Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

শেষ সূর্যে স্নান নাসিকের

গোদাবরীর পুণ্য সলিলেই শ্রীরাম পিতা দশরথের শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদান করেছিলেন। স্নানও করতেন তিনি এই গোদাবরীর জলেই, সে স্নানের জায়গা এখন রামকুণ্ড নামে পরিচিত। প্রতি কুম্ভপর্বে রামঘাটে এই গোদাবরী নদীর জলেই স্নান করেন পুণ্যার্থীরা। নাসিকে রয়েছে বহু প্রাচীন ছোট-বড় মন্দির, তাই একে ‘মন্দির শহর’ও বলা হয়ে থাকে। লিখছেন পারমিতা মুখোপাধ্যায়।আমাদের মহাকাব্য রামায়ণের অরণ্যকাণ্ড দিয়ে শুরু করি এই লেখা। চোদ্দো বছর বনবাসের প্রাথমিক পর্বে রামচন্দ্র গীতা আর লক্ষ্মণকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন চিত্রকূট পর্বতের অতি সুরম্য স্থানে। কিন্তু ভরতের সঙ্গে সাক্ষাতের পর পিতা দশরথের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে রাম আর চিত্রকূটে কালাতিপাত করলেন না। তিনি আরও দক্ষিণে দণ্ডকারণ্যে প্রবেশ করলেন। নিজভূম অযোধ্যা থেকে সরে এলেন আরও আরও দূরে। হয়তো বা মন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন রাজপুত্র পরিচয়, অহংবোধ, গরিমা। তপস্বীর বেশেই বেছে নিয়েছিলেন বৈরাগ্যের পথ।

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ০১:১৫
Share: Save:

আমাদের মহাকাব্য রামায়ণের অরণ্যকাণ্ড দিয়ে শুরু করি এই লেখা। চোদ্দো বছর বনবাসের প্রাথমিক পর্বে রামচন্দ্র গীতা আর লক্ষ্মণকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন চিত্রকূট পর্বতের অতি সুরম্য স্থানে। কিন্তু ভরতের সঙ্গে সাক্ষাতের পর পিতা দশরথের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে রাম আর চিত্রকূটে কালাতিপাত করলেন না। তিনি আরও দক্ষিণে দণ্ডকারণ্যে প্রবেশ করলেন। নিজভূম অযোধ্যা থেকে সরে এলেন আরও আরও দূরে। হয়তো বা মন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন রাজপুত্র পরিচয়, অহংবোধ, গরিমা। তপস্বীর বেশেই বেছে নিয়েছিলেন বৈরাগ্যের পথ।

রাজার ছেলে বনচারী, পর্ণকুটীরবাসী। জীবনের এ কী নির্মম খেলা। কিন্তু রাম অসুখী ছিলেন না। বরং রাজপ্রাসাদের বৈভবময় জীবন ছেড়ে এসে তাঁরা তিন জন এই অরণ্য-জীবনে বেশ সুখেই ছিলেন। আর ছিল অপার শান্তি যা অরণ্যচারী মুনি-ঋষিদের আধ্যাত্মিক জীবনেই সম্ভব। বেশ কেটে যাচ্ছিল কাল। দেখতে দেখতে দশ বছর অতিক্রান্তও হয়ে গেল। দণ্ডকারণ্যে প্রথম দিকে গভীর বনে এক রাক্ষসের মুখোমুখি তাঁরা হয়েছিলেন বটে, কিন্তু সে রাক্ষসকে নিধন করার পর আর কোনও বড়সড় বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি তাঁদের। দশ বছর যাবত্‌ মুনি-ঋষিদের আশ্রমে আশ্রমে বিচরণ করে তাঁদের দিন কেটে যাচ্ছিল।

এই ভ্রাম্যমাণ পথিক জীবনে তাঁদের এ বার একটু থিতু হওয়ার সাধ জাগল। অগস্ত্য মুনির সঙ্গে দেখা হতে রাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, এখানে এমন কোনও জায়গা আছে যেখানে কুটির নির্মাণ করা যায়? মুনিবর একটু ভেবে বললেন, আছে আছে, নিশ্চয়ই আছে। পঞ্চবটী নামে এক অতি মনোরম অরণ্য আছে এখানে— যেখানে ফল, ফুল, মিষ্টি জল, হরিণ, ময়ূর সবই পাওয়া যায়। সেখানে তোমরা সুখে বাস করো।

রামচন্দ্র চললেন পঞ্চবটী অভিমুখে। পথে আলাপ হল গরুড়পুত্র জটায়ুর সঙ্গে। জটায়ুর অভয়বাণী তাঁকে মুগ্ধ করল। চলতে চলতে তাঁরা এসে পৌঁছলেন গোদাবরীতীরে। অপূর্ব সেই স্থান। পাহাড়বেষ্টিত বনাঞ্চল— ফুলে-ফলে, পাখির কলকাকলিতে পরিপূর্ণ। কুটির নির্মাণের উপযুক্ত স্থান বটে। মনে মনে প্রণাম জানালেন রাম ঋষি অগস্ত্যের উদ্দেশে— এমন সুরম্য এক স্থানের সন্ধান দেওয়ার জন্য।

পঞ্চবটী বনে কিছু কাল বড় শান্তি ও আনন্দে কাটল রাম, সীতা আর লক্ষ্মণের। কিন্তু এমন নিরবচ্ছিন্ন সুখ কি চিরকাল সয়!

একদিন রামের কুটিরে এসে উপস্থিত হল এক রূপবতী কন্যা। সে রামের রূপে মুগ্ধ। বিলোল কটাক্ষে রামের দিকে চেয়ে সে বলল, আমাকে বিবাহ করো। রামের নিস্পৃহ ঔদাসীন্যে সে মর্মাহত হলেও হাল ছাড়ল না। রাম রাজি নয় তো কী! আর এক রূপবান যুবাপুরুষ তো রয়েছে--- লক্ষ্মণ। রাম বিবাহিত, রামের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী সীতা রয়েছেন। কিন্তু লক্ষ্মণ! সে তো একাই এই বনে এসেছে। অতএব তাঁকে বিবাহ-প্রস্তাব দেওয়াই যায়। সেই সুন্দরী এ বার অর্ধাঙ্গিনী হতে চাইল লক্ষ্মণের। কিন্তু লক্ষ্মণও তার রূপে ভোলার পাত্র নয়। এখানেও প্রত্যাখ্যাত হল সে।

দু’-দু’বার প্রত্যাখ্যান! এত বড় সাহস! এ বার নিজমূর্তি ধারণ করল সেই রূপসী।

জানিস আমি কে? আমি লঙ্কাধিপতি রাবণের ভগ্নী শূর্পনখা। এই বন রাবণের অধিকারে আর তারই ভগ্নীকে তোরা অগ্রাহ্য করছিস? তবে দ্যাখ আমার শক্তি! এই বলে রাক্ষসী শূর্পনখা নখ দন্ত বের করে সীতাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হল।

রাম লক্ষ্মণ থাকতে সীতার প্রাণসংশয়! সঙ্গে সঙ্গে খড়্গ বের করলেন লক্ষ্মণ। ‘দূর হ ঘৃণ্য রাক্ষসী! আজ তোকে এমন শান্তি দেব!’ বলে শূর্পনখার নাক কেটে দিলেন তিনি। ‘বিরূপিতা শূর্পনখা রাক্ষসী কামরূপিনী’। রাক্ষসী শূর্পনখা চিত্‌কার করে উঠল যন্ত্রণায়। কিন্তু এ যন্ত্রণা যতটা না শরীরের তার থেকে বেশি আত্মাভিমানের। অপমানের পর অপমান। রাক্ষসী ফঁুসে উঠল— এর শোধ নেব আমি। চরম প্রতিশোধ।

সুধীজন, শূর্পনখার নাসিকা কর্তনের পরিণাম কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল তা আমাদের সকলেরই জানা। রামায়ণের কাহিনিতে এটিই বোধহয় চূড়ান্ত মোচড়। কারণ এই ঘটনার পর থেকে শুরু হল একের পর এক রুদ্ধশ্বাস ঘটনাপ্রবাহ— রাবণ কর্তৃক সীতাহরণ, বানরসেনা নিয়ে রামের লঙ্কাভিমুখে যাত্রা, সমুদ্রের ওপর সেতুবন্ধন, রাম-রাবণের যুদ্ধ আর সবশেষে রাবণবধ। সীতাকে উদ্ধার করে অযোধ্যায় ফেরা।

তা, যার জন্য এই অরণ্যকাণ্ডের অবতারণা, সেটি এ বার বলি! দিওয়ালির ছুটিতে এ বার ছোট্ট সফরে গিয়েছিলাম নাসিক। মুম্বই থেকে প্রায় একশো তিরাশি কিলোমিটার দূরে এই মন্দির-শহরটির কথা লিখতে গেলে রামায়ণের উপরোক্ত ঘটনাটি না বললেই নয়। কারণ, নাসিক সেই অরণ্যকাণ্ডের পঞ্চবটী, তপোবন এবং সর্বোপরি শ্রীরামচন্দ্রের পুণ্য পদস্পর্শের ধারণাভূমি। তাই উপরের ওই বর্ণনাটুকু নাসিকের স্থানমাহাত্ম্য বিশ্লেষণের জন্যই করার দরকার ছিল।

আর নাসিক নামটির উত্‌পত্তি কোথা থেকে, তা শুনবেন? সে হল ওই শূর্পনখার নাসিকা কর্তনের কাহিনি থেকে। সত্যিই বড় বিচিত্র এই দেশ ভারত। পাঁচ হাজার বছর আগের কত কাহিনি আজও নাসিকের পথের ধুলোয় মিশে রয়েছে তার সন্ধান করতে গেলে এই জীবনটাই কাবার হয়ে যাবে। ভাবতে আশ্চর্য লাগে, আজ যেখানে সুদৃশ্য বাড়িঘর, কোর্টকাছারি, অফিস, স্কুল, কলেজ, বাজার, দোকান, মল, অগুন্তি হোটেল— কত কত বছর পূর্বে সেই জায়গাই বিধৃত ছিল গভীর অরণ্যে।

নির্ধারিত দিনে আমার বেলাপুরের বাড়ি থেকে বেরোতে বেরোতে সকাল সাড়ে আটটা বেজে গিয়েছিল। গন্তব্য নাসিক। ভাড়া গাড়িতে সওয়ার হয়ে পথঘাট দেখতে দেখতে চলেছি। থানে, ঘাটকোপার, কল্যাণ হয়ে গাড়ি ধরল কাসারা ইগতপুরীর পথ। এখান থেকেই পশ্চিমঘাট পাহাড়ের ঢল নেমেছে অঞ্চল জুড়ে। এ পথে এর আগেও এসেছি কিন্তু সে বর্ষার সময়। বর্ষার সে ঢলোঢলো সবুজ সৌন্দর্য এখন নেই।

প্রকৃতি এখন সবুজ রূপ বদলে ফেলে সাজছে পিঙ্গল বর্ণে। রুক্ষতাও তো প্রকৃতির সাজই এক রকম। শীত আসছে তাই পালাবদল ঘটেছে পাহাড় জুড়ে। যে পাহাড়গুলো বর্ষায় সবুজ ভেলভেটে আবৃত হয়েছিল আজ তারাই ধূসর চাদর গায়ে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার দু’ধারে বড় বড় সবুজ ঘাসের রং এখন খড়ের মতো হলুদ। কোনও কালে তারা সবুজ ছিল বলে মনেই হয় না। প্রতি বছরই ঋতুবদলে প্রকৃতিরও চলতে থাকে সাজবদল।

তবে হ্যঁা, পশ্চিমঘাটের ঢেউখেলানো রুক্ষ পাহাড় উপত্যকা পেরিয়ে যত নাসিকের নিকটবর্তী হয়েছি, রাস্তার দু’পাশে চোখে পড়েছে মোহময় আঙুরলতার খেত। কোনও খেত পুরনো, কোনওটা আবার নতুন। বোঝা যায় গাছের কাণ্ডের পরিধি দেখে। খেত জুড়ে টান করে দড়ি দিয়ে মাচা বাঁধা যাতে লতা লতিয়ে যেতে পারে। তবে আঙুরের দেখা পাইনি। আঙুরের মরসুম তো নয় এটি। আঙুরের দেখা পাওয়া যাবে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে গেলে। আর রয়েছে আখের খেত ইতিউতি। ধান চাষও কিছু হয়েছে বটে, কিন্তু জলের অভাবে ধানগাছ লম্বা হয়নি। রংও তার হলুদ। ধানগাছগুলোর দৈন্যদশা দেখে মনে পড়ে যাচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গের দিগন্তজোড়া সবুজ ধানখেতের স্মৃতি।

কোথায় এই রুক্ষ পাথুরে জমি, আর কোথায় সেই গঙ্গার উর্বর ব-দ্বীপ। বাঁধাকপির ফলন নাসিকের কাছে বেশ ভাল। রাস্তার দু’পাশে খেত থেকে সদ্য তোলা রাশি রাশি বাঁধাকপির পশরা সাজিয়ে বসেছে মেয়ে পুরুষ, যদি গাড়ি থামিয়ে কেউ কেনে এই আশায়। নাসিকে পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় বেলা বারোটা। আমাদের হোটেল বুক করা হয়েছিল নাসিক শহরের সাতপুর অঞ্চলে। এই জায়গাটিকে নবীন নাসিক বলা হয়। এই এলাকাটি বেশ সাজানো, চার দিকে অজস্র গাছপালা। রাস্তাঘাট চওড়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। হোটেল জিঞ্জার নাসিক-ত্র্যম্বকেশ্বর রোডের উপর। এটিই আমাদের নাসিক সফরের অস্থায়ী আস্তানা।

আদা বা হলুদ বা জিরে বা ধনে, এই নামে কোনও বার বা রেস্তরাঁ বা হোটেল এই ভারতে হয় না। কিন্তু জিঞ্জার নামে হোটেল-রেস্তরাঁ সব শহরেই আছে!

দুপুরে হোটেলের খাওয়ার ঘরে মধ্যাহ্নভোজন সেরে বেলা তিনটে নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম নাসিকের দ্রষ্টব্য জায়গা ও মন্দির ঘুরে দেখতে। এখানে বলে নিই, কেবল শ্রীরামচন্দ্রের পদধূলিকণা বলে নয়, নাসিকের মাহাত্ম্য আরও একটি ক্ষেত্রে। সমুদ্র মন্থনকালে উদ্ভূত অমৃতভাণ্ডের অধিকার গ্রহণে সুর ও অসুরের মধ্যে লড়াইয়ে সেই ভাণ্ড থেকে কয়েক ফোঁটা অমৃত ভারতে যে চারটি স্থানে পতিত হয়েছিল, তার মধ্যে নাসিক অন্যতম। অপর তিনটি স্থান হল হরিদ্বার, প্রয়াগ ও উজ্জয়িনী। এই চারটি স্থানে প্রতি তিন বছর অন্তর পালা করে পূর্ণকুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়, অর্থাত্‌ এক-একটি স্থানে প্রতি বারো বছর অন্তর পূর্ণকুম্ভ যোগ হয়। নাসিকে শেষ বার ২০০৩ সালে পূর্ণকুম্ভ যোগ ছিল। আবার এই যোগ আসবে ২০১৫ সালে।

সুধীজন, আপনারা প্রায় সকলেই অবগত, কী পরিমাণ ভক্তসমাগম হয় এই পূর্ণকুম্ভে। সারা ভারত থেকে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী ছুটে আসেন অমৃতকুম্ভের সন্ধানে। হরিদ্বারের ব্রহ্মকুণ্ড, ইলাহাবাদের প্রয়াগে ত্রিবেণীসঙ্গম, নাসিকের গোদাবরী তীর্থ ও উজ্জয়িনীতে শিপ্রা-সঙ্গমে স্নান করেন মানুষ অমৃত লাভের আশায়। ‘অসতো মা সদ্গময়, তমসো মা জ্যোতির্গময়, মৃত্যোর্মা অমৃতগময়’।

যাই হোক নাসিক মূল শহরে প্রবেশ করলে কোনও কোনও বাড়িঘরের নির্মাণ ও গঠনশৈলী দেখলে বোঝা যায়, কত প্রাচীন এ শহর। ব্রিটিশ আমলেও যে নাসিকের যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল তাও অনুধাবন করা যায় রাস্তার দু’ধারের পুরনো বাড়িগুলির স্থাপত্য দেখলে। অনেক বাড়িতেই কাঠের কাজ প্রাধান্য পেয়েছে দেখা গেল। হয়তো আগে বিস্তৃত জঙ্গলের জন্য কাঠ এখানে সহজলভ্য ছিল।

আমরা চলেছিলাম নাসিকের পঞ্চবটী অভিমুখে। পঞ্চবটী পৌঁছে যদি মনে করেন সুধীজন দেখতে পাবেন ঘন অরণ্য, তা হলে এক মস্ত ভুল করবেন। কোথায় সে অরণ্য, কোথায় বনের পশুপাখি, ফুল-ফল। তার বদলে কংক্রিটের জঙ্গল। পঞ্চবটীর গোদাবরী নদীকেও বেঁধে ফেলা হয়েছে সিমেন্টের বাঁধনে। তবে মহারাষ্ট্র শাসন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি সনির্বন্ধ অনুরোধ—নাসিকের এই গোদাবরী তট, রামকুণ্ড, গঙ্গাঘাট, পঞ্চবটীকে কি স্বচ্ছ ভারতের এক নিদর্শন রূপে গণ্য করা যায় না? কেন এমন আবর্জনা ময়লায় ভর্তি থাকবে দেশের এই সুপ্রাচীন তীর্থস্থান?

এই গোদাবরীর পুণ্য সলিলেই শ্রীরাম পিতা দশরথের শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদান করেছিলেন। স্নানও করতেন তিনি এই গোদাবরীর জলেই, সে স্নানের জায়গা এখন রামকুণ্ড নামে পরিচিত। প্রতি কুম্ভপর্বে রামঘাটে এই গোদাবরী নদীর জলেই স্নান করেন পুণ্যার্থীরা। নাসিকে রয়েছে বহু প্রাচীন ছোট-বড় মন্দির, তাই একে ‘মন্দির শহর’ও বলা হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মন্দির ও দ্রষ্টব্য স্থানের বিবরণ দিলাম।

কপালেশ্বর মন্দির: গোদাবরীর গঙ্গা ঘাট বা রামকুণ্ড দর্শন করে দেখলাম কপালেশ্বর মন্দির। বেশ খানিকটা সিঁড়ি দিয়ে ওঠার পর ওপরে শিবের মন্দির। এখানে নন্দী অদৃশ্য। জনশ্রুতি আছে যে, এখানে ভগবান শঙ্কর নন্দীকে তাঁর প্রভু মেনেছিলেন। আড়াইশো বছরের প্রাচীন এই মন্দির নির্মাণে সেই সময় ব্যয় হয়েছিল পাঁচ হাজার টাকা।

সুন্দরনারায়ণ মন্দির: এই মন্দিরটিও বহু প্রাচীন। সপ্তদশ শতকে এটি নির্মিত। এখানে শ্রীবিষ্ণু, লক্ষ্মী এবং বৃন্দার মূর্তি আছে। এই মন্দিরের বিশেষত্ব হল প্রতি বছর ২০ ও ২১ মার্চ সূর্যের প্রথম রশ্মি নারায়ণের পদস্পর্শ করে। কথিত আছে, বিষ্ণুদেবী বৃন্দার পবিত্রতা কলুষিত করেন এবং বৃন্দাকর্তৃক অভিশপ্ত হন যে তিনি কুত্‌সিতদর্শন হয়ে যাবেন। শাপমুক্তির জন্য বিষ্ণু গোদাবরীর রামতীর্থে স্নান করেন এবং পূর্বরূপ ফিরে পান। সুন্দরনারায়ণ মন্দির ও কপালেশ্বর শিবমন্দিরের অবস্থান হেতু এই ক্ষেত্রকে ‘হরিহর তীর্থ’ বলা হয়।

নারোশঙ্কর মন্দির: গোদাবরী তীরে নারোশঙ্কর মন্দিরটি বিখ্যাত এর গঠনশৈলী এবং প্রবেশদ্বারের বিশাল ঘণ্টাটির জন্য। এই ঘণ্টার পরিধি ছয় ফুট এবং এর আওয়াজ তিন-চার মাইল দূর থেকে শুনতে পাওয়া যায়। গোদাবরীতে বন্যার সময় যখন জল বাড়ত, জল ঘণ্টা স্পর্শ করলে তা বেজে উঠত এবং নাসিক শহরে পৌঁছে যেত বন্যার পূর্বাভাস। বাজিরাও পেশোয়ার সাহসী সর্দার বিষ্ণু চিমাজি আপ্পা ভাসাইয়ের পর্তুগিজ দুর্গ জয় করে দুর্গের চার্চ থেকে ঘণ্টা খুলে এখানে লাগিয়েছিলেন।

কালারাম মন্দির: কালারাম মন্দির নাসিকের এক প্রাচীন তীর্থক্ষেত্র। কথিত আছে রামচন্দ্র এখানেই বাস করতেন। প্রায় পঁচাত্তর ফুট উঁচু এই মন্দিরের কারুকার্য অত্যন্ত শিল্পসুষমাময়। এখানে রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ তিনজনের মূর্তিই কালো কষ্টিপাথরের তৈরি। মন্দিরের চূড়ায় রয়েছে একটি স্বর্ণকলস। পরিবেশ ভারি সুন্দর, আধ্যাত্মিক ভাবে পূর্ণ।

গোরেরাম মন্দির: নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে এই মন্দিরে রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের মূর্তি সাদা। মন্দিরের অভ্যন্তরে কাঠের কাজ দেখার মতো।

সীতাগুম্ফা: প্রবাদ আছে, এই সংকীর্ণ গুহাসদৃশ স্থানেই সীতাকে রেখে মায়াবী হরিণের শিকারে গিয়েছিলেন রাম। এখান থেকে রাবণ হরণ করে সীতাকে। সীতাগুম্ফার কাছেই রয়েছে সেই পাঁচটি বটগাছ, যার জন্য এ অঞ্চলের নাম পঞ্চবটী। সীতাগুম্ফার প্রবেশপথ এত সংকীর্ণ যে, সাইনবোর্ডে লেখা উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, মৃগি প্রভৃতি যাঁদের আছে, তাঁরা যেন ভিতরে প্রবেশ না করেন।

তপোবন: পঞ্চবটী থেকে কিছু দূরে তপোবন। এই স্থান মুনি-ঋষিদের পুণ্য পদস্পর্শধন্য। এটি কপিলা ও গোদাবরীর সঙ্গমস্থল।

সোমেশ্বর মন্দির: সোমেশ্বর মন্দিরটি নাসিক থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে গঙ্গাপুর রোডের ওপর। মন্দির চত্বর খুব প্রশস্ত। সামনেই গোদাবরী নদী। মন্দিরটি অবশ্য খুব বড় নয়। দেবাদিদেব মহাদেব বিরাজমান।

এ ছাড়াও বহু মন্দির রয়েছে নাসিকে, যা একদিনে দেখে ওঠা সম্ভব নয়। আবার যদি কখনও সুযোগ হয় তা হলে বাকি মন্দিরগুলির কিছু দেখে নেওয়া যাবে।

আমাদের হাতে সময় অল্প। পরদিন সকালবেলা গাড়ি চলল দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের এক শিবলিঙ্গ ত্র্যম্বকেশ্বরের পথে।

আমাদের হোটেল থেকে ত্র্যম্বকেশ্বরের দূরত্ব পঁচিশ কিলোমিটার। যাত্রাপথ ভারি সুন্দর। দু’পাশে পাহাড়, যদিও সে পাহাড় এখন রুক্ষ। রাস্তাও ভারি চমত্‌কার। মসৃণ পথে ছুটে চলেছে আমাদের অত্যাধুনিক শকট। মনে হচ্ছে বুঝি বা পৌঁছে গেছি সেই পুরাকালেই। ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরের পশ্চাতে ব্রহ্মগিরি থেকে গোদাবরী নদীর উত্‌পত্তি। যেতে যেতে বলে নিই ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ ও দেবী গোদাবরীর আবির্ভাব-কথা। এই অঞ্চলে সত্যযুগে ঋষি গৌতম ও তাঁর পত্নী অহল্যা বাস করতেন। চারপাশ পর্বতবেষ্টিত তাই অরণ্যবাসী ঋষিদের বড় জলকষ্ট। ঋষিদের দুঃখ দূর করার জন্য ঋষি গৌতম বরুণদেবের তপস্যায় বসেন। বরুণদেবের কথামত একটি গর্ত খনন করলেন ঋষিবর। বরুণদেব বলেছিলেন, এই কুণ্ডের জল অক্ষয়, কখনও ফুরবে না। জলকষ্ট দূর হল বটে কিন্তু একদিন আশ্রম-বালকেরা ওই কুণ্ড থেকে জল আনতে গেলে অপর ঋষিপত্নীরা তাদের ফিরিয়ে দিলেন। অহল্যা ছিলেন করুণার আধার— তাই এ কথা শুনে তাঁর বড় দুঃখ হল। তিনি তাঁদের ঝগড়া মিটিয়ে মধ্যস্থতা করলেন। কিন্তু এই ঘটনা গৌতম ও অহল্যাকে ঋষিদের বিষনজরে ফেলল। তারা ভাবল এই মুনিবর ও তাঁর স্ত্রীর তো ভারি দেমাক! তাই তারা ষড়যন্ত্র করল যে ঋষি গৌতমকে শান্তি দিতে হবে।

তখন গণেশের আরাধনা করে তারা এর বিধান চাইল। গণেশ প্রথমে সম্মত না হলেও শেষমেশ পরিণতি জেনেও এক রুগ্ণ গাভীর রূপ ধরে গৌতমের জমিতে ফসল খেতে লাগলেন। গৌতম একগাছি খড় দিয়ে গাভীটিকে আঘাত করতেই রুগ্ণতা হেতু সে প্রাণত্যাগ করল। এ বার ঈর্ষাকাতর ঋষিরা গৌতমকে গো-হত্যার পাপে অভিযুক্ত করে বলল, এর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। হয় গৌতমকে শতবর্ষ ধরে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে নিজের পাপের কথা বলে বেড়াতে হবে, তার পর শতবার এই ব্রহ্মগিরি প্রদক্ষিণ করতে হবে— অথবা গঙ্গাকে এখানে এনে তার জলে স্নান করে এক কোটি পার্থিব শিবলিঙ্গের পূজা করে এগারো বার এই ব্রহ্মগিরি প্রদক্ষিণ করতে হবে। গৌতম দ্বিতীয় পথটি বেছে নিয়ে শিবের পূজা আরম্ভ করলেন। পুণ্যাত্মা গৌতমের পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব তাঁকে দর্শন দিয়ে বললেন যে, গৌতম নিষ্কলুষ এবং ঋষিরাই পাপী। শিবের কাছে অহংবোধশূন্য গৌতম প্রার্থনা করেন, ঋষিদের জন্য আজ তিনি শিবের দর্শন পেলেন। গোহত্যার পাপ থেকে মুক্ত করার জন্য যেন শিব তাঁকে গঙ্গাবারি দান করেন।

শিব তখন তাঁর কমণ্ডুল থেকে গৌতমকে গঙ্গাজল দান করলে গঙ্গা নারীমূর্তি ধারণ করে আবির্ভূত হলেন। গৌতম বললেন, মা, আমাকে পবিত্র করো। গঙ্গা বললেন, আমি শিব শরীরে মিশে থাকব। শিব বললেন, কলির শেষ পর্যন্ত তুমি এখানেই থাকো। কাশীতে তোমার একাংশ ও এখানে অপরাংশ থাকবে। গঙ্গা বললেন, বেশ, তাই থাকব, যদি আপনি পার্বতীর সঙ্গে এখানে বিরাজ করেন। দেখতে দেখতে ভারতের সব তীর্থ ও দেবতাসকল সেখানে উপস্থিত হলেন আর গঙ্গার পবিত্র জলস্পর্শে মৃত গাভীটিও প্রাণ ফিরে পেল। গাভী বা গরুর প্রাণদানের জন্যই নদীর নাম ‘গোদাবরী’ আর গৌতমের পুণ্যবলে গঙ্গানদীর আগমনের জন্য এর নাম হল ‘গৌতমী গঙ্গা’। তাই গোদাবরীকে ‘গঙ্গা’ও বলা হয়ে থাকে।

ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরের পিছনের পাহাড় ব্রহ্মগিরি থেকে উদ্ভূত হয়ে গোদাবরী গুপ্ত ভাবে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসে ক্ষীণ আকারে বেরিয়ে আসছে জ্যোতির্লিঙ্গ ত্র্যম্বকেশ্বরের মধ্য থেকে। মন্দির থেকে কিছু দূরে কুশাবর্ত কুণ্ড ও গোমতী ঘাট। কুম্ভপর্বে যে তিনটি স্নান হয়, তার একটি রামতীর্থ রামঘাটে ও অপর দুটি হয় এই কুশাবর্ত তীর্থে।

দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম ত্র্যম্বকেশ্বরে। গাড়ি পার্কিং-এর জায়গা থেকেই গাঁদা ফুলের মালা হাতে গরিব বৃদ্ধা বা মহিলারা অনুরোধ করছেন মালা কেনার জন্য। কিনেই ফেললাম একটি গাঁদার মালা। ভারি কষ্ট হল বৃদ্ধাকে দেখে। মাথার ওপর জ্বলন্ত সূর্য। পায়ের তলায় পাথুরে মাটি। অশক্ত শরীরে মালা বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন। ত্র্যম্বকেশ্বরের মন্দিরে প্রবেশকালে সিকিউরিটি আটকে দিল। ক্যামেরা, মোবাইল নিষিদ্ধ। জমা রাখতে হল সেগুলি।

অতঃপর মন্দিরে প্রবেশ করে লাইনে দাঁড়ালাম। মন্দির চত্বরটি বিশাল। সেই চত্বরের মাঝখানে বিরাট গ্রানাইট পাথরের মন্দির। এই মন্দির পঞ্চচূড়। প্রায় সাতশো এগারো মিটার উচ্চতা এই মন্দিরের। দশ লক্ষ টাকা খরচ করে বালাজি বাজিরাও এই মন্দির নির্মাণ করেন। ১৭৭৫ থেকে ১৭৮৫— দশ বছর সময় লেগেছে মন্দির নির্মাণে। মন্দিরটি গর্ভমন্দির ও নাটমন্দির এই দুটি ভাগে বিভক্ত। পূর্বদ্বারী এই মন্দিরের কারুকার্য অপূর্ব। মন্দিরের সামনে একটি ছোট মন্দিরে পশ্চিমমুখী নন্দীকেশ্বর মূর্তি। নন্দীকে দর্শন করে তবে গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে হয়। ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ সাধারণ শিবলিঙ্গের মতো নয়। গৌরীপট্টের মাঝখানে সামান্য উঁচু ছোট ছোট তিন ভাবে বিভক্ত এই লিঙ্গ। দেখলে মনে হয় বুঝি তিনটি শিবলিঙ্গ। শিবলিঙ্গের কাছে যাওয়া যায় না। সাধারণ মানুষ একটু দূর থেকেই দর্শন করেন। বৃদ্ধার কাছ থেকে কেনা মালাটি দিয়ে দিলাম স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে। তাঁরাই পূজার অর্ঘ্য পৌঁছে দেবেন দেবাদিদেবের কাছে। ওই শীতল মন্দিরের অভ্যন্তরে দাঁড়াতে ইচ্ছে হয় দু’দণ্ড। সে অবকাশ নেই। ভিড় বাড়লে সরে যেতে হবে। সবাই যে ত্র্যম্বকেশ্বরের দর্শনপ্রার্থী। স্থানীয় মরাঠা ভাষায় ত্র্যম্বকেশ্বরকে ‘ত্রিম্বকেশ্বর’ও বলা হয়। ত্র্যম্বকেশ্বরের মন্দিরের পশ্চাতে ব্রহ্মগিরি পাহাড়েরই একটি অংশের নাম অঞ্জনা পর্বত। হনুমানের মাতা পবনপত্নী অঞ্জনার তপস্যাস্থল ও হনুমানের জন্মস্থান। এই স্থানকে বলা হয় অঞ্জিনেরী।

ত্র্যম্বকেশ্বরের পর এ বার যাত্রা করলাম সপ্তশৃঙ্গী গড়ের দেবী ভগবতীকে দর্শনের উদ্দেশ্যে। নাসিক থেকে প্রায় পঞ্চান্ন কিলোমিটার পথ। পথের দৃশ্যাবলি অপরূপ। পাহাড়ের পর পাহাড় পেরিয়ে এমন একটা জায়গায় পৌঁছলাম, যে-স্থানটিকে ঘিরে রয়েছে সাতটি পাহাড়ের চূড়া। তাই এই স্থানের নাম সপ্তশৃঙ্গী গড়। ওয়ানি গ্রামের কাছে এই স্থান। এখানেই একটি পাহাড়ের চূড়ায় দেবী ভগবতীর মন্দির। দেবীর আঠেরোটি হাতে শোভিত আঠেরোটি অস্ত্র। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি বড় জাগ্রত দেবীমাতা। ওয়ানির কাছে পৌঁছতেই দেখলাম হাতে শাড়ি ও মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মহিলারা। বুঝলাম দেবীকে এখানে শাড়ি নিবেদন করতে হয়। কিনলাম একটি শাড়ি ও নৈবেদ্যর ডালা।

পাহাড়ের ওপর দেবীর মন্দির। চারশো পঁয়ষট্টিটি সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হবে দেবীর মন্দিরে। মন্দিরের সিঁড়ি দিয়ে ওঠার আগে চোখে পড়ল রাস্তার দু’ধারে অজস্র মণিহারী ও খাবারের দোকান। ত্র্যম্বকেশ্বরেও এত দোকানপাট চোখ পড়েনি। তখনও বুঝিনি কী পরিমাণ ভক্তসমাগম হয় এখানে। সিঁড়ি দিয়ে অনেকটাই উঠে গেলাম ওপরে। কিন্তু তার পর দেখি বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হল দর্শনার্থীদের। বেশ খনিকক্ষণ এ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখি সিঁড়ি দিয়ে ক্রমশ উঠে আসছে মানুষের ঢল। ওঠার সিঁড়ি এটি। নামা অন্য দিক দিয়ে। শেষে এমন হল তিলধারণের জায়গা নেই। মনে ভয় হল, নিজের জন্য যতটা নয়, শিশুপুত্র ও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য আরও বেশি। এর পর অতিরিক্ত ভিড় হলে নীচে যাওয়ার পথও রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই আর বিলম্ব না করে ঠিড় ঠেলে নেমে এলাম নীচে। তখনও পিলপিল করে লোক উঠছে ওপরে। স্থানীয় মানুষের ভিড়ই বেশি। নীচে এসে দেখি, দুজন পুলিশ যাচ্ছে ওপরে। তাদের বললাম ভিড় বাড়ছে, সামাল দিন। ওরা আমার কথা শুনল কি শুনল না। বুঝলাম এই ভিড় নতুন নয় ওদের কাছে। আমার পতিদেবতা ওই ভিড়েও রয়ে গিয়েছিলেন। দেবীদর্শন করে এক ঘণ্টা পর উনি ফিরলেন উত্‌সর্গীকৃত শাড়ি আর মালা নিয়ে। এ ক্ষেত্রে আমার আর দেবীদর্শন হল না ঠিকই, তবে সেই আপ্তবাক্যটি খেটে গেল—অর্থাত্‌ পতির পুণ্যে পুণ্যলাভ হল। মনে মনে প্রণাম জানালাম দেবীর উদ্দেশে। তিনিও তো মা। নিশ্চয়ই বুঝবেন আমার অপারগতা। তবে মন্দির কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে সনির্বদ্ধ অনুরোধ, মন্দিরের এই মানুষের ঢল যেন তাঁরা দৃঢ়হাতে নিয়ন্ত্রণ করেন, নতুবা ভবিষ্যতে বিপদ ঘটবে না এ কেউ বলতে পারে না। আমার মতো অনেকেই ওখানে শিশু বা বয়স্ক মানুষদের নিয়ে যান। রবিবার, মঙ্গলবার ও শুক্রবার হল মায়ের বার। ওই দিনগুলোয় ভিড় বেশি হয়। এ কথা জেনেছিলাম স্থানীয় দোকানিকে জিগ্যেস করে।

দেবীদর্শন না হলেও প্রকৃতি স্বয়ং মন ভুলিয়ে দিয়েছিল। প্রকৃতির পাহাড় ঘেরা অনাবিল সৌন্দর্য, এও তো ঈশ্বরের সৃষ্টি। এর মধ্যেই আমি খঁুজে পেলাম মাতা ভগবতীকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

paramita mukhopadhyay nasik ramkund
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE