Advertisement
১০ মে ২০২৪

দয়া করে উপায়টা বলে দেবেন

এখন সন্ধে নামছে তাড়াতাড়ি। অন্ধকার গাঢ় হলে দূরের পাহাড়ের গায়ে ভেসে উঠছে কুয়াশার স্তর। নব বধূর পাতলা ওড়নার মত ঢেকে ফেলেছে চার পাশ। রাত ঘন হলে শীতলতা জমছে একটু একটু করে। রাতগুলো এ সময় মায়াবী ছায়া-ছায়া ঘুমে মাখা অলৌকিক কুহকিনী যেন। ঝাপসা কুয়াশায় আকাশে দুটো একটা তারা মিটমিট করে জ্বলতে জ্বলতে যেন ডাকে আয় আয় আয় নিশির ডাকের মতো। পৃথিবীটা এ সময় মনে হয় একটা স্বপ্ন। শীত শুরুর গল্প বললেন পারমিতা মুখোপাধ্যায়।উত্‌সবের দিনগুলো চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এত দিন ধরে মনের মাঝে যে আলো আর রঙের নিরন্তর বর্ষণ চলছিল তা ক্রমশ জেল্লা হারাচ্ছে। মন যেন আজ ভাঙা মেলা। ব্যাপারীদের বিকিকিনি শেষ। মেলা দেখতে আসা অগণিত মুখের মিছিল বিস্ময়ভরা আর ক্লান্ত দৃষ্টি নিয়ে ঘরমুখো। কাল যেখানে কত হইচই কত মানুষের মুখর আনন্দ মিশে ছিল আজ সেই প্রাঙ্গণ রিক্ত, শূন্য, কোলাহলহীন। প্রকৃতিও যেন মনের এই ভাবটুকু পড়ে ফেলতে পেরেছে। তাই তারও আজ পাতা ঝরা বার পালা শুরু।

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

উত্‌সবের দিনগুলো চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এত দিন ধরে মনের মাঝে যে আলো আর রঙের নিরন্তর বর্ষণ চলছিল তা ক্রমশ জেল্লা হারাচ্ছে। মন যেন আজ ভাঙা মেলা। ব্যাপারীদের বিকিকিনি শেষ। মেলা দেখতে আসা অগণিত মুখের মিছিল বিস্ময়ভরা আর ক্লান্ত দৃষ্টি নিয়ে ঘরমুখো। কাল যেখানে কত হইচই কত মানুষের মুখর আনন্দ মিশে ছিল আজ সেই প্রাঙ্গণ রিক্ত, শূন্য, কোলাহলহীন। প্রকৃতিও যেন মনের এই ভাবটুকু পড়ে ফেলতে পেরেছে। তাই তারও আজ পাতা ঝরা বার পালা শুরু। রিক্ততার স্পর্শ লেগেছে তার সবুজ-বন-অঞ্চলে। বাড়ির সামনে শিরীষ গাছগুলোর থেকে হাওয়ার তোড়ে ঝিরঝির করে ঝরে পড়ছে ছোট্ট ছোট্ট পাতা। সবুজ রং ক্রমশ ফিকে আয়ে আসছে।

এখন সন্ধে নামছে তাড়াতাড়ি। অন্ধকার গাঢ় হলে দূরের পাহাড়ের গায়ে ভেসে উঠছে কুয়াশার স্তর। নব বধূর পাতলা ওড়নার মত ঢেকে ফেলেছে চার পাশ। রাত ঘন হলে শীতলতা জমছে একটু একটু করে। রাতগুলো এ সময় মায়াবী ছায়া-ছায়া ঘুমে মাখা অলৌকিক কুহকিনী যেন। ঝাপসা কুয়াশায় আকাশে দুটো একটা তারা মিটমিট করে জ্বলতে জ্বলতে যেন ডাকে আয় আয় আয় নিশির ডাকের মতো। পৃথিবীটা এ সময় মনে হয় একটা স্বপ্ন। মনে হয় এই ভূলোক ছাড়িয়ে চলে যাই। অনেক অনেক আলোকবর্ষ পথ আর বাধা বলে মনে হয় না। ছুটে চলে মন দূরে আরও দূরে। মনের গতি রোধ করে কার সাধ্য। বাংলা বছরটা গড়াতে গড়াতে কার্তিক মাসে পড়েছে। আর এই মাস জুড়ে যেন থাকে এক রহস্যময় অনুভব। শীত আসছে। রুক্ষ হচ্ছে প্রকৃতি। চারিদিকের এই শূন্যতা রিক্ততাই কী মনের মাঝে জন্ম দেয় এমন অতিলৌকিক এক অনুভূতির? এই কার্তিক মাসেই তো ভূতচতুর্দশী, মৃত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে আকাশপ্রদীপ জ্বালা। আবার এই কার্তিকেই পশ্চিমের হ্যালোউইন। ইংরেজি তারিখটা ৩১ অক্টোবর কিন্তু তা বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসেবে কার্তিকেই পড়ে। আসলে এই সময়টা শস্য কেটে নেওয়ার সময়। এর অবধারিত পরেই আসবে শীত। শস্যহীন ধু ধু প্রান্তরের শূন্যতা গ্রাস করবে মানুষকে। আর শীতের দেশগুলোতে এই সময়ের পর থেকেই শুরু হয়ে যাবে দীর্ঘ কয়েক মাসের তুষার শীতলতার প্রস্তুতি। সে এক বড় রুক্ষ সময়। সূর্যের মুখ দেখা যাবে কি যাবে না। স্যাঁতস্যাঁতে দীর্ঘ রাতগুলো একরাশ বিষণ্ণতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কুয়াশাঘেরা অন্ধকারময় দিনগুলো যেন কাটতেই চাইবে না। আমরা গরমের দেশের মানুষেরা ভাবতেই পারি না সেই সব শীতের দেশের মানুষের কষ্ট। যে সূর্যের আলো আর তাপের গুরুত্ব আমরা হেলাফেলা করি, সেই সূর্য ওদের কাছে যেন নতুন জীবন নিয়ে আসে। এই দীর্ঘ শীতের দিনগুলো ওদের কাছে যেন অন্ধকারের মতোন। মনের ওপরেও এর প্রভাব পড়ে বইকি। মনগুলোও সতেজতা হারিয়ে যেন এক ঘেয়ে শীতল হয়ে ওঠে। আর এই হ্যালোউইন হল সেই বিভাজন আলো আর অন্ধকারের। প্রত্যেক বছর ৩১ অক্টোবর পৃথিবীর অনেক দেশেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই হ্যালোউইন উত্‌সব। হ্যালোউইন অর্থাত্‌ অল হ্যালোস ইভ বা অল সেইন্টস ইভ। বাংলায় তর্জমা করলে বোঝায় মৃত বা শহিদদের জন্য নির্ধারিত উত্‌সব-সন্ধ্যা।

এই উত্‌সবের সাজপোশাক, অলঙ্করণ সবকিছুর মধ্যেই ভৌতিক ছোঁয়া থাকে। বনফায়ার, জ্যাক ও ল্যান্টার্ন, হানাবাড়ি এ সব তৈরি করে একটা অতিপ্রাকৃত পরিবেশ রচনা করা হয়। অনেকে মনে করেন এই দিনে যে সব আত্মার স্থান স্বর্গ বা নরক কোথাও হয় না, এই দিনটিতে সেই আত্মাদের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন একটা গল্প প্রচলিত আছে।

এক রাতে প্রচুর পানাহার করে জ্যাক বাড়ি ফিরছিল। এমন সময় তার সঙ্গে দেখা হল শয়তানের। জ্যাক কায়দা করে শয়তানকে গাছে উঠিয়ে গাছের ছালের ওপর একটি ক্রশ এঁকে দিল যাতে শয়তান গাছ থেকে নামতে না পারে। শয়তানকে ফাঁদে ফেলে জ্যাক তার থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিল যে শয়তান জ্যাকের আত্মাকে কখনও দাবি করতে পারবে না। শয়তান তাকে প্রতিশ্রুতি দিল। কিন্তু জ্যাকের মতো মানুষেরা কখনও ভাল হয় না। সে তার জীবদ্দশায় এমন উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতে শুরু করল যে মৃত্যুর পর তার স্বর্গেও জায়গা হল না। এ দিকে শয়তানও তার প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ। তাই নরকে যাওয়ার পথও জ্যাকের রুদ্ধ হয়ে গেল। কেবল শয়তান নরকের আগুন থেকে একটি জ্বলন্ত কয়লার টুকরো তার দিকে ছুঁড়ে দিল। সেই রাতটি ছিল বরফশীতল এক রাত। জ্যাক সেই জ্বলন্ত কয়লার টুকরোটা একটা শালগমের মধ্যে গর্ত করে রেখে দিল যাতে আগুনটা নিভে না যায়। সেই থেকে আজও জ্যাক ওই লণ্ঠন নিয়ে তার স্থান খুঁজে বেড়াচ্ছে। এই হল জ্যাক ও ল্যান্টার্নের কাহিনি। তবে শালগমের থেকে কুমড়ো আকারে বড় এবং এর মধ্যে ভাল ভাবে গর্ত করে ভূতের মুখের মতো আকার দিয়ে আলো জ্বালিয়ে রাখল দেখতে আরও ভয়ঙ্কর লাগে, তাই কুমড়োকেই মূলত জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভাবুন তো অন্ধকার রাতে বাড়ির সামনে অমন একখানা জ্বলন্ত দাঁত বার করা ভূতের মুখ দেখে কার না ভয় লাগবে। অতি বড় সাহসীরও কি একটু বুক কাঁপবে না? কেউ কেউ মনে করেন এই হ্যালোউইন উত্‌সব মূলত কেল্টিক জনগোষ্ঠীর শস্য উত্‌সব ছিল। পরবর্তী কালে এটি ক্রিশ্চানরাও পালন করতে শুরু করেন। আবার কারও কারও মতে এটি উদ্ভুত হয় সাউইন থেকে। ক্রিশ্চানদের মধ্যেও এর শিকড় ছিল। হ্যালোউইনের উত্‌স কেল্টিক উত্‌সব যা সাউইন নামে পরিচিত। সাউইন উত্‌সব অনুষ্ঠিত হত ফসল কাটার পরগেইলিক সংস্কৃতি অনুযায়ী। পাগান জাতির লোকেরা এই সময় থেকেই দীর্ঘ শীতের জন্য শস্য মজুত করত। প্রাচীন গেইলিক বিশ্বাস অনুযায়ী এই ৩১ অক্টোবর জীবিত মানুষের জগতের সঙ্গে মৃত মানুষের জগত্‌ সমাপতিত হয়। ফলে মৃত আত্মারা ফিরে এসে মানুষের ক্ষতি করে যেমন ফসল নষ্ট করা ইত্যাদি। এই সময় পোকামাকড় বা বাদুড়ের কবল থেকে ফসল বাঁচাতে বনফায়ার করা হত, যা আজও ট্রাডিশন হিসেবে চলে আসছে। প্রাচীন মানুষেরা অনেক আধিভৌতিক ব্যাপারে বিশ্বাস করত। বাদুড় বা ফসল নষ্টকারী পোকামাকড়ের দল হয়ত তাদের কাছে ছিল মৃত আত্মার প্রতীক। যেমন রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের কাহিনি পড়লে আজও আমাদের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। হ্যালোউইন উত্‌সব মৃতদের উদ্দেশ্যে করা হলেও কিন্তু এর মজার দিকও রয়েছে। মৃত্যু সকল প্রাণীর ক্ষেত্রেই অবশ্যম্ভাবী। পৃথিবীতে কেউই অমর নয়। তাই সেই মৃত্যুকে যেন আমরা সহজ ভাবে নিতে পারি। তাই হাসি আর মজা দিয়ে এই মৃত্যু ভয় ভুলিয়ে রাখাও যেন এই উত্‌সবের একটা অঙ্গ। বাচ্চারা এই উত্‌সবে ‘ট্রিক অর ট্রিট’ নামে একটা মজার খেলা খেলে থাকে। তারা এই দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ট্রিট চায় অর্থাত্‌ কিছু চকোলেট, ক্যান্ডি, কেক বা তাদের পছন্দের কোনও খাবার জিনিস চায়। যে গৃহস্থ দিলেন তিনি রক্ষে পেলেন কিন্তু যিনি দেবেন না, তাঁকে বাচ্চাদের কিছু না কিছু দুষ্টুমি সইতেই হবে অর্থাত্‌ বাচ্চারা কিছু একটা ‘ট্রিক’ করবেই। আসলে উত্‌সব মানেই তো কিছু হাসি, কিছু আনন্দ। হলই বা ভূতেদের উত্‌সব। হ্যালোউইন মানে ভৌতিক পোশাক আশাকের সমাহার। ভৌতিক পোশাক মানে কঙ্কালের মুখোশ, কালো জামা প্যান্টের ওপর সাজা দিয়ে চিত্রিত কঙ্কালের হাড়গোড়। কেউ কেউ আবার লাগিয়ে নেন ড্রাকুলা বা ভ্যাম্পায়ারের মত বড় বড় দাঁত, হাতে বড় বড় নখ। মুখে রংচং লাগিয়ে, পরচুলা পরে কেউ কেউ আবার বীভত্‌স সাজে সেজে ওঠেন। ডাকিনী, কঙ্কাল, মাকড়সার জাল, তীক্ষ্ন আর্তনাদ এ সবই ভূতের অনুষঙ্গ তৈরি করতে সাহায্য করে। আর একটা জম্পেশ হানাবাড়ির মডেল বানাতে পারলে তো কথাই নেই, খেলা মানে ভয় দেখানো বেশ জমে যাবে।

অন্ধকার রাত। নীল আলোর আবহে একা দাঁড়িয়ে আছে পোড়ো বাড়িটা। চার পাশ কেমন ধোঁয়া-ধোঁয়া আবছায়া কুয়াশা ঘেরা। কাছে যাওয়া মাত্রই ঝন ঝন করে খুলে গেল অনেক দিনের পুরনো রোদ জল বৃষ্টিতে ভেজা মরচে ধরা লোহার গেট। তিন তলা বাড়িটা যেন একটা ক্যাসলের আকারে তৈরি। সময় তার চিহ্ন রেখে গিয়েছে ক্ষয়ে যাওয়া বিবর্ণ হয়ে যাওয়া বাড়িটার সর্বত্র। দরজা জানলার পাল্লা ভেঙে পড়েছে। চারি দিকে মাকড়সার জাল। আগাছায় ভরে গেছে সামনের বাগান।

বাগানের ফোয়ারার পরীর মূর্তিগুলো ভগ্ন তবু সেই নীল আলোয় তারা যেন মায়াবী। বলছে, এসো, চলে এসো, আমাদের কাছে এসো। এক সময় ওই নীল আলোটাও নিভে যায়। চারিদিকে ঢাকা পড়ে নিশ্চিদ্র অন্ধকার। ঘন অন্ধকার। চকিতে সেই অন্ধকারের বুক চিরে কানে আসে ঘোড়ার খুরের শব্দ। অন্ধকারে কিছু ঠাহর হয় না। কিন্তু আশ্চর্য ভাবে অন্ধকারের চাইতেও ঘন কালো এক ঘোড়ায় তেমনই এক ঘন কালো বস্ত্রে আপাদমস্তক মোড়া ঘোড়াসওয়ার তীব্র বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে ঢুকে যায় সেই বাড়িতে। হঠাত্‌ একটা তীক্ষ্ন গগনভেদী চিত্‌কার, তার পরই ঘোড়ার চিঁহি হিঁ হিঁ শব্দ। তার পর সব চুপ, নিস্তব্ধ। ঝিঁঝিঁরাও যেন ডাকতে ভুলে গেছে।

আবার সেই অন্ধকার ধীরে ধীরে মুখ লুকোয় মায়াবী নীল আলোয়। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে পাথরের পরী। পিঠে তার দুটো ডানা। সেই মায়াবী আলোয় যদি চোখের ভুল না হয়, তা হলে পাথরের পরী যেন সচকিত হয়ে উঠল আর তখনই ওই ক্যাসলের মতো দেখতে বাড়িটার বল রুম থেকে ভেসে এল বাজনার আওয়াজ। খুব মৃদু সুরে বাজছে বাজনা। বেহালার করুণ সুর ক্রমে ছড়িয়ে যাচ্ছে বাতাসে। সে সুর যেন এই পৃথিবীর নয়, অলৌকিক অপার্থিব। কিন্তু সেই সুরে কী যে এক সম্মোহন রয়েছে যে শুনবে সে সম্মোহিত হবেই। পায়ে পায়ে এগিয়ে যাবে ওই বলরুমের দিকে। মোম পালিশ করা কাঠের মেঝে আজ বিবর্ণ, ধুলোমলিন। বলরুমের ভিতর ছাদে ঝোলানো বিশাল এক ঝাড়লণ্ঠন বেলজিয়াম গ্লাসের। অথচ অত বড় ঘরটায় একটা মোমবাতি জ্বলছে আর তার সামনে করুন সুরে বেহালা বাজিয়ে চলেছে আপাদমস্তক কালো কাপড় মোড়া সেই ঘোড়সওয়ার কি? তার মুখ দেখা যাচ্ছে না মোমের আলোকে আড়াল করে বসেছে সে।

আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন, আমি কী করে বর্ণনা করছি ঘটনাটা। আমি এই গল্পটার মধ্যে ঢুকে পড়েছি যে! কিন্তু গল্পটা আর গল্পের মতো লাগছে না। মনে হচ্ছে, আমি যেন সত্যিই বাড়িটার আকর্ষণে পড়ে গেছি। এ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে, স-ব সত্যি মনে হচ্ছে। লোকটা বেহালা বাজিয়েই চলেছে। আমি যে ঘরে ঢুকেছি, সে সম্বন্ধে সে যেন নির্লিপ্ত, উদাসীন। আমার যেন কোনও অস্তিত্বই নেই ওর কাছে। আমার কেবল মনে হচ্ছে এ কোন জগতে চলে এলাম আমি। এখান থেকে ফিরতে পারব তো? বেহালার সুরটা ক্রমশ চড়ছে আর আচ্ছন্ন করে ফেলছে আমার শরীর মন।

‘এই যে শুনছেন, এ দিকে তাকান, কে আপনি কে?’ আমি চিত্‌কার করে উঠি। কিন্তু আমার আওয়াজ বোধহয় তার কানে যায় না। সে ফিরেও তাকায় না। বেহালার শব্দটা আমার মস্তিষ্ককে ধীরে ধীরে অবশ করে ফেলছে। কী করে আমি এই বাড়িটা আর এই গল্পটার থেকে বেরোব বলতে পারেন? দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। আপনাদের কারও কাছে কী আছে এই জগত্‌ থেকে আপনাদের জগতে ফেরার জাদুমন্ত্র। সম্পূর্ণ হারিয়ে যাওয়ার আগে দয়া করে আমাকে উদ্ধার করুন...বলে দিন জাদুমন্ত্রটা... দয়া করে বলে দিন...।

একটু ভুল হয়ে গিয়েছে। উত্‌সব এখনও শেষ হয়নি। নভেম্বরের গোড়াতেই জগদ্ধাত্রী পুজো। মুম্বইয়ে এই পুজো তেমন হয় না, ঠিকই, তবে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ এই পুজোটা আন্তরিক ভাবে করে। নভি মুম্বইয়ের ভাসিতে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ-এর কার্যালয়। কখনও যাওয়া হয়নি, শুনেছি শুধু। এ বার পুজোয় যাওয়ার খুব ইচ্ছে আছে। মুম্বইওয়ালারা জানেন না, পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরে এই পুজো খুব জাঁকের সঙ্গে হয়। এত আলো সেখানে এই উত্‌সবে! চন্দননগর-ভদ্রেশ্বর-শ্রীরামপুরে শতাধিক জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। অনিন্দ্যসুন্দর প্রতিমা। কয়েকটা পুজো তো বেশ বড়। এবং পুরনো। কয়েকটা পুজো ২০০-৩০০ বছরেরও! দুর্গাপুজোর মতোই তিন দিনের পুরো পুজো। এ বার বিসর্জন ৩ নভেম্বর। বিসর্জনও দু’চোখ ভরে দেখার মতো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mumbai winter paromita mukhopadhay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE