বেড়া ডিঙিয়েই সমর্থকদের মাঝে। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
লোকসভা ভোট প্রচারে ত্রিপুরায় এসে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি প্রথম থেকেই বামেদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চড়া সুরে বাঁধলেন। তীব্র আক্রমণাত্মক ভাষায় রাহুল গাঁধী রাজ্যের শাসক দল সিপিএমের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ‘কমিউনিজম’-এর বেহাল দশার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘দুনিয়া থেকে কমিউনিজম খতম হয়ে গিয়েছে। রাশিয়াতে নেই, চিনও নয়া অর্থনীতির উপাসক।’’ এ প্রসঙ্গে ভারতেও কমিউনিস্টদের ‘ক্ষয়িষ্ণু’ অবস্থার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এখানেও তাদের অবস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছে। কেরল ও বাংলা হাত ছাড়া হয়ে গিয়েছে। শুধু ত্রিপুরায় কমিউনিস্টদের শাসন চলছে।’’ বিজেপি ও মোদী প্রসঙ্গে এখানে রাহুল একটি শব্দও খরচ করেননি।
সিপাহিজলা জেলার বিশালগড়ের কড়ইমুড়া মাঠে আজকে তাঁর ভাষণের প্রায় সবটা জুড়েই ছিল কমিউনিস্ট শাসনের ‘অত্যাচারের’ প্রসঙ্গ। সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অতি দ্রুত ত্রিপুরা থেকে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান জরুরি হয়ে পড়েছে। সে বিষয়ে প্রতিজ্ঞা নিতে হবে রাজ্যবাসীকে।’’ লোকসভা ভোটে রাজ্যের দু’টি আসন ছিনিয়ে নেওয়া ছাড়াও, ত্রিপুরার আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের লড়াই আরও জোরদার করার আহ্বানই তিনি জানিয়ে গেলেন। বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’ তথা ‘স্বজনপোষণের’ অভিযোগও তাঁর ভাষণে উঠে আসে। বলেন, ‘‘কেন্দ্র সাধারণ মানুষ, যুব সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য করছে। অথচ সেই ফয়দা লুটছেন শাসক দলের সমর্থক-কর্মীরা।’’
কেন্দ্রে ‘তৃতীয় ইউপিএ’ সরকার আসছে, এমন কথাই দৃঢ প্রত্যয়ের সঙ্গে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি বার বার উল্লেখ করলেন। ‘তৃতীয় ইউপিএ’ সরকার এলে কী সুবিধা হবে? তিনি জানান, “তৃতীয় ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় এলে মহিলাদের ক্ষমতায়নের বিষয়টিতে কংগ্রেস আরও গুরুত্ব দেবে।” দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে সংসদে কী ভাবে ‘মহিলা বিল’টি বিভিন্ন বিরোধী দলের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, তা-ও ছুঁয়ে যান রাহুল। এ প্রসঙ্গে ত্রিপুরায় মহিলাদের উপরে ক্রমবর্ধমান অত্যাচারের ঘটনাগুলির কথা উল্লেখ করে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাজ্য স্তরের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন সহ বিধানসভা, লোকসভায় ৫০ শতাংশ মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
দৃশ্যত আজকে এ এক অন্য রাহুল। যিনি কেবল আম আদমির এবং মহিলাদের ক্ষমতায়ন তথা স্বনির্ভরতা প্রসঙ্গে কথা বলেই উপস্থিত জনতাকে আশ্বস্ত করেননি। এমনকী রাজ্যের ১৮-১৯টি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের আবেগকে উস্কে দেওয়ার জন্য এক কদম এগিয়েই বলে গেলেন, ‘‘এডিসি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। দিল্লি থেকে আসার আগে সে রকমই শুনে এসেছি।’’ তৃতীয় ইউপিএ সরকার গঠিত হলে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ‘লুক-ইস্ট’ পলিসি আরও কার্যকর করার জন্য তাঁরা উদ্যোগী হন। বাকি দেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আর্থিক উন্নতি জুড়ে দেওয়ার জন্য ‘আর্থিক কেন্দ্র (ইকনমিক সেন্টার)’ তৈরি করা হবে। রাজ্যের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নে দিল্লিতে তিনি ত্রিপুরাবাসীর ‘সিপাই’ হয়েই লড়াই করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy