এডমন্ড হিলারির নৌকা। পড়ে ছিল মানসের জঙ্গলে। ছবি: অভিজিৎ নেওগ।
ঝোপঝাড়ে ঢেকে থাকা জীর্ণ নৌকার গায়ে জড়িয়ে ছিল ইতিহাস। মানসের বনকর্মীরা তা জানতেনই না। জঙ্গলে ঘুরতে আসা এক পর্যটকের চোখে আচমকাই পড়ে যায় এডমন্ড হিলারির গঙ্গা অভিযানের সেই ‘হ্যামিলটন জেট বোট’। বাঁশবাড়ি রেঞ্জ থেকে উদ্ধার হওয়া হিলারির নৌকাটি এখন সংরক্ষণ করেছে জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ।
নৌকার ইতিহাস কী? মানস কর্তৃপক্ষের সূত্র জানিয়েছে, মাউন্ট এভারেস্ট, দক্ষিণ মেরু জয়ের কয়েক দশক পর, ১৯৭৭ সালে গঙ্গাসাগর থেকে গোমুখ পর্যন্ত নৌ-অভিযান করেন হিলারি। কঠিন নদীপথে যাতায়াতের জন্য তিনি নিউজিল্যান্ড থেকে ১৬ ফুট লম্বা, আড়াইশো হর্স পাওয়ারের ভি-৮ ইঞ্জিনের তিনটি হ্যামিলটন জেট বোট নিয়ে আসেন। অভিযানে সামিল ছিলেন হিলারির ছেলে পিটার, হ্যামিলটন জেটের স্রষ্টা বিল হ্যামিলটনের ছেলে জন, গ্রেমে ডিঙ্গল এবং ক্যাপ্টেন এম এস কোহলির নেতৃত্বে ছয় ভারতীয়। গঙ্গাসাগর থেকে রওনা দেন সকলে। সুন্দরবনে দেখেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। কলকাতায় অভিযাত্রীদের গণ-সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। বেনারস-সহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছ্বাসে ভেসেছিলেন হিলারিরা। এ ভাবে পাড়ি দেন দেড় হাজার মাইল। ১৭৭৯ সালে প্রকাশিত হিলারির বই ‘ফ্রম দ্য ওসান টু দ্য স্কাই’-এ ওই অভিযানের গল্প রয়েছে। তা নিয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্রও।
‘ভারত-বান্ধব’ হিলারি অভিযানের শেষে নৌকাগুলি এ দেশের অরণ্য সংরক্ষণে দান করার সিদ্ধান্ত নেন। একটি নৌকা পেয়েছিল মানসও।
ছোটবেলায় অনেক বার মানসে ঘুরতে যেতেন গুয়াহাটিবাসী চিকিৎসক অভিজিৎ নেওগ। তাঁর বাবা দুর্গাপ্রসাদ নেওগ ছিলেন বনকর্তা। অভিজিৎবাবু বলেন, “বাবার সঙ্গে মানসে গিয়ে ওই নৌকায় চড়েছি। অল্প জলেও সেটির দুরন্ত গতি ছিল।” সম্প্রতি ফের ওই জাতীয় উদ্যানে ঘুরতে গিয়ে বাঁশবাড়ি রেঞ্জ অফিসের কাছে ঝোপের মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় হিলারির নৌকাটিকে পড়ে থাকতে দেখেন অভিজিৎবাবু। ঐতিহাসিক নৌকার এমন দশা দেখে তিনি উদ্যান অধিকর্তা অনিন্দ্য স্বরগোয়ারির দ্বারস্থ হন। অনিন্দ্যবাবু জানান, অগভীর জলেও ৯০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে সক্ষম ছিল হ্যামিলটন জেট। কিন্তু বিদেশি প্রযুক্তিতে তৈরি ওই জেটের ইঞ্জিন এখানে মেরামত করার উপায় ছিল না। এক সময় সেটি খারাপ হয়ে যায়। বনকর্মী ও কর্তাদের স্মৃতি থেকে ক্রমে মুছে গিয়েছিল নৌকার কথা। অভিজিৎবাবুর কাছে খবর পেয়েই সেটি রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ দেন স্বরগোয়ারি। তা-ই ফের মানসে স্বমহিমায় ফিরল হিলারির নৌকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy