Advertisement
E-Paper

সেনার সাত দিনের খরচেই স্কুল পাবে সব শিশু

দেখা হল দু’জনের। বাবা ও মেয়ের। বাবা ভারতীয়। মেয়ে পাকিস্তানি। দু’টি আলাদা ধর্মের, দু’টি ভিন্ন রাষ্ট্রের বাবা-মেয়েকে এক করল একটি মঞ্চ। অসলোর নোবেল পুরস্কারের মঞ্চ। বাবা কৈলাস সত্যার্থী। মেয়ে মালালা ইউসুফজাই। বুধবার নোবেলের মঞ্চ থেকে দুই পড়শি দেশের বিভেদ ঘুচিয়ে দিলেন কৈলাস। সহাস্যে বললেন, “ইন্ডিয়ান ফাদার মেট পাকিস্তানি ডটার।” আর হাততালিতে ফেটে পড়ল প্রেক্ষাগৃহ।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৭
যুগ্ম। অসলোর মঞ্চে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী মালালা ইউসুফজাই এবং কৈলাস সত্যার্থী। বুধবার।  ছবি: এএফপি

যুগ্ম। অসলোর মঞ্চে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী মালালা ইউসুফজাই এবং কৈলাস সত্যার্থী। বুধবার। ছবি: এএফপি

দেখা হল দু’জনের। বাবা ও মেয়ের। বাবা ভারতীয়। মেয়ে পাকিস্তানি। দু’টি আলাদা ধর্মের, দু’টি ভিন্ন রাষ্ট্রের বাবা-মেয়েকে এক করল একটি মঞ্চ। অসলোর নোবেল পুরস্কারের মঞ্চ।

বাবা কৈলাস সত্যার্থী। মেয়ে মালালা ইউসুফজাই। বুধবার নোবেলের মঞ্চ থেকে দুই পড়শি দেশের বিভেদ ঘুচিয়ে দিলেন কৈলাস। সহাস্যে বললেন, “ইন্ডিয়ান ফাদার মেট পাকিস্তানি ডটার।” আর হাততালিতে ফেটে পড়ল প্রেক্ষাগৃহ। বিদেশের মঞ্চ থেকে হিন্দিতেই সকলকে শান্তির মন্ত্রে সামিল হওয়ার ডাক দিলেন সত্যার্থী। বেদের উচ্চারণে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান এক করলেন সবাইকে। বললেন, পৃথিবীর কোনও প্রান্তেই যেন কোনও শিশুকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না করা হয়। এক সপ্তাহে পৃথিবীতে সামরিক খাতে যে খরচ হয়, তা এক করলে বিশ্বের প্রত্যেকটি শিশুকে স্কুলে পাঠানো সম্ভব, মন্তব্য কৈলাসের।

কুড়ি বছর আগে হিমালয়ের পাদদেশে সত্যার্থীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল এক রুগ্ণ শিশুর। অবাক বিস্ময়ে সে প্রশ্ন করেছিল, “আমাদের হাতে সবাই কেন যন্ত্র তুলে দেবে? বন্দুক তুলে দেবে? পৃথিবী কি এতই গরিব, যে বই আর খেলনা দিতে পারে না আমাদের?” কৈলাসের সঙ্গে দেখা হয়েছিল সুদানের এক কিশোরেরও। জঙ্গিরা তাকে অপহরণ করার পর বাধ্য করে নিজের পরিবার ও বন্ধুদের খুন করতে। তার প্রশ্ন ছিল, “আমার অন্যায়টা কোথায়?” আবার দাসবৃত্তির জন্য পাচার হওয়া কলম্বিয়ার এক মহিলা সত্যার্থীকে প্রশ্ন করেছিলেন, “আমি তো কোনও দিন স্বপ্ন দেখতে পারিনি। আমার বাচ্চাও কি তা পারবে না?”

সেই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে, সেই সব হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের সন্ধানে যাত্রা শুরু করেছিলেন সত্যার্থী। যে যাত্রা আজ নোবেলের মঞ্চে শেষ নয়, বরং নতুন উদ্যমে শুরু হল।

শুরুটা প্রায় ৫০ বছর আগে। তখন কৈলাস নিজেই এক স্কুল পড়ুয়া। নিজের স্কুলের বাইরে একটি বাচ্চা ছেলেকে অন্যের জুতো পালিশ করতে দেখে ১০ বছরের কৈলাস শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করে, “ও কেন বাইরে কাজ করছে? ও কেন আমার সঙ্গে স্কুলে আসবে না?” সে দিন কেউ কোনও উত্তর দিতে পারেননি। এমনকী, ছেলেটির চর্মকার বাবার কাছেও এর কোনও সদুত্তর ছিল না। তাঁর সন্তানও যে স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারে, সেই ধারণাই ছিল না তাঁর। “আমরা তো শুধু কাজ করার জন্যই জন্মেছি” আক্ষেপ করেছিলেন সেই বাবা।

সেই নির্মম বাস্তব ১০ বছরের কৈলাসকে শিশুশ্রম নিয়ে ভাবতে শুরু করায়। যে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ লড়ে যাচ্ছে মালালা। দুষ্কৃতীদের হামলার বিরুদ্ধে যে এক দিন গর্জে উঠেছিল, “আমিই মালালা” বলে। আর আজ সেই ডাক মিশে গিয়েছে সাড়ে ছ’কোটি স্কুল-ছুট মেয়ের সঙ্গে। তাই নোবেল মঞ্চ থেকে মালালা ঘোষণা করল, “আমি সেই সাড়ে ছ’কোটি মেয়েদের এক জন যারা শৈশবে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমি সেই সব মেয়ের আওয়াজ।”

যে আওয়াজের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে কৈলাসের গলাতেও, “নীরবতার মধ্যে যে শব্দ, কান্নার মধ্যে যে অসহায়তা, অদৃশ্যের মধ্যে যে দৃশ্যমান মুখ, আমি তাদের সকলের প্রতিনিধি।” এ ভাবেই উপমহাদেশের দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের দুই শান্তি দূত কখন যেন এক আমি থেকে বহু আমিতে পরিণত হলেন।

উৎসবের সুরেও রাষ্ট্রের গণ্ডি ভুলে এক হল গোটা দুনিয়া। তাই আমজাদ আলি খান আর রাহত ফতে আলি খানের সুরে দুটি দেশ এসে দাঁড়াল মহামানবের সাগরতীরে।

শিশু অধিকার রক্ষায় নীতি, শিশু শিক্ষার খাতে খরচ বাড়ানো নোবেলের মঞ্চ থেকে সব দেশের প্রশাসনের কাছে এই আবেদন করলেন কৈলাস সত্যার্থী।

তাঁর বক্তব্যের শেষে তিনি অন্ধকার থেকে পৌঁছতে চেয়েছেন এক আলোর দেশে। মৃত্যু থেকে পৌঁছতে চেয়েছেন অমৃতের দেশে। যদিও, সব চাওয়া মোটেই পূরণ হয় না সকলের। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ দু’জনকে অভিনন্দন জানালেও, মালালার ইচ্ছে কিন্তু পূরণ হয়নি। তার শখ ছিল পুরস্কার পাওয়ার দিন অন্তত এক সঙ্গে দেখা মিলবে মোদী আর নওয়াজ শরিফের। কিন্তু সে ইচ্ছে আর মিটল কই!

malala yosafzai kailash satyarthi nobel peace prize oslo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy