Advertisement
E-Paper

বদলে যাচ্ছে কাস্ত্রোর দেশ, সিপিএম কিন্তু সিপিএমেই

সময় বদলায়। সিপিএম যে বদলায় না, তা সিপিএম নেতারাই প্রমাণ করেন বারবার। ৫০ বছরের গণ্ডি পেরিয়ে কিউবা আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। এ দেশের কমিউনিস্টরা ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’-এর বুলিই বছর বছর আওড়ে যান। বারাক ওবামার ভারত সফরের আগে সিপিএম ফিরল পুরনো রূপে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪০

সময় বদলায়। সিপিএম যে বদলায় না, তা সিপিএম নেতারাই প্রমাণ করেন বারবার। ৫০ বছরের গণ্ডি পেরিয়ে কিউবা আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। এ দেশের কমিউনিস্টরা ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’-এর বুলিই বছর বছর আওড়ে যান।

বারাক ওবামার ভারত সফরের আগে সিপিএম ফিরল পুরনো রূপে।

প্রকাশ কারাটের নেতৃত্বে সিপিএম-সহ চার বাম দল, সঙ্গে দুই নতুন শরিক, সিপিআই (এম-এল) ও এসইউসি মিলে আজ ঘোষণা করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের বিরোধিতায় রাস্তায় নামছেন তাঁরা। ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন ওবামা। ২৪ জানুয়ারি দিল্লি-সহ গোটা দেশে বিক্ষোভ দেখাবেন বামেরা।

কারণ? সিরিয়া, লিবিয়া বা ইরাকে আমেরিকার নাক গলানোকে মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না এ দেশের কমিউনিস্টরা। বামেদের যুক্তি, যে আমেরিকা বিশ্বের বহু দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করছে, সেই দেশের প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির হবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় যায় না।

চার বছর আগেও ওবামা ভারতে এসেছিলেন। সে বার সিপিএমের নেতারা কিছুটা দোটানায় পড়েছিলেন। অভ্যাস বলছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কালো পতাকা দেখাতে হবে। তাঁকে বয়কট করা উচিত। যেমনটা তাঁর পূর্বসূরী বুশকে করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব বলছিল, ওবামা আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। তিনি ইরাকে মার্কিন সেনা অভিযানের নিন্দা করেছেন। পরমাণু অস্ত্র সংবরণের কথা বলেছেন। বুশের সঙ্গে এক শ্রেণিতে ফেলা যায় না তাঁকে। তাই যন্তরমন্তরে সে বার ‘নমো নমো’ করে বিক্ষোভ হয়। সংসদে ওবামার বক্তৃতা বয়কট করেননি বামেরা। তাঁরা দল বেঁধে বক্তৃতা শুনতে গিয়েছিলেন। এই দু’মুখো নীতির ব্যাখ্যা দিতে প্রকাশ কারাটকে দলীয় মুখপত্রে কলম ধরতে হয়েছিল।

সেই দু’মুখো নীতি মেনেই ২০১০-এর ৮ নভেম্বরের সকালে যন্তরমন্তরে বিক্ষোভে হাজির হয়ে, রাতেই ওবামার সম্মানে নৈশভোজেও হাজির হন সীতারাম ইয়েচুরি। ওবামার সঙ্গে হাত মেলান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আবার নৈশভোজেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান, কংগ্রেস কী ভাবে কমিউনিস্টদের মোকাবিলা করছে!

ওবামার সম্মানে এ বারও নৈশভোজ হবে কি না, সেখানে বা তাঁর অন্য কোনও অনুষ্ঠানে সিপিএমের নেতা বা সাংসদরা নিমন্ত্রণ পাবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। নিমন্ত্রণ পেলে কি ফিরিয়ে দেওয়া হবে? ওবামাকে বয়কট করবেন কমিউনিস্টরা? সিপিএমের পলিটব্যুরোর নেতা এস আর পিল্লাই বলেন, “ নিমন্ত্রণ পেলে যাবেন কি না, তা আলোচনা করেই ঠিক হবে।”

তবে সিপিএমের অন্দরেই প্রশ্ন, যেখানে কিউবা আমেরিকার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে, সেখানে ভারতের কমিউনিস্টদের আমেরিকা বিরোধিতা চালিয়ে যাওয়া কতখানি বাস্তবসম্মত?

কিছু দিন আগেই আমেরিকা ও কিউবার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোরা আমেরিকার মদতপুষ্ট স্বৈরাচারী শাসক ফুলজেনিকো বাতিস্তাকে হঠিয়ে কিউবার রাশ হাতে নেন। আমেরিকার সব সম্পত্তি সরকারি ভাবে দখল করা হয়। ১৯৬১ সালে আমেরিকা কিউবার সঙ্গে যাবতীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক ভেঙে দেয়। পুরনো ঝগড়া ভুলে এই ২০১৪-য় রাউল কাস্ত্রো ও ওবামা হাত মিলিয়েছেন। নতুন কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয়েছে। হাভানায় মার্কিন দূতাবাস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওবামা।

কিউবার যেখানে আপত্তি নেই, সেখানে এ কে গোপালন ভবন-আলিমুদ্দিন স্ট্রিট অনড় কেন? সিপিএম নেতা নীলোৎপল বসু বলেন, “আমরা আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ভেঙে দিতে বলছি না। কিন্তু তাদের চাপেই মোদী সরকার বিদেশি লগ্নির দরজা খুলছে। শ্রম আইন বদল হচ্ছে। বিক্ষোভ এই নীতির বিরুদ্ধেও।”

অবশ্য বাম নেতারাই ঘরোয়া ভাবে বলছেন, চার বছর আগের সিপিএম আর এখনকার সিপিএমের মধ্যে বেশ ফারাক। জাতীয় রাজনীতিতে ক্রমেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে তারা। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রকাশ কারাট পুরনো বাম দলগুলির পাশাপাশি সিপিআই (এম-এল) ও এসইউসি-র হাত ধরেছেন। এই দু’টি দল আরও কট্টরপন্থী। কাজেই ২৪ জানুয়ারি ‘জোরালো’ বিক্ষোভের প্রস্তুতি হচ্ছে।

তবে অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রাখার এই চেষ্টায় প্রকাশ কারাটরা আদৌ সফল হবেন নাকি আবার নিজেদের হাস্যকর করে তুলবেন, সে প্রশ্ন বাম শিবিরেও রয়ে গিয়েছে।

obama new delhi cpm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy