Advertisement
১৬ মে ২০২৪

চার বন্ধুকে বাঁচিয়েও ভেসে গেলেন নিজে

ছোটবেলা থেকেই সাঁতারে পারদর্শী বছর কুড়ির যুবকটি। রবিবার সন্ধেয় বিপাশার জলে বন্ধুদের তলিয়ে যেতে দেখে আটকে রাখতে পারেননি নিজেকে। খরস্রোতা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেলেঠুলে চার বন্ধুকে পৌঁছে দিয়েছিলেন ডাঙায়। শেষরক্ষা হয়নি। বাকিদের সাহায্য করতে নেমে জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিলেন নিজেই। ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। এখনও নিখোঁজ সে দিনের ‘নায়ক’ এম কিরণ কুমার। কিরণের খোঁজ না মেলায় তাঁর বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন শোকস্তব্ধ ঠিকই।

বিপাশায় তলিয়ে যাওয়া এই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়েছে সোমবার। মঙ্গলবার হায়দরাবাদের বাড়িতে তাঁর ছবির পাশে শোকার্ত পরিজনরা। ছবি: পিটিআই

বিপাশায় তলিয়ে যাওয়া এই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়েছে সোমবার। মঙ্গলবার হায়দরাবাদের বাড়িতে তাঁর ছবির পাশে শোকার্ত পরিজনরা। ছবি: পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
মান্ডি শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০৩:৪৮
Share: Save:

ছোটবেলা থেকেই সাঁতারে পারদর্শী বছর কুড়ির যুবকটি। রবিবার সন্ধেয় বিপাশার জলে বন্ধুদের তলিয়ে যেতে দেখে আটকে রাখতে পারেননি নিজেকে। খরস্রোতা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেলেঠুলে চার বন্ধুকে পৌঁছে দিয়েছিলেন ডাঙায়। শেষরক্ষা হয়নি। বাকিদের সাহায্য করতে নেমে জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিলেন নিজেই।

ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। এখনও নিখোঁজ সে দিনের ‘নায়ক’ এম কিরণ কুমার। কিরণের খোঁজ না মেলায় তাঁর বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন শোকস্তব্ধ ঠিকই। তবে ঘরের ছেলের এই সাহসিকতায় গর্বিতও তাঁরা। সহপাঠী প্রত্যুষা বললেন, “জল বাড়ছে দেখে বোধ হয় বিপদের আঁচ পেয়েছিল কিরণ। ঝাঁপিয়ে পড়ে ডাঙার দিকে ঠেলতে থাকে আমাদের। ডাঙায় পৌঁছে পিছনে ফিরে দেখি ফের নদীর দিকেই যাচ্ছে ও। কিরণ পাক্কা সাঁতারু। ভেবেছিলাম ঠিক উঠে আসতে পারবে। কোথা থেকে কী হয়ে গেল...।” ছেলের ফিরে আসার আশায় অবশ্য এখনও বুক বেঁধে বাবা বেঙ্কটেশরামন। রাজীব গাঁধী আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের সামনেই হত্যে দিয়েছেন তিনি। বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর টার্মিনালে ঘনঘন পায়চারি করে চলেছেন। চোখের কোণে জল, থমথমে শান্ত মুখ। নাগাড়ে বলে চলেছেন, “খুব ভাল সাঁতার জানে কিরণ। আমি নিশ্চিত, নিরাপদ জায়গায় ঠিক পৌঁছে যাবে ও।”

কিরণ তো বটেই, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্তও খোঁজ মেলেনি বিপাশায় তলিয়ে যাওয়া হায়দরাবাদের আরও ১৮ জন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের। দিনভর বিপাশার জলে তল্লাশি চালিয়েছে ১০ জনের ডুবুরি দল। তল্লাশি চালিয়েছে ৮৪ সদস্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। ঠায় দাঁড়িয়ে উদ্ধারকাজের তদারকি করেছেন হিমাচল সরকারের প্রতিনিধিরা।

প্রশাসনের প্রতিনিধিদের দেখে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন থালুত, শালানালা গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, সর্তকতামূলক হুটার না বাজিয়েই রবিবার সন্ধেয় বিপুল পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছিল পানডো বাঁধ থেকে। সাধারণত রাত ন’টার পরই জল ছাড়া হয় এখানে। তবে সে দিন কেন এমনটা হল তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। স্থানীয় বাসিন্দা দীনা চাদ এ-ও বলেন, “হঠাৎ করে যাতে জলস্তর বেড়ে না যায় তার জন্য আস্তে আস্তেই জল ছাড়া হয় নদীতে। জানি না কেন বাঁধের সব ক’টি মুখ খুলে দেওয়া হয়েছিল একসঙ্গে।” বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর এক আধিকারিক জানান, পানডো বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় জল খুব বেশি থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তবে বাঁধের মুখগুলি খুলে দিলে আরও বিপদ। জলের তোড়ে ভেসে যেতে পারে দেহগুলি। মান্ডির জেলাশাসক দেবেশ কুমারের ক্ষোভ, বাঁধ কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই নদীর তীরে পর্যাপ্ত বিপদ সঙ্কেত লেখা সাইনবোর্ড বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের গাফিলতি না থাকলে হয়তো এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। হিমাচলপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ মঙ্গলবার দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারপিছু দেড় লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি এক বিবৃতিতে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, লারজি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অধীন নদী তীরের বিপদসঙ্কুল এলাকাগুলি খুব শিগগিরই বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হবে প্রশাসনের তরফে।

রবিবারের এই দুর্ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে রাজ্যসভা ও লোকসভার অধিবেশনেও। তেলঙ্গানার উপ মুখ্যমন্ত্রী মহম্মদ মাহামুদ আলি জানিয়েছেন, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নৈনি নরসিংহ রেড্ডি-সহ সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক ও তেলঙ্গানা পুলিশের একটি দল এই মুহূর্তে মান্ডিতে রয়েছেন। বিপাশায় তলিয়ে যাওয়া সব ছাত্রের দেহ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন তাঁরা। হায়দরাবাদে তেলঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের তরফে একটি যৌথ ‘কন্ট্রোল রুম’ গঠন করা হয়েছে। উদ্ধারকাজে অগ্রগতির বিষয়ে দিল্লি ও হিমাচলপ্রদেশের সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা।

গত ৪৮ ঘণ্টার চেষ্টায় যে পাঁচ ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয়েছে, সোমবার রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমানে সেগুলি নিয়ে আসা হয়েছে হায়দরাবাদে। ময়নাতদন্তের পর দেহগুলি তুলে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট পরিবারের হাতে। অন্য একটি বিমানে হায়দারাবাদ ফিরে এসেছেন মানালি সফরে যাওয়া হায়দরাবাদে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বাকি ছাত্রেরাও।

কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতির সঙ্গে মান্ডির উদ্দেশে ইতিমধ্যেই রওনা হয়ে গিয়েছেন নিখোঁজ ছাত্রদের আত্মীয়-পরিজন। একটাই আশা, কিছু একটা মিরাক্ল ঘটবে ঠিকই। ঘরের ছেলে ফিরে আসবে ঘরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

m kiran kumar drown beas disaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE