Advertisement
E-Paper

মন্ত্রী তুলসী প্রথম দিনেই পেলেন খোঁচা

‘মন্ত্রী ভি কভি বহু থি!’ ছোট পর্দায় তুলসী হয়ে সংসার সামলাতেন। এখন সামলাবেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। সেই ৩৮ বছরের স্মৃতি জুবিন ইরানিই হলেন নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। যার কাঁধে প্রধানমন্ত্রী এমন গুরুদায়িত্ব দেওয়ায় বিস্মিত অনেকেই। বিরোধী শিবির থেকে উড়ে এসেছে স্মৃতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কটাক্ষও। স্মৃতি অবশ্য কাজের প্রথম দিনেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি বদ্ধপরিকর।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৪ ০২:৩৭
মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্মৃতি ইরানি। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্মৃতি ইরানি। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

‘মন্ত্রী ভি কভি বহু থি!’

ছোট পর্দায় তুলসী হয়ে সংসার সামলাতেন। এখন সামলাবেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। সেই ৩৮ বছরের স্মৃতি জুবিন ইরানিই হলেন নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। যার কাঁধে প্রধানমন্ত্রী এমন গুরুদায়িত্ব দেওয়ায় বিস্মিত অনেকেই। বিরোধী শিবির থেকে উড়ে এসেছে স্মৃতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কটাক্ষও। স্মৃতি অবশ্য কাজের প্রথম দিনেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি বদ্ধপরিকর।

বাবা পঞ্জাবি, মা বঙ্গললনা। জন্ম থেকেই বড় হয়েছেন যৌথ সংস্কৃতিতে। ঝরঝরে বাংলা বলেন স্মৃতি। বিয়ে পার্সি পরিবারে। বাল্যবন্ধু জুবিন ইরানিই পরে তাঁর জীবনসঙ্গী। বছর চোদ্দো আগে একতা কপূর অ্যান্ড কোম্পানির একটি সিরিয়াল তাঁকে কার্যত গোটা দেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিল। সেই সিরিয়াল পাট গুটোলেও রেখে গিয়েছে চিরস্থায়ী লব্জ ‘সাস-বহু’।

কিন্তু জীবনের প্রথম বড় স্টেশনটা তারও আগে। সালটা ১৯৯৮। মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন দিল্লির ছিপছিপে এক তরুণী। সে যাত্রায় জয়ী হতে পারেননি, কিন্তু গ্ল্যামার দুনিয়ার স্বাদ পেয়ে পাড়ি জমান সোজা মুম্বই। তিনিই আজকের স্মৃতি ইরানি। মুম্বইয়ে খরচ চালাতে যিনি চাকরি করতেন একটি বহুজাতিক ফাস্ট ফুড চেনের দোকানে। ক্রমশ টুকটাক কাজ শুরু করেন টিভি সিরিয়ালে। প্রথম দিকে সে ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। কিন্তু ‘কিঁউ কি সাস ভি কভি বহু থি’-র ‘তুলসী’ চরিত্রে অভিনয়ের পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি স্মৃতিকে। সিনেমায় হাতেগোনা কাজের মধ্যে একটি বাংলা ছবিও রয়েছে ‘অমৃতা’।

২০০৩ সালে বিজেপিতে যোগ দেন স্মৃতি। পরের বছর লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করা হয় দিল্লির চাঁদনি চক থেকে কপিল সিব্বলের বিরুদ্ধে। হেরে যান স্মৃতি। কিন্তু কাজের প্রতি নিষ্ঠার জোরে বিজেপির সর্বভারতীয় মহিলা মোর্চায় বড় দায়িত্ব পান। ২০১০ সালে মহিলা মোর্চার সভাপতি হন স্মৃতি। পরের বছরই গুজরাত থেকে রাজ্যসভার সাংসদ। বিজেপি সূত্রের খবর, স্মৃতির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতেই এ বারের নির্বাচনে মোক্ষম তাস খেলেছিল বিজেপি। খাস অমেঠিতে রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয় তাঁকে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের কাছে দলের মহিলা মুখ হিসেবেও ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে ওঠেন স্মৃতি। শেষ পর্যন্ত জিততে না পারলেও স্মৃতির ধাক্কায় জয়ের ব্যবধান অনেকটাই কমে যায় কংগ্রেস সহ-সভাপতির।

তাই হার সত্ত্বেও টিম মোদীর অন্যতম সদস্য হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্মৃতির জায়গা পাকা বলেই মনে করছিল বিজেপি শিবিরের একাংশ। বাস্তবে হয়েছেও তা-ই। মন্ত্রিসভার গড় বয়স যেখানে ৫৭, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক পেয়েছেন ৩৮ বছরের স্মৃতি। ঘটনাচক্রে, প্রথম বার লোকসভা ভোটে লড়েছিলেন যে কপিল সিব্বলের বিরুদ্ধে, তিনিও একটা সময়ে এই মন্ত্রকেরই দায়িত্বে ছিলেন। আজ দিনভর অপেক্ষার পর প্রায় সাড়ে চারটে নাগাদ শাস্ত্রী ভবনে নিজের মন্ত্রকে এসে দায়িত্ব বুঝে নেন স্মৃতি।

কেমন লাগছে?

বাংলাতেই স্মৃতি বললেন, “খুব ভাল। সামনে অনেক কাজ রয়েছে।” গত পাঁচ বছরে অনেক ঝড়ঝাপ্টা গিয়েছে এই মন্ত্রকের উপর দিয়ে। মন্ত্রী বদল তো হয়েইছে। সিব্বল প্রথমে ঝোড়ো সংস্কারের পথে হাঁটলেও পল্লম রাজু আসার পরে সেই গতি কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে। দুই মন্ত্রীর মধ্যে নীতিগত পার্থক্য থাকায় সংসদের দুই কক্ষে আটকে যায় একাধিক বিলও। সে বিষয়ে স্মৃতি বলেন, “জমে থাকা সমস্ত বিল নিয়ে মন্ত্রকের অফিসারদের সঙ্গে খুব দ্রুত আলোচনা শুরু করব। আমরা আশা করছি, দ্রুত বিলগুলি পাশ করাতে পারব।” দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে প্রতিটি রাজ্যে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। আজ স্মৃতি জানান, সেই প্রতিশ্রুতি পালনে তাঁর মন্ত্রক বদ্ধপরিকর। এ ছাড়া হিমালয় নিয়ে গবেষণার জন্যও একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রিত্বের প্রথম দিনে বিতর্কের খোঁচাও অবশ্য রইল। স্মৃতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আজ কটাক্ষ করতে ছাড়েননি কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের নেতা অজয় মাকেন টুইট করেন, “কেমন মন্ত্রিসভা সাজিয়েছেন মোদী? মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী (যাঁর কাজ শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় দেখা) নিজে স্নাতকও নন।” কংগ্রেসের অভিযোগ, স্মৃতিকে সামনে রেখে মোদীই মন্ত্রক চালাবেন। বিজেপির তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই ধরনের কথা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। স্মৃতি ইরানি সংসদে দাঁড়িয়ে ইংরেজি এবং হিন্দিতে কথা বলতে পারেন। মোদী তাঁর যোগ্যতার কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

সিরিয়ালে বাড়ির আদর্শ বৌ ছিলেন। পরিবারের সকলকে নিয়ে চলার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তাঁর। সেই ক্ষমতা নিয়েই কি মন্ত্রক সামলাবেন? সবাইকে নিয়ে চলতে পারবেন ‘তুলসী’ স্মৃতি ইরানি? উত্তর দেবে সময়ই।

smriti irani human resource ministry
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy