Advertisement
০২ জুন ২০২৪

বাড়ি, সেতুতে ফাটল দক্ষিণ অসমে

প্রাণহানি হয়নি বটে। তবে ভূকম্পনে মণিপুর সীমানা-সংলগ্ন দক্ষিণ অসমে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। জখম হয়েছেন ৫০ জনের বেশি। অনেক বাড়িতে ফাটল ধরেছে। কয়েকটি দালানের দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। ধসে গিয়েছে কয়েকটি মাটির ঘরও। ব্যাহত হয়েছে রেল চলাচল। তবে বিমানের ওঠানামায় কোনও প্রভাব পড়েনি।

ভূকম্পনে কুশিয়ারা নদীর তীর ভেঙেছে করিমগঞ্জ সংলগ্ন বাংলাদেশের জকিগঞ্জে। সোমবার উত্তম মুহরী ও স্বপন রায়ের তোলা ছবি।

ভূকম্পনে কুশিয়ারা নদীর তীর ভেঙেছে করিমগঞ্জ সংলগ্ন বাংলাদেশের জকিগঞ্জে। সোমবার উত্তম মুহরী ও স্বপন রায়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২২
Share: Save:

প্রাণহানি হয়নি বটে। তবে ভূকম্পনে মণিপুর সীমানা-সংলগ্ন দক্ষিণ অসমে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। জখম হয়েছেন ৫০ জনের বেশি। অনেক বাড়িতে ফাটল ধরেছে। কয়েকটি দালানের দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। ধসে গিয়েছে কয়েকটি মাটির ঘরও। ব্যাহত হয়েছে রেল চলাচল। তবে বিমানের ওঠানামায় কোনও প্রভাব পড়েনি।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জনসংযোগ অফিসার নৃপেন্দ্র ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আজ ভোরে মাটির কাঁপুনির সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনগুলিকে বিভিন্ন জায়গায় থামিয়ে দেওয়া হয়। সুড়ঙ্গ, সেতু-সহ পুরো লাইন পরীক্ষার পর ফের ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনগুলি সকাল ৭টা নাগাদ গন্তব্যে রওনা দেয়।

ভূ-কম্পনে ক্ষতি হয়েছে শিলচরের বড় মসজিদ, লক্ষ্মীপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দালানবাড়ি এবং শিলচর সোনাই রোডের একটি হোটেলের। কাছাড় জেলার লক্ষ্মীপুর মহকুমার দুরত্ব ভূকম্পনের উৎপত্তিস্থল থেকে মাত্র ৪৪ কিলোমিটার। ফলে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভূত হয় সেখানে। রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাঙ্কের লক্ষ্মীপুর শাখার তিনতলা বাড়ির সিঁড়ির ক্ষতি হয়। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অক্ষয় সিংহের তিনতলা বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে। তাতে একটি গাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। মণি সিংহের বাড়ির অনেকটা ভেঙে যায়। ক্ষতি হয় পাশের দোকানের। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান এক জন।

লাগাতার কাঁপুনির আতঙ্কে বর্ষা দেব নামে এক কিশোরী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সন্ধে পর্যন্ত সে স্বাভাবিক হতে পারেনি। একই ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন জি সিংহ নামে এক মহিলা। হরিনগরে মাটির ঘরের দেওয়াল ধসে ৩ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে ফরিজুন্নেসা ও মেরাবজন বেগম লস্কর শিলচর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। আসাদ্দুর আলিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফুলেরতলে বরাক সেতুতে কয়েকটি জায়গায় ফাটল ধরা পড়েছে। মহকুমা শাসক টি টি দাওগাগুপো জানিয়েছেন, সমস্ত খবরাখবর নিয়ে তিনি জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। তবে অনেক জায়গায় ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়ে তিনি গিয়ে দেখেন, কিছুই হয়নি।

ভোরের ভূমিকম্পে শিলচর জেলা গ্রন্থাগারের একাংশ ধসে পড়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে মহিলা কলেজ ও কাছাড় কলেজে। বিবেকানন্দ জুনিয়র কলেজেও বেশ ক্ষতি হয়েছে। অম্বিকাপট্টির ওম অ্যাপার্টমেন্টের নীচতলায় কয়েকটি খুঁটি এমন ভাবে ভেঙেছে যে, লোহার রড বেরিয়ে পড়েছে। আবাসিকরা দুশ্চিন্তায়। নির্মাণকাজ পুরো শেষ হয়নি আর্যপট্টির সরোজ অ্যাপার্টমেন্টের। সেখানেও নীচতলায় কয়েক জায়গায় ফাটল ধরা পড়েছে। বিশেষ করে সিঁড়ির তলায় কংক্রিট ভেঙে ইটের পাঁজর বেরিয়ে পড়েছে। রতন বিশ্বাস, তপন দেব-রা নতুন বাড়িতে আসার অপেক্ষায়। ভূমিকম্পের পর অ্যাপার্টমেন্টে ঘুরে তাঁদের মাথায় হাত। টাকা মিটিয়ে দিয়েছেন, তা ফেরানোর সুযোগ নেই। আবার এমন দালানবাড়িতে কী করে থাকবেন, তাও ভেবে পাচ্ছেন না। দাস কলোনি এবং মিশন রোডেও দু’টি বহুতল আবাসনে ফাটল দেখা দিয়েছে।

শিলচরে একটি বহুতলের দেওয়ালে ফাটল।

সোমবার উত্তম মুহরী ও স্বপন রায়ের তোলা ছবি।

দুধপাতিল পঞ্চায়েতের লামারগ্রামে তিনটি মাটির ঘর ধসে পড়েছে। অসহায় অবস্থায় আলফাতুন্নেসা তালুকদার, মানিকউদ্দিন বড়ভুঁইঞা ও মিসকারুদ্দিন বড়ভুঁইঞারা।

পালংঘাট থেকেও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গিয়েছে। কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন এ দিন দুপুরে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে ভূমিকম্প নিয়ে বৈঠক করেন। পুলিশ সুপার রজবীর সিংহও ভূমিকম্প থামতেই পুলিশ
কর্মীদের এলাকাবাসীর খোঁজখবর নিতে নির্দেশ দেন।

ডিমা হাসাও জেলার হাফলং শহরেও ভুমিকম্পে কয়েকটি বাড়িতে ফাটল ধরে। তার চেয়ে বড় কথা, এখনও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে
পারেনি অনেকে।

করিমগঞ্জে রামকৃষ্ণ মিশন থেকে রেডক্রশ যাওয়ার রাস্তায় পাঁচ-সাত জায়গায় ফাটল দেখা গিয়েছে। বিরাট অংশ জুড়ে কুশিয়ারা নদীর তীর ভেঙেছে। তবে সে সব বাংলাদেশের জকিগঞ্জের দিকে। করিমগঞ্জের নদীতীরে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখার জন্য ভিড় ছিল দিনভর। দৌড়ে ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে পা ভাঙেন স্টেশন রোডের টুটু পাল নামে এক মহিলা। বদরপুরে বেশ কিছু বাড়িতেও ফাটল দেখা দিয়েছে।

ভোরের ভূমিকম্পে হাইলাকান্দি জেলায় তিন জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে অনুপ গোস্বামী ও খলিল উদ্দিন বড়ভুঁইঞা হাইলাকান্দি শহরের বাসিন্দা। অন্য জন কাটলিছড়া এলাকার আলেকজান্ডারপুরের রাধা দেব। খলিল উদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য জায়গার মতো এ জেলাতেও দালানবাড়িতে ফাটল ধরার খবর পাওয়া গিয়েছে। লালার মন্দিরা মার্কেটের দ্বিতল ভবনের ছাদে ফাটল ধরেছে। সরসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেওয়ালের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। শহরের রবীন্দ্র সরণির অভিজিৎ শর্মার বাড়ির ফটক এবং দেওয়ালেরও বেশ ক্ষতি হয়েছে।

জেলাশাসক মলয় বরা হাইলাকান্দি-সহ লালা, কাটলিছড়ায় গিয়ে হাসপাতাল এবং থানাগুলিকে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jakigunje Kushiara Earthquake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE