Advertisement
E-Paper

প্রচারে চাই সমান অধিকার, কমিশনে সিপিএম

সে বড় সুখের সময় ছিল! ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার অনেক আগেই দেওয়াল দখল করে ফেলতেন পার্টির ছেলেরা। কালো কালি দিয়ে এক কোণে লিখে ফেলা হতো, এই দেওয়ালের মালিকানা সিপিএমের। তার পর প্রার্থীর নাম ঘোষণা হলে লাল রঙে লেখা হতো, ‘কাস্তে-হাতুড়ি-তারায় ভোট দিন’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫৮

সে বড় সুখের সময় ছিল! ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার অনেক আগেই দেওয়াল দখল করে ফেলতেন পার্টির ছেলেরা। কালো কালি দিয়ে এক কোণে লিখে ফেলা হতো, এই দেওয়ালের মালিকানা সিপিএমের। তার পর প্রার্থীর নাম ঘোষণা হলে লাল রঙে লেখা হতো, ‘কাস্তে-হাতুড়ি-তারায় ভোট দিন’।

সেই দিনকাল আর নেই। সরকারি দেওয়াল নোংরা করা মানা। নির্বাচন কমিশনের চাপে বাড়ির দেওয়াল বা পাঁচিলে লিখতে গেলে মালিকের লিখিত অনুমতি নিতে হয়। পালাবদলের পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এখন দেওয়াল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে। পোস্টার-ব্যানারের উপরেও নির্বাচন কমিশনের বিধিনিষেধ। সংগঠনের জোর কমে যাওয়ায় সিপিএম সেখানেও প্রতিযোগিতায় পারছে না। এ দিকে কংগ্রেস বা বিজেপি টেলিভিশনে, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঢালাও প্রচার করে চলেছে। সিপিএম নেতৃত্বের নালিশ, বড় দলগুলির মতো অর্থ পার্টির কোষাগারে নেই। তাই তাদের এত বিজ্ঞাপন দেওয়ারও ক্ষমতা নেই। এ দিকে দেওয়াল লিখনের মতো কম খরচে প্রচারের অস্ত্র হাতছাড়া হয়েছে। আর তাই সিপিএমের মতো ‘সর্বহারার দল’ প্রচারে পিছিয়ে পড়ছে।

সিপিএম এখন তাই নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ। সিপিএম তথা বামফ্রন্ট নেতৃত্বের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদের প্রচারের সুযোগ খুব কম। সব দল যাতে সমান প্রচারের সুযোগ পায়, তার ব্যবস্থা করা হোক। দু’দিন আগে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর নেতৃত্বে রাজ্য বামফ্রন্টের নেতারা মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পতের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেখানেও তাঁরা এই দাবি জানিয়েছেন। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির ব্যাখ্যা, “দেওয়াল লিখন, পোস্টার, ব্যানারের মতো কম খরচে প্রচারের উপরে বিধিনিষেধ চাপানো হয়েছে। কিন্তু টেলিভিশন বা সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের উপরে কার্যত কোনও লাগাম নেই।” ইয়েচুরির তাই দাবি, প্রার্থী পিছু প্রচারের খরচ যেমন বেঁধে দেওয়া হয়, দল পিছু নির্বাচনের খরচও বেঁধে দেওয়া হোক।

নির্বাচন কমিশনের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এক জন প্রার্থী লোকসভা কেন্দ্র পিছু ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারবেন। ইয়েচুরির যুক্তি, “যদি মোট ৫৪২ জন প্রার্থীর খরচ ধরা হয়, তা হলে দেখা যাবে বিজেপি ইতিমধ্যেই সেই ঊর্ধ্বসীমা পেরিয়ে গিয়েছে। কারণ বিজেপি-আরএসএস এ বার তাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে তুলে ধরতে অভূতপূর্ব পরিমাণে অর্থ ব্যয় করছে। এত খরচ করেও তারা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। কারণ প্রার্থী পিছু খরচ বেঁধে দেওয়া হলেও একটি রাজনৈতিক দল কত খরচ করতে পারবে, তার ঊর্ধ্বসীমা বলা নেই।

এই যুক্তি অবশ্য অন্য কোনও জাতীয় রাজনৈতিক দলই মেনে নেয়নি। তার ফল? সিপিএম নেতারা বলছেন, কংগ্রেস যখন রাহুল গাঁধীর ছবি দিয়ে ‘হর হাত শক্তি, হর হাত তরক্কি’ বলে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, ‘অবকি বার, মোদী সরকার’ বলে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে বিজেপি, তখন পিছিয়ে পড়েছে বামেদের মতো ‘গরিব’ দলগুলি। ইয়েচুরি বলছেন, “বড় দলগুলি নেতাদের জন্য হেলিকপ্টার, বেসরকারি জেট ভাড়া করতে পারে। সেখানেও কোনও বারণ নেই। দেশের গণতন্ত্র শুধুমাত্র ধনীদের অধিকার হয়ে যাচ্ছে। কমিশনের উচিত, এখনই আইন বদলানো।”

এত দিন সিপিএম এই দাবি তোলেনি কেন? দলীয় সূত্র বলছে, এত দিন পার্টির সংগঠনের জোর ছিল। তাই কংগ্রেস-বিজেপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে ভাবতে হয়নি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানো, সভা-সমিতি করেই সিপিএমের প্রচার হত। এখন সংগঠনের সেই ধার কমেছে। ফলে তৃণমূলের সঙ্গে দেওয়াল লিখনের লড়াইতেও পিছিয়ে পড়েছে দল। বিষয়টি এমন নয় যে, তৃণমূল টেলিভিশন-সংবাদপত্রে ঢালাও বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। কিন্তু তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সিপিএমের চেয়ে অনেক বেশি দেওয়াল লিখনের অনুমতি জোগাড় করে ফেলছেন।

তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদের প্রচারের জায়গা দিচ্ছে না বলে মানতে রাজি নন শাসক দলের নেতারা। তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “ঢালাও বিজ্ঞাপন দেওয়ার মতো অর্থ আমাদেরও নেই। কিন্তু সিপিএম যে ভাবে ফুটবল ম্যাচ শুরুর আগেই রেফারির কাছে যাচ্ছে, তাতে স্পষ্ট ওরা মাঠে নেমে কিছু করতে পারবে না বলে বুঝে গিয়েছে। আসলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এ বার আর সিপিএমের কাউকে ভোট দিয়ে দিল্লির সংসদে পাঠাবেন না। তাই নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানানোর অজুহাতেই ওঁরা দিল্লি সফর করে যাচ্ছেন!”

cpm westbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy