ব্রিগেডের সভায় কারও নাম না করে বলেছিলেন, দাঙ্গার সরকার চাই না। এ বারে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে জোট সম্ভাবনার প্রশ্ন সরাসরি খারিজ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মোদীবিহীন বিজেপিকে সমর্থন করবেন কি না, এ প্রসঙ্গে সরাসরি উত্তর দিলেন না তৃণমূল নেত্রী।
আজ একটি খবরের চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মমতাকে প্রশ্ন করা হয়, তাঁর সমস্যা কাকে নিয়ে? মোদী, বিজেপি, নাকি মোদী-বিজেপি দু’পক্ষকে নিয়েই? প্রথমে এর সরাসরি জবাব এড়িয়ে যান মমতা। পরে আবার এই প্রসঙ্গ উঠলে তিনি স্পষ্ট জানান, “আমি বলেছি, আমরা নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যেতে পারব না। এই অধ্যায় শেষ।” কিন্তু মোদীবিহীন বিজেপিকে সমর্থন করবেন কি, এর উত্তরে হ্যাঁ বা না, কোনওটাই বলেননি তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা পরিচিত, তাঁরা বলছেন, ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে মমতার পক্ষে মোদীকে সমর্থনের কথা বলা সম্ভব নয়। এই রাজ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় থেকে সেই ভোট এখনও বেশির ভাগই তৃণমূলের সঙ্গে। কিন্তু এ বারের লোকসভা ভোটে বামেরা অনেক বেশি সংখ্যালঘুকে প্রার্থী করেছেন। ফলে ওই ভোটে ভাগ বসাতে লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। এমন অবস্থায় মোদীর সঙ্গ এড়িয়ে চলাটাই মমতার পক্ষে লাভের।
সেই বার্তা দিতেই ব্রিগেড থেকে মমতা বলেছিলেন, দাঙ্গার সরকার চাই না, দাঙ্গার মুখ চাই না। কিন্তু সেখানে সরাসরি মোদীর নাম করেননি। এর পরে মোদী ব্রিগেডে এসে তিন লাড্ডুর তত্ত্ব দেন। সেখানে রাজ্যে মমতা, কেন্দ্রে তিনি এবং ‘সকলের উপরে’ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কথা বলেন। এর পরেই রাজ্যে মমতা-বিরোধীরা আক্রমণ শানাতে শুরু করেন এই বলে যে, মোদী বার্তা দিয়ে গেলেন। তাঁদের কথায়, মমতাও তো সরাসরি মোদী প্রসঙ্গে কিছু বলেননি। দুই ঘটনাকে এক করে বিরোধীদের বক্তব্য, এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, তলে তলে দু’পক্ষই দরজা খুলে রেখেছে।
এই অবস্থায় এ দিন টিভি সাক্ষাৎকারে সরাসরি মোদী প্রসঙ্গ ওঠে। মমতাও তার সরাসরি মোকাবিলা করে জানিয়ে দেন, মোদী কোনও ভাবেই নয়। তিন লাড্ডুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মোদী এ সব বলে তৃণমূলকে শুধু রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছেন। মোদীর সেই ইচ্ছে যে সফল হবে না, তা বোঝাতে তিনি এর পরে বলেন, “উনি (মোদী) যদি পশ্চিমবঙ্গে আসতে পারেন, আমরাও তবে আমদাবাদে যেতে পারি।” বস্তুত, অণ্ণা হজারের সঙ্গে তিনি গুজরাতে সভা করবেন বলেও খবর। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে গুজরাত সমতা পার্টির প্রধান প্রবীণসিন জাডেজা জানিয়েছেন, সম্ভবত ২০ মার্চ সেই রাজ্যে সভা করতে যাচ্ছেন অণ্ণা-মমতা।
তাঁদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী সম্পর্কে মমতার এই স্পষ্ট জবাব শোনার পরে বিজেপি কী বলছে? তাঁরা এই সাক্ষাৎকারের দিকে নজর রেখেছিলেন। পরে দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, মমতার থেকে এই বক্তব্য আদৌ অপ্রত্যাশিত নয়। “আমরা মমতার অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। লোকসভা নির্বাচনের পরেও মমতাকে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন লড়তে হবে। যেখানে সংখ্যালঘু ভোটের কথা তাঁকে মাথায় রাখতে হবে। মোদীর নামে তাই তিনি আপত্তি জানাতে পারেন।” একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, মমতা যদি লোকসভা নির্বাচনে একটি বড়সড় শক্তি হয়ে ওঠেন, তা হলে বিজেপির পক্ষে তাঁকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই ভোটের পর প্রয়োজন হলে তিনি যদি সরাসরি সমর্থন করতে না-ও পারেন, তা হলেও দেখতে হবে অন্য কোনও পন্থায় বাইরে থেকে অথবা বিষয়ভিত্তিক সমর্থন বিজেপি পেতে পারে কি না। এমনও হতে পারে, তখন তিনি যেমন সমর্থন করলেন না, তেমনই সরাসরি মোদীর বিরোধিতাও করলেন না।
প্রকাশ্যে অবশ্য এই নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাইছেন না বিজেপি নেতারা। এ দিন কলকাতায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বেঙ্কাইয়া নায়ডু বরং জানান, মমতার সমর্থন দরকার হবে না। তাঁরা একাই সরকার গড়তে পারবেন। তবে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মুখও খোলেননি তিনি। অনেকে মনে করছেন, যে ভাবে মোদী লাড্ডুর কথা বলেছেন, যে ভাবে ওই একই ব্রিগেড থেকে রাজনাথ সিংহ জানিয়েছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে সুদ-আসল মকুবের কথা ভেবে দেখবেন তাঁরা, সে ভাবেই রং না দেখে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করার কথা বলে আসলে তৃণমূলকে বার্তাই দিয়ে গেলেন তিনি।
রাজনাথ সিংহ অবশ্য এ দিনও বলেছেন, “মমতা এক সময় এনডিএ-তে ছিলেন। পরে যদি আসেন, তা হলে খুশিই হব। তবে এখন ওঁর বাধ্যবাধকতা আমরা বুঝি। তাই আমরা আমাদের মতো প্রচার করছি, আর উনি ওঁর মতো। তবে ভোটের পরে যদি উনি সমর্থন করেন, তা হলে আমরা না করব কেন!”
ভবিষ্যৎ অবশ্য পরের কথা। তাই নিজেরা না বললেও রাহুল সিংহদের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে বাধা দিচ্ছেন না বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, বাকিটা সময়ই বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy