Advertisement
০৬ মে ২০২৪

রাহুলে অনাস্থা সামলাতে রাশ হাতে নিচ্ছেন সনিয়া

ভোটে দল গোহারা হওয়ার পর রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বের প্রতি যখন কংগ্রেসেই অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তখন ফের দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ভরসা দিলেন সনিয়া গাঁধী। ঘোষণা করলেন, “এই পরাজয় দেখে ভেঙে পড়ার কারণ নেই। বরং লড়াই করতে হবে। হারানো গৌরব উদ্ধার না করা পর্যন্ত কংগ্রেস থামবে না।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৪ ০৩:৩৭
Share: Save:

ভোটে দল গোহারা হওয়ার পর রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বের প্রতি যখন কংগ্রেসেই অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তখন ফের দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ভরসা দিলেন সনিয়া গাঁধী। ঘোষণা করলেন, “এই পরাজয় দেখে ভেঙে পড়ার কারণ নেই। বরং লড়াই করতে হবে। হারানো গৌরব উদ্ধার না করা পর্যন্ত কংগ্রেস থামবে না।”

সনিয়াই কংগ্রেসের সভানেত্রী। দলকে সামনে থেকে তাঁরই নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। তবে সনিয়ার এই বক্তব্যে নতুনত্ব কোথায়!

কিছুটা নতুনত্ব যে রয়েছে, সেটা কিন্তু বুঝতে পারছেন কংগ্রেসের নেতারা। দলের সভানেত্রী পদে সনিয়া থাকলেও, ২০১২-র ডিসেম্বরে জয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরের পর থেকে দলে যাবতীয় সিদ্ধান্ত রাহুল গাঁধীই নিচ্ছিলেন। তাঁর ইচ্ছামতো দল চালিয়েছেন তিনি। সেই সব সিদ্ধান্তে সভানেত্রীর হস্তাক্ষর বই কোনও হস্তক্ষেপ ছিল না। কিন্তু লোকসভা ভোটে চরম ব্যর্থ হওয়ার পর, রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে। মিলিন্দ দেওরার মতো কিছু নেতা তা প্রকাশ্যেই বলছেন। বাকিরা চোরাগোপ্তা জানাচ্ছেন। এমনকী সম্প্রতি কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকেও এই দাবি ওঠে যে, লোকসভায় সনিয়া নিজেই কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দিন।

সনিয়া তাতে রাজি হননি ঠিকই, তবে দলের এই আবেগ ও দাবিকে তিনি উপেক্ষাও করতে চান না। তাই দলের দুর্দিনে ফের সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিলেন এ বার। লোকসভা ভোটের পর গত কালই প্রথম রায়বরেলী সফরে গিয়েছিলেন সনিয়া। দলীয় কর্মীদের ডেকে রাতে ভুরিভোজের ব্যবস্থা করা হয় সেখানে। তার পর সেই অনুষ্ঠানেই কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, “আবার মানুষের আস্থা ফিরে পেতে দলকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। সেই কাজে আমি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেব।” তাঁর কথায়, “পরাজয়ের নিশ্চয়ই সুনিশ্চিত কারণ রয়েছে।

কিছু বিষয় আমার নজরে এসেছে। সেগুলি শোধরাতে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেব আমি।”

গত কাল বিকেল থেকেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বেশ কিছু নেতা বলছিলেন, রায়বরেলীতে সনিয়ার বক্তৃতার ওপর নজর রাখুন। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বার্তা দিতে পারেন দলনেত্রী। সংশয় নেই, সনিয়ার বক্তব্যের খসড়া দলের এই বর্ষীয়ান নেতারা আগে থেকেই জানতেন।

কিন্তু সনিয়াই যদি দলকে নেতৃত্ব দেন, রাহুল তবে কী করবেন?

কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকে রাহুলও চুপ করে বসে নেই। দলের যে সব প্রার্থী পরাস্ত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগকেই এক এক করে ডেকে বৈঠক করেছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। হারের কারণ বোঝার চেষ্টা করেছেন। বছর দেড়েক নিজেকে গুটিয়ে রাখার পর সনিয়াও এখন সক্রিয়। কংগ্রেসের যে সব প্রার্থী পরাস্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে চিঠি পাঠিয়ে সহানুভূতি জানিয়েছেন তিনিও।

কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, শেষমেশ রাহুলই কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু সনিয়া সক্রিয় হয়ে এখন দু’টি কাজ করতে চাইছেন। এক, রাহুলের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অসন্তোষের হাওয়াটা বের করে দিতে চাইছেন তিনি। জমি তৈরি করছেন ছেলের জন্য। কংগ্রেস নেতা-

কর্মীদের ধসে পড়া মনোবল ফেরাতে চাইছেন তিনি।

তবে সন্দেহ নেই কংগ্রেসে সাংগঠনিক রদবদলের ব্যাপারে রাহুলের ভাবনাচিন্তা এ বার কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে। ভোটের আগে রাহুল বলেছিলেন, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের পর কংগ্রেস হবে একটা নতুন পার্টি। দলীয় সংগঠনে আমূল সংস্কার করে নবীনদের জায়গা করে দেওয়া হবে। কিন্তু সনিয়া বুঝতে পারছেন, এই বিপুল ভরাডুবির পর তা আর সম্ভব নয়। তাই বর্ষীয়ানদের আশ্বস্ত করতেই তিনি ফের সক্রিয় হয়েছেন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বলে দ্বিতীয় এই কাজটাই করতে চাইছেন তিনি। দলের আসন্ন রদবদলে তাই নবীনদের সঙ্গে প্রবীণদেরও দেখা যাবে বলে মনে

করা হচ্ছে। সনিয়ার বক্তৃতা নিয়ে কংগ্রেসের বর্ষীয়ানদের উৎসাহের কারণ মূলত সেটাই।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, সনিয়া শুধু নিজে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দেননি, মেয়ে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢড়ার ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন। রায়বরেলীর মানুষকে বার্তা দিয়ে গত কাল তিনি বলেন, “প্রিয়ঙ্কা আপনাদের পাশে থেকে কাজ করেছে।

ভবিষ্যতেও ও আপনাদের পাশে থেকে কাজ করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rahul sonia gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE