এক দিকে ওমর আবদুল্লা, অন্য দিকে মুফতি পরিবার। জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গঠন নিয়ে আঞ্চলিক দুই দলের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনাতেই কড়া অবস্থান নিচ্ছে বিজেপি। এখন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব শ্রীনগরের মসনদে তাদেরই মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চান তা দলের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
আজ জম্মুতে গিয়ে অরুণ জেটলি দলের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করে দর কষাকষির কৌশল স্থির করেছেন। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি যুক্তি দিয়েছেন জেটলি। প্রথম যুক্তি, বিজেপির চেয়ে মুফতি পরিবারের নেতৃত্বাধীন পিডিপি সামান্য কিছু আসন বেশি পেলেও জম্মু-কাশ্মীরে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে বিজেপি। তাতে স্পষ্ট, বিজেপি রাজ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। তাই মুখ্যমন্ত্রীও বিজেপিরই হওয়া উচিত। দ্বিতীয় যুক্তি, রাজ্যের ৮৭টি আসনের মধ্যে ৭৬টি আসনে লড়ে বিজেপি ২৫টি আসন পেয়েছে। পিডিপি আরও ১১ টি আসনে বেশি ফলে বিজেপির সাফল্যের হার অনেক বেশি। তৃতীয় যুক্তি, রাজ্যের একটি এলাকা, অর্থাৎ জম্মুতে বিজেপির আধিপত্য রয়েছে। উপত্যকায় পিডিপি সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেও সেখানেও তাদের একাধিপত্য নেই। কারণ, সেখানে ওমর আবদুল্লার নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল কনফারেন্সও অনেকগুলি আসন পেয়েছে। বিজেপি উপত্যকায় খাতা খোলেনি। জেটলির যুক্তি, জম্মু থেকেই বিজেপির কোনও নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করা উচিত।
বিজেপি সূত্রের খবর, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপি-দুই দলের সঙ্গেই জোট করার সুবিধে ও অসুবিধে রয়েছে। ওমরের আসন কম থাকায় সরকারে ‘বড় ভাই’-এর ভূমিকায় থাকবে বিজেপি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর পদ পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকবে। তার বদলে ওমরকে রাজ্যসভা থেকে জিতিয়ে কেন্দ্রে মন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, গতকাল রাতে ওমর আবদুল্লার সঙ্গে দিল্লিতে অমিত শাহ, অরুণ জেটলি ও জম্মু-কাশ্মীরের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা রাম মাধবের সঙ্গে দফায় দফায় গোপন বৈঠক হয়। বিজেপি সূত্রে খবর, ওমর দিল্লি এসেছিলেন অসুস্থ বাবা-মা-কে দেখতে লন্ডনে পাড়ি দেবেন বলে। কিন্তু বিজেপির প্রস্তাব পেয়ে তিনি আজ দুপুরে শ্রীনগরে চলে যান দলের বাকি নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে। ওমর অবশ্য টুইটারে জানিয়েছেন, বিজেপির সঙ্গে আলোচনা চলছে না। তিনি লন্ডন সফর পিছিয়েও দেননি। তাঁর কথায়, “কংগ্রেস, বিজেপি, পিডিপি-র কেউ সরকার গঠন করলে ভাল হয়। গুজব উড়িয়ে দেওয়াটাও কাজ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
বিজেপির একাংশের মতে, এ বার ওমর-বিরোধী ভোট দিয়েছেন রাজ্যের মানুষ। তাই হেরো দলের সঙ্গে হাত মেলানোর আগে ভাবা উচিত। তার উপর ওমর, বিজেপি, ছোট দল ও নির্দলদের নিয়ে সরকার গড়লে কোনওক্রমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যাবে। সে sক্ষত্রে সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। পিডিপি-র সঙ্গে আলোচনার পথও খোলা রাখছে বিজেপি। আজ রাতে শ্রীনগরে পিডিপি নেতা মুজফ্ফর হুসেন বেগের সঙ্গে দু’দফা বৈঠক করেছেন রাম মাধব। পিডিপি-র আসন অনেক বেশি। তাই তারা যে মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাইবে তা জানে বিজেপি। তিন-তিন বছর করে ঘুরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী করার ফর্মূলা স্থির হলেও প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী হতে চাইবেন মুফতি মহম্মদ সইদ। তাঁকে সেই সুযোগ দিতে রাজি নয় বিজেপি। তাই প্রথম থেকেই বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কাশ্মীর উপত্যকায় পিডিপি ও ন্যাশনাল কনফারেন্স-উভয় দলেরই প্রভাব রয়েছে। কিন্তু জম্মুতে একাধিপত্য রয়েছে বিজেপি-র। রাজ্যের একটি অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও রাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে এখন শ্রীনগরে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীই হওয়া উচিত।
এই পরিস্থিতিতে ফের পিডিপিকে সমর্থনের কথা বলেছে কংগ্রেস। অবশ্য পিডিপি তাতে সাড়া দেয়নি।
ঝিলামের তীরে আরও নাটক দেখা যাবে বলেই মনে করছেন রাজনীতিকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy