সূচনাতেই বিধি বাম! বরুণদেবের কৃপা পেতে যখন বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের দরকার ছিল, তখন দক্ষিণবঙ্গের বর্ষা-ভাগ্যে আরও অনিশ্চয়তা ডেকে নিম্নচাপ তৈরি হতে চলেছে আরবসাগরে।
পাঁচ দিন দেরি করে কেরলে গত শুক্রবার মৌসুমি বায়ু ঢুকেছে। রবিবার তার কিছুটা অংশ তামিলনাড়ু-কর্নাটকেও ছড়িয়ে পড়েছে। মৌসুমি বায়ুর আরবসাগর শাখাই দক্ষিণবঙ্গে মরসুমি বৃষ্টি নামায়। এবং স্বাভাবিক নিয়মে কেরলে প্রবেশের সাত দিনের মধ্যেই তা দক্ষিণবঙ্গে চলে আসে। ক্যালেন্ডার মানলে আগামী শুক্রবারের মধ্যে তার দক্ষিণবঙ্গে ঢুকে পড়ার কথা।
কিন্তু পরিস্থিতি দেখে আবহবিদেরা তেমন আশা বিশেষ দেখছেন না। ওঁদের বক্তব্য: দক্ষিণ ভারত থেকে বর্ষাকে দক্ষিণবঙ্গের দিকে টেনে আনার অন্যতম যে শর্ত, বঙ্গোপসাগরে সেই নিম্নচাপ তৈরির কোনও লক্ষণ নেই। উল্টে একটা নিম্নচাপ দানা বাঁধতে চলেছে আরবসাগরে, যা কিনা মৌসুমি বায়ুর আরবসাগর বাহুর পিছু টেনে ধরতে পারে। পরিণামে দক্ষিণবঙ্গের পথে আপাতত থমকে যেতে পারে বর্ষা এক্সপ্রেস-২০১৪।
অর্থাৎ বর্ষার পথে ফের বাধা। এবং বড় বাধা। আবহবিদেরা বলছেন, আরবসাগরের নিম্নচাপটি কেরল উপকূলের বেশ কিছুটা দূরে কেন্দ্রীভূত হলে পরিস্থিতি গুরুতর চেহারা নেবে। কারণ, সে ক্ষেত্রে তার পিছুটানে মৌসুমি বায়ু ফের মূল ভারতীয় ভূখণ্ড ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারে। নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে না-আসা পর্যন্ত তার আকর্ষণ কাটিয়ে ফের ভারতীয় ভূখণ্ড অভিমুখে রওনা দেওয়া মৌসুমি বায়ুর পক্ষে সম্ভব হবে না। আবার নিম্নচাপের উৎপত্তি কেরল উপকূল ঘেঁষে হলেও বিপত্তি। কেননা তাতে মৌসুমি বায়ু কেরল থেকে সরাসরি ঢুকে যাবে পশ্চিম ভারতে, বর্ষার দাক্ষিণ্য থেকে বঞ্চিত হবে মধ্য ও পূর্ব ভারত। উপরন্তু আরবসাগরের নিম্নচাপের শক্তি খুব বেশি হলে তা বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প টানতে শুরু করবে। ফলে পূর্ব ভারতের বর্ষা আরও বিলম্বিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন আবহবিদেরা।
সমস্যার সুরাহা হতে পারত বঙ্গোপসাগরের কোনও শক্তিশালী নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে, যার টানে দক্ষিণ থেকে পূর্ব ভারতের পথে ছুটতে পারত বর্ষার ট্রেন। কিন্তু হাওয়া অফিস এই মুহূর্তে তেমন আশা দেখছে না। বরং আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলছেন, “আরবসাগরে যে নিম্নচাপটি দানা বাঁধছে, সেটা কেরলে থাকা মৌসুমি বায়ুকে আরও নীচে টেনে নামিয়ে দিতে পারে। তাতে কেরলেও বর্ষার জোর কমবে।” বস্তুত ওই নিম্নচাপের গতি-প্রকৃতির উপরেই এ বার পূর্ব ভারত তথা দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার ভবিষ্যৎ অনেকটা নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি আরবসাগরের নিম্নচাপের প্রভাবে মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় বাহুটিও দুর্বল হয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা। আন্দামান হয়ে সেটি আপাতত মায়ানমারে অবস্থান করছে। উত্তর-পূর্ব ভারত হয়ে তার উত্তরবঙ্গে ঢোকার কথা। আবহবিদদের একাংশের আশঙ্কা, নতুন পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও বর্ষার অগ্রগতি হোঁচট খাবে। পিছিয়ে যেতে পারে উত্তরবঙ্গের বর্ষা নির্ঘণ্ট।
উত্তরবঙ্গ অবশ্য এখন ভারী বৃষ্টিতে ভাসছে। দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলেও বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে অল্পবিস্তর বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে থাকছে ঝোড়ো হাওয়া। গোকুলবাবুর ব্যাখ্যা: উত্তরবঙ্গে একটি নিম্নচাপ-অক্ষরেখা রয়েছে, যার টানে জলীয় বাষ্প এসে ঢুকছে সেখানকার বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে। ফলে আগামী তিন দিন উত্তরবঙ্গ জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা। দক্ষিণবঙ্গেও বজ্রগর্ভ মেঘের দৌলতে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে।
কিন্তু এতে আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই। আবহবিদেরা জানিয়ে দিয়েছেন, এ বৃষ্টি আদৌ প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy