Advertisement
০২ মে ২০২৪

যশরাজের জাদুতে আজ প্রাণে ফিরবে দেবভূমি

মঞ্চ তৈরি। পণ্ডিত যশরাজের ভঁয়রোর সুরে রবিবার চোখ মেলবে বরফে ঢাকা কেদারনাথের ঘাঁটি। বড় দুঃসহ একটা বছর পার করে ফের প্রাণে ফিরবে দেবভূমিও। কাড়া-নাকাড়া, কাঁসর-ঘণ্টার শব্দের মধ্যে ধীরে ধীরে দুয়ার খুলবে মন্দিরের। ফের যাত্রা হচ্ছে শুরু। উখীমঠ-কুণ্ড-গুপ্তকাশী জুড়ে তাই উৎসাহ তুঙ্গে।

চামোলির রাস্তায় বরফ পরিষ্কারের কাজে জওয়ানরা। ছবি: পিটিআই।

চামোলির রাস্তায় বরফ পরিষ্কারের কাজে জওয়ানরা। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

মঞ্চ তৈরি। পণ্ডিত যশরাজের ভঁয়রোর সুরে রবিবার চোখ মেলবে বরফে ঢাকা কেদারনাথের ঘাঁটি। বড় দুঃসহ একটা বছর পার করে ফের প্রাণে ফিরবে দেবভূমিও। কাড়া-নাকাড়া, কাঁসর-ঘণ্টার শব্দের মধ্যে ধীরে ধীরে দুয়ার খুলবে মন্দিরের। ফের যাত্রা হচ্ছে শুরু। উখীমঠ-কুণ্ড-গুপ্তকাশী জুড়ে তাই উৎসাহ তুঙ্গে। গত জুনের ভয়াবহ হড়পা বাণ, তাতে কার্যত মুছে যাওয়া গরুড় চটি, রামওয়াড়া, গৌরীকুণ্ডের ভযাবহ স্মৃতি পাশে সরিয়ে রেখে চলো কেদার।

রবিবার কেদারনাথের মন্দির খুলছে, সোমবার বদ্রীনাথের। এর আগে শুক্রবার খুলেছে গঙ্গোত্রী, শনিবার যমুনোত্রী মন্দির। অক্ষয় তৃতীয়া পার হলে তো ফি বছরই এ ভাবে একের পর এক খোলে চার ধামের চার মন্দির। কিন্তু এ বার কেন এত তোড়জোড়, কেন এত বিজ্ঞাপন? আসলে সব কিছুই সেই গত জুনের ওই ভয়ানক ঘটনাকে ভুলিয়ে স্বাভাবিক জীবন-ছন্দে ফেরার সরকারি প্রয়াস। সরকারের তো প্রয়াসের অন্ত নেই। কিন্তু দেবভূমির বাসিন্দা সেই সব সাধারণ মানুষ, যাঁরা অজস্র পরিজনকে হারিয়েছেন? শুরুতেই যাত্রাভঙ্গ হওয়ায় জীবিকা হারিয়ে দিন গুজরান করেছেন অপ্রতুল সরকারি ডোলের ভরসায়? এ বার যাত্রার সাফল্য নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান তাঁরা, কিন্তু তবু আশায় বুক বাঁধছেন। শুক্রবার পর্যন্ত ধন্দে থেকেও শনিবার তাঁরা রওনা হয়েছেন কেদারের দিকে। যদি যাত্রীরা আসেন, তাঁদের দেখভাল, পুজোপাঠের বন্দোবস্ত তো প্রয়োজন!

বুধবার উখীমঠ থেকে যাত্রা শুরু করেছে কেদারজি-র ডোলি। গুপ্তকাশী, ফাটা, গৌরীকুণ্ডে একটি করে রাত কাটিয়ে শনিবার বিগ্রহ যখন মন্দিরে পৌঁছেছে, এক প্রহর রাত। রাস্তা যেমন নতুন, কঠিনও। সেনাবাহিনীর জওয়ানরা প্রাণপাত করে এই রাস্তা বানিয়েছেন। কিন্তু এ বার বরফও পড়েছে প্রচুর। গত এক সপ্তাহ তো ইঞ্জিনিয়ারদের কেটেছে বরফ সাফ করাতে করাতেই। তার ওপর রোজ বিকেল হতেই নেমেছে বৃষ্টি। আসলে এই সময়টা এমনই আবহাওয়া থাকে উপত্যকা জুড়ে। কিন্তু এত তুষারপাত স্বাভাবিক নয়। মাস খানেক আগে পর্যন্ত বরফ পড়েছে অঝোরে। গত জুনে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া প্রাকৃতিক দুর্বিপাকের সঙ্গে কি এই অতিরিক্ত তুষারপাতের কোনও সম্পর্ক রয়েছে? প্রশ্নটা উঠেছে, কিন্তু জবাব দেওয়ার কেউ নেই।

প্রশাসন আপাতত চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ এগিয়ে চলেছেন। নতুন পথে কেদারে যেতে সব যাত্রীকে এ বার নাম নথিভুক্ত করতে হবে তাদের কাছে। চোরাবারিতাল ফেটে নেমে আসা পাথরের চাঁইয়ের আঘাতে মুছে যাওয়া গৌরীকুণ্ডের বদলে এ বার কেদারযাত্রীদের পায়ে হাঁটা শুরু হবে তার কিলোমিটার দশেক আগে সীতাপুর থেকে। রামওয়াড়ার কাছে মন্দাকিনীর ধারাকে পেরিয়ে উল্টো দিকে গিয়ে শুরু নতুন রাস্তা। সেখান থেকে সাত কিলোমিটার জায়গায় জায়গায় খুবই চড়াই। তবে এ পথ আগের পথের চেয়ে অনেক বেশি ছায়া সুনিবিড়। বেশ কিছু চটিও গড়া হয়েছে ক্ষণিক বিশ্রামের জন্য। সেখানে খাবার-দাবার জোগাবে গঢ়বাল মণ্ডল বিকাশ নিগম। আপাতত পথিমধ্যে আর কোনও বেসরকারি হোটেল বা ধাবা খোলার অনুমতি দিচ্ছে না সরকার। তা নিয়ে অসন্তোষের অন্ত নেই। সাধারণ মানুষ বিকিকিনি করে দুটো পয়সা যে আয় করতেন, সে সুযোগ কেড়ে নেওয়ার ক্ষোভ বিরোধীদের ভোটবাক্সে জমা হওয়ার আশঙ্কাও করছেন শাসক দল কংগ্রেসের নেতারা।

এই ভয়েই বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে তাঁদের। সরকার এর আগে বলেছিল, কোনও যাত্রীকে আর কেদারনাথে থাকতে দেওয়া হবে না। পুজো দিয়ে দিনের দিনই ফিরে আসতে হবে। কিন্তু তা হলে, যে অজস্র স্থানীয় মানুষ সেখানে যাত্রীদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করে জীবিকা চালান, তাঁদের কী হবে? ভোটের মুখে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে হরিশ রাওয়াত সরকার। বলা হয়েছে, কেদারে যে সব বাড়িঘর অক্ষত রয়েছে, ইঞ্জিনিয়াররা ছাড়পত্র দিলে সেগুলি খোলা যাবে। যাত্রীদের রাখাও যাবে সেখানে। কিন্তু রবিবার যাত্রা শুরু হয়ে গেলেও সরকারি ইঞ্জিনিয়াররা কেদার-যাত্রার সময় এখনও পাননি। সুতরাং আপাতত যাত্রীদের তাঁবুতেই থাকতে হবে। প্রচুর তাঁবুর বন্দোবস্তও করা হয়েছে। খাবারও মিলবে নিঃশুল্ক। অসুস্থ যাত্রীদের তুলে আনতে তৈরি থাকছে সেনা-কপ্টারও।

কিন্তু গত জুনের ধাক্কা সামলে যাত্রীর ঢল কি ফের নামবে দেবভূমিতে? সেখানকার মানুষ-জন কিন্তু সে দিকেই তাকিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

yashraj chamoli kedernath
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE