Advertisement
১০ জুন ২০২৪

মুতালিককে জলদি বিদায় মোদীর হুকুমেই

নতুন-বিতর্ক বাড়াতে চাননি নরেন্দ্র মোদী। তাই তাঁর নির্দেশেই তড়িঘড়ি কাল বিদেয় করা হয়েছে প্রমোদ মুতালিককে। শ্রীরাম সেনে থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই! এমনিতেই দলের প্রবীণ নেতাদের পছন্দের আসনে টিকিট না দেওয়া বা আদৌ না দেওয়া নিয়ে দলের ভিতরে- বাইরে জোর বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০৩:২০
Share: Save:

নতুন-বিতর্ক বাড়াতে চাননি নরেন্দ্র মোদী। তাই তাঁর নির্দেশেই তড়িঘড়ি কাল বিদেয় করা হয়েছে প্রমোদ মুতালিককে। শ্রীরাম সেনে থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই!

এমনিতেই দলের প্রবীণ নেতাদের পছন্দের আসনে টিকিট না দেওয়া বা আদৌ না দেওয়া নিয়ে দলের ভিতরে- বাইরে জোর বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যশোবন্ত সিংহের মতো প্রবীণ নেতা তখন তোপ দাগছেন ‘আসলি বিজেপি, নকলি বিজেপি’ বলে, হুমকি দিচ্ছেন নির্দল হিসেবে বাড়মের থেকে দাঁড়ানোর। এর মধ্যেই গত কাল খবর ছড়ায়, পাঁচ বছর আগে ম্যাঙ্গালোরের পানশালায় তরুণ-তরুণীদের উপরে হামলায় জড়িত মুতালিককে দলে নিয়েছে বিজেপি। অনন্ত কুমারের ঘনিষ্ঠ নেতা প্রহ্লাদ জোশীর উদ্যোগে হয়েছে এই আনুষ্ঠানিক যোগদান। জাতীয় স্তরে শোরগোল শুরু হয়। ঘোর অস্বস্তিতে পড়েন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রকাশ্যেই আপত্তি তোলেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্কর। এর পরই রাজনাথ সিংহ কথা বলেন কর্নাটকের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে। তত ক্ষণে যোগগুরু রামদেবের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য দিল্লি পৌঁছে যান মোদী। বিজেপি ও সঙ্ঘের যোগসূত্রকারী নেতা রামলাল কথা বলেন মোদীর সঙ্গে। মোদী নির্দেশ দেন, অবিলম্বে মুতালিকের সদস্যপদ খারিজ করতে হবে। রাজনাথ সে কথা জানিয়ে দেন কর্নাটকের রাজ্য নেতাদের।

প্রশ্ন হল, মুতালিককে দলে নেওয়ার কথা কী কেন্দ্রীয় নেতারা কিছুই জানতেন না? রাজনাথ দাবি করছেন, মুতালিককে নেওয়ার বিষয়টি একেবারেই রাজ্য স্তরে নেওয়া হয়েছে। এর আগে দলে যাঁরা যাঁরা সামিল হয়েছেন, রাজনাথ নিজে উপস্থিত থেকে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছেন। কর্নাটকেই ইয়েদুরাপ্পাকে সামিল করার সময় কেন্দ্রীয় স্তরে সকলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু মুতালিকের প্রভাব রয়েছে মুষ্টিমেয় কয়েকটি আসনে। তাই রাজ্য নেতারাই তাঁদের বিবেচনা মতো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

শিবসেনা ও আরএসএসের প্রাক্তন সদস্য মুতালিক প্রথমে এটাকে কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে আজ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “তাঁর দলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি আরএসএসের সম্মতিতে হয়েছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই পদক্ষেপ করে ভুল বার্তা দিলেন। কর্নাটকের রাজ্য বিজেপি নেতাদেরই এখন এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।” পরে অবশ্য ভেঙে পড়ে মুতালিক বলেন, আমি বরাবর স্বচ্ছ জীবন কাটিয়ে এসেছি। সম্পত্তি বানাইনি। (সংগঠনের কাজে) বাবার অন্ত্যেষ্টিতে থাকতে পারিনি, দেখতে পারিনি অসুস্থ মাকে। জানি না আমার সঙ্গেই কেন এমনটা করা হল।”

বিজেপিতে সামিল হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আরএসএসের সম্মতির কথা বললেও বিষয়টি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গোচরে থাকার ব্যাপারে কিছু বলেননি মুতালিক। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে বিজেপির শীর্ষ নেতারা। অরুণ জেটলি বলেন, “কর্নাটকের রাজ্য নেতাদের বোঝা উচিত, দেশ অনেক বদলে গিয়েছে।”

মুতালিককে দলে নেওয়ার পক্ষে রাজ্য বিজেপি নেতাদের যুক্তি ছিল, কর্নাটকের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে প্রভাব রয়েছে শ্রীরাম সেনের। তারা প্রার্থীও দিয়ে রেখেছে। সেই প্রার্থীরা যদি জিততে না-ও পারেন, নিশ্চিত ভাবেই তাঁরা বিজেপির ভোট কাটবেন। এই অবস্থায় মুতালিকের সঙ্গে আলোচনায় বসেন কর্নাটকের বিজেপি নেতারা। প্রার্থী প্রত্যাহার করার আর্জি জানান। কিন্তু মুতালিক জানান, তাঁকে বিজেপিতে নিলে প্রার্থী প্রত্যাহার করতে পারেন। তার পরেই স্থির হয়, তাঁকে বিজেপিতে সামিল করা হবে। কিন্তু কাল বিতর্ক হওয়ার পর মোদীর নির্দেশের কথা জানিয়ে দেন রাজনাথ। রাজ্য নেতারা তা-ও ৩-৪ দিন অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু বিজেপি সভাপতি বলেন, “গোটা সংবাদমাধ্যম ও বিরোধীরা বিজেপিকে যে ভাবে ছেঁকে ধরেছে, তাতে আর দু’-তিন ঘন্টাও ঝুঁকি নেওয়া চলবে না।” এই অবস্থায় রাজ্য নেতারা বলেন, অন্তত মনোনয়ন পেশ করার দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। কিন্তু সে প্রস্তাবও খারিজ করে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

loksabha election bjp mutalik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE