হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ, এ বি বর্ধনরা যদি বেঁচে থাকতেন, তা হলে বিহারের বাম দলগুলিকে দেখে প্রবল ভাবে খুশি হতেন তাঁরা! কারণ, বাম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যে সব কথা বলতেন সিপিএম ও সিপিআইয়ের দুই সাধারণ সম্পাদক, বিহারের ভোটে বাম ঐক্যের পূর্ণতার সেই ছবিটাই যেন এবার নজর কাড়ছে!
বিহারে মহাজোটের শরিক হয়ে পাঁচটি আসনে লড়ছে তিন বাম দল। যার কয়েকটিতে বিজেপি শিবিরকে ঘাম ছুটিয়ে দেওয়ার অবস্থায় রয়েছেন তাদের প্রার্থীরা। ১৯৮৯ সালে ইন্ডিয়ান পিপলস ফ্রন্টের রামেশ্বর প্রসাদ আরা-য় জিতেছিলেন। ১৯৯৯-এ ভাগলপুর থেকে সাংসদ হয়েছিলেন সুবোধ রায়। তার পর থেকে বাম দলগুলির কেউ বিহার থেকে লোকসভা ভোটে জেতেননি। তবে এ বার পরিস্থিতি অনেকটাই অনুকূল বলেই মনে করছে বামেরা।
বিহারে একটা সময় সিপিআই জমি তৈরি করেছিল। তবে এখন বামেদের মূল চালিকাশক্তি সিপিআই (এমএল) লিবারেশন। ২০২০-র বিধানসভা ভোটে সিপিএম ও সিপিআই দু’টি করে আসনে জয়ী হলেও ১২টিতে জিতেছিল লিবারেশন। তার মধ্যে তরাই কেন্দ্রটির বিধায়ক সুদামা প্রসাদকে এ বার আরা আসনে প্রার্থী করেছে তারা। তাঁর লড়াই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আর কে সিংহের বিরুদ্ধে। কারাকাটে লিবারেশনের লড়াইয়ের নেতৃত্বে রাজারাম সিংহ। তাঁর বিপরীতে এনডিএ প্রার্থী উপেন্দ্র কুশওয়াহা। গত লোকসভা ভোটে সিপিআই প্রার্থী হিসেবে বেগুসরাইয়ে লড়েছিলেন জেএনইউয়ের প্রাক্তন ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমার। তিনি এ বার দিল্লিতে কংগ্রেস প্রার্থী। তবে নালন্দায় লিবারেশন প্রার্থী করেছে জেএনইউয়ের ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ সৌরভকে। সন্দীপ অবশ্য নির্বাচনী লড়াইয়ে নতুন নন, বিধানসভা ভোটে পালিগঞ্জ থেকে জয়ী হয়েছেন তিনি। এ বার লড়ছেন জেডিইউ-এর বিদায়ী সাংসদ কৌশলেন্দ্র কুমারের বিরুদ্ধে।
নীতীশের গড় নালন্দায় তাঁর দলের প্রার্থীর মোকাবিলায় যেমন লিবারেশনকে বেছে নিয়েছেন তেজস্বী যাদব, তেমনি বেগুসরাইয়ে মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের বিরুদ্ধে লড়তে সিপিআইকে আসনটি ছেড়েছেন তিনি। পাশের কেন্দ্র খগড়িয়ায় সিপিএম নেতা সঞ্জয় কুমার সিংহ লড়ছেন লোক জনশক্তি পার্টির রাজেশ বর্মার সঙ্গে।
কেউ কেউ বলছেন, এ তো মহাজোটের ঐক্য, বামেদের একজোট হয়ে চলার কৃতিত্ব কোথায়? গত লোকসভা ভোটের উদাহরণ টানলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। যেমন, গত ভোটে উজিয়ারপুরে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু লিবারেশনের সমর্থন মেলেনি। সেখানে তারা সমর্থন করেছিল আরজেডিকে। কারণ, আরা-য় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল লালু প্রসাদের দল। আবার বিধানসভা ভোটে বিভূতিপুরে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়েছিল লিবারেশন। তবে সেখানে সিপিএম জিতেছিল।
তবে এ বারের ছবিটা ভিন্ন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অরুণ মিশ্র বলেন, ‘‘বিহারে এই ধরনের সমন্বয় বামদলগুলির মধ্যে ছিল না। তবে এ বার আমরা একজোট হয়ে লড়াইয়ে নেমেছি।’’ লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যও আশাবাদী।
গত বার বিহারের ৪০টি-র মধ্যে ৩৯টি আসনেই জিতেছিল এনডিএ। দীপঙ্কর বলেন, ‘‘মোদী সরকার ভোটকে যুদ্ধে পরিণত করেছে। তাই সাধারণ মানুষও যুদ্ধে নামতে বাধ্য। আর বিহারে এই যুদ্ধের ফল হবে গতবারের থেকে বিপরীত।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)