মাওবাদী হামলা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী ব্যবহার করার খসড়া নীতি তৈরি করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তবে সেনা নামানো নিয়ে সিদ্ধান্তের ভার রাজ্যের উপরে চাপাতে চায় তারা।
কেন্দ্রের নতুন খসড়া নীতি অনুযায়ী, মাওবাদী দমনে প্রয়োজনে সেনার সাহায্য চাইতে পারে রাজ্য। সে ক্ষেত্রে সেনা অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হবে। খসড়া নীতিটি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দশটি মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যের মতামত জানতে চেয়ে আগামী সপ্তাহেই চিঠি পাঠাবে কেন্দ্র।
ছত্তীসগঢ় সরকার ইউপিএ আমল থেকেই সেনাবাহিনী ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করে আসছে। সরকারি সূত্রে খবর, সেনা ব্যবহারের পক্ষে ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। কিন্তু আপত্তি আসে তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির কাছ থেকে। মাওবাদীদের মোকাবিলায় সেনা ব্যবহারের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন তিনি। ফলে ছত্তীসগঢ়কে বহু বার সেনা ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করেও নিরাশ হতে হয়। কিন্তু সেই ছবিটি বদলাতে চায় মোদী সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র বলছে, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পাকিস্তান বা চিনের চেয়েও বড় বিপদ হল মাওবাদীরা। বর্তমানে মাওবাদী মোকাবিলায় রাজ্য পুলিশ ছাড়াও সিআরপিএফ, এসএসবি-র মতো আধাসেনাকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সশস্ত্র মাওবাদীদের মোকাবিলা করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছে আধাসেনা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসাররা জানিয়েছেন, এ বার তাই প্রয়োজনে সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু কখন সেনা নামানো হবে সেই সিদ্ধান্তের ভার নিজেদের ঘাড়ে রাখতে চায়নি তারা। তাই খসড়া নীতিতে বলা হয়েছে, মাওবাদী মোকাবিলায় রাজ্যগুলি চাইলে যে কোনও ধরনের বাহিনীকে ডাকতে পারে। মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, যার মধ্যে রয়েছে সেনাও।
এ ছাড়া ও একাধিক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে নতুন নীতিতে। স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হয়েছে। জেলাশাসকের দফতর থেকে থানা-প্রতিটি পর্যায়ে আরও বেশি করে জনসংযোগ বাড়াতে বলা হয়েছে। সমস্ত উন্নয়নমুখী প্রকল্প রূপায়ণে থানাকে আরও বেশি করে ব্যবহার করার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন নীতিতে জোর দেওয়া হয়েছে আদিবাসী সমাজের অধিকার ও চাওয়া-পাওয়ার দিকে। আদিবাসী এলাকায় যে জওয়ানদের নিয়োগ করা হচ্ছে তাঁদের স্থানীয় জনজাতির রীতিনীতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিশদ ওয়াকিবহাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এলাকা উন্নয়নের সঙ্গেই আদিবাসী এলাকাগুলিতে আরও বেশি করে রোজগারের রাস্তা খুলে দিতে চায় কেন্দ্র। আদিবাসী যুবকদের বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়া ছাড়াও আধাসেনা ও রাজ্য পুলিশে যাতে স্থানীয় যুবকেরা আরও বেশি করে যোগ দিতে পারেন সে জন্য প্রয়োজনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়ম শিথিল করার পরামর্শ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, সেনা ব্যবহার করে মাওবাদী সমস্যা সাময়িক ভাবে মেটানো যাবে। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য চিরস্থায়ী সমাধান। তাই স্থানীয় মানুষকে আরও বেশি করে সমাজের মূলস্রোতে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের রোজগার ও চাকরির সুযোগ করে দেওয়াটাও নতুন নীতির অন্যতম অঙ্গ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy