কারাটকে আগামী বছর দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়তে হবে। কিন্তু ভোটে বিপর্যয়ের পরপরই তিনি যে ভাবে ব্যক্তিগত ভাবে দায় নেওয়ার বিরুদ্ধে বলে এসেছেন, সেই অবস্থানকে আজ ফের প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল সীতারামের ঘোষণা।

লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরেই রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু জানিয়েছিলেন, তিনি হারের দায় নিয়ে সরে দাঁড়াতে রাজি আছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও জানিয়ে দেন, তিনি আর পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটির কোনও পদে থাকতে চান না। এত দিন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফেও তাঁদের নিরস্ত করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এখনও ভোটে হারের কারণই বিশ্লেষণ হয়নি। আগে জেলা ভিত্তিক রিপোর্ট আসুক। রাজ্য কমিটি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত সব স্তরে ভোটের ফলাফল নিয়ে আলোচনা হোক। তার পরে দায় নেওয়ার প্রশ্ন।

সেই ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণেই আজ থেকে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে দিল্লিতে। চলবে তিন দিন। আলোচসূচিতে না থাকায় ইয়েচুরির পলিটব্যুরো ছাড়ার ইচ্ছা নিয়ে এ দিন কোনও আলোচনা হয়নি। দিনের শেষে কারাটও জানিয়ে দেন, আজকের বৈঠকে নেতৃত্ব বদল নিয়ে কোনও কথা হয়নি।” তবে ইয়েচুরিও শেষ পর্যন্ত বিমান-বুদ্ধদেবের পথ ধরায় যথেষ্টই অস্বস্তিতে পড়েছেন কারাট। বাকি সবাই পদ ছাড়তে রাজি আছি বললেও কারাটের পক্ষে এখন আর সে কথা বলা সম্ভব নয়।

কারণ ভোটের ফল প্রকাশের পরেই কারাট বলেছিলেন, “সিপিএমে সমষ্টিগত ভাবে সব সিদ্ধান্ত হয়। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেয় না। তাই নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির উপর ভোটের ফলাফলের দায় বর্তায় না।” পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম নেতাদের এতে খুশি হওয়ারই কারণ ছিল। কারণ সমষ্টিগত সিদ্ধান্তের কথা বলে কারাট এক দিকে যেমন নিজে দায় নেননি, তেমনই আলিমুদ্দিনের নেতাদের ঘাড়েও দায় চাপাননি।

সিপিএম নেতারা মনে করছেন, কারাটের সেই অবস্থানই এখন ‘ব্যুমেরাং’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলে বার্তা যাচ্ছে, বিমান, বুদ্ধদেব, সীতারামরা পার্টির নিচুতলার দাবি মেনে পদ ছাড়তে রাজি। অথচ কারাট গদি আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইছেন।

কারাটের ঘনিষ্ঠ-মহল থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, তিনি মোটেই গদি আঁকড়ে থাকতে চান না। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী টানা তিন বারের বেশি শীর্ষ পদে থাকতেও পারবেন না তিনি। আগামী বছরের পার্টি কংগ্রেসেই তাঁকে সরতে হবে।

তবে চাপটা অন্য। সিপিএম সূত্রে বলা হচ্ছে, কারাট ও তাঁর অনুগামীরা সাধারণ সম্পাদক পদে এস আর পিল্লাইকে নিয়ে আসতে চাইছেন। কারাট-বিরোধী শিবিরের মত, পিল্লাই সাধারণ সম্পাদক পদে বসলেও দলের নিয়ন্ত্রণ কার্যত কারাটের হাতেই থাকবে। তাই কারাট-বিরোধী শিবির যতটা না কারাটকে সরাতে উদ্যোগী, তার থেকেও বেশি আগ্রহী পিল্লাইকে আটকাতে। কারাট-বিরোধী শিবিরের মতে, কারাট ও তাঁর অনুগামীদের ভুল রাজনৈতিক লাইনের ফলেই দলের ভরাডুবি হয়েছে। নতুন চিন্তাভাবনা, ও রাজনৈতিক কৌশলেরও প্রয়োজন। নেতৃত্বের ভরকেন্দ্র বদল হলেই তা সম্ভব। ভরকেন্দ্র বদলের এই দাবি আলিমুদ্দিনেই শুনে এসেছিলেন কারাট। রাজ্য কমিটির বৈঠকে ইয়েচুরি, মানিক সরকার ও তাঁর সামনেই বুদ্ধদেব জানিয়েছিলেন, দলের ভিতরে-বাইরে এত লোক যখন মনে করছেন নেতৃত্বে মুখ বদল না হওয়াটাই হারের কারণ, তখন তিনি আর বোঝা হয়ে থাকতে চান না। কারাট তাই নিচুতলার ক্ষোভকেও অস্বীকার করতে পারছেন না। আগামী বছর পার্টি কংগ্রেস হওয়ার কথা। কিন্তু পার্টি কংগ্রেসের সম্মেলন দুর্গাপুজোর আগেই সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু করে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। লক্ষ্য হল, দলের কর্মীদের ক্ষোভ নিরস্ত করতে এই বার্তা দেওয়া যে, তাঁদের দাবি মেনে নেতৃত্ব বদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।

তবে নিচুতলায় যে দাবিই উঠুক, সিপিএমের কোনও নেতাই অবশ্য এখনই নেতৃত্বে মুখ বদলের সম্ভাবনা দেখছেন না। সকলেই একমত, এই ভাবে সিপিএমে নেতা বদল হয় না। হলে হবে আগামী বছরের পার্টি কংগ্রেসে দলের সব স্তরে আলোচনা করে। পলিটব্যুরোর এক নেতার বক্তব্য, যাঁরা পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন, তাঁরা নেহাৎই আবেগের বশে এ কথা বলছেন। শুধু কয়েক জন নেতা সরে দাঁড়ালেই পার্টি ঘুরে দাঁড়াবে, এমনও নয়। কঠিন অবস্থার মধ্যে রয়েছে দল। ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে। রাতারাতি নেতা বদলে লাভ হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

prakash karat sitaram yechuri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE