কেন্দ্রে তৃতীয় বিকল্প জোটের সরকার গঠনের ডাক না দিলেও এ বার নির্বাচনী ইস্তাহারে কংগ্রেস ও বিজেপির থেকে পৃথক বিকল্প নীতি ঘোষণা করবে সিপিএম। আজ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ইস্তাহারের খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বার নির্বাচনী ইস্তাহার চূড়ান্ত করার কাজটি করবেন পলিটব্যুরোর সদস্যরা। সিপিএম সূত্রের খবর, ইস্তাহারে ভূমি সংস্কার, সরকারি বিনিয়োগ, কর্পোরেট সংস্থার কাছ থেকে কর আদায়, প্রতিটি পরিবারকে মাসে ২ টাকা কিলো দরে ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্যের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে কড়া ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, নির্বাচনী সংস্কার, মহিলা সংরক্ষণ এবং বেসরকারি ক্ষেত্রেও তফসিলি জাতি-উপজাতিদের জন্য পদ সংরক্ষণের কথাও বলবে সিপিএম। করা হবে বিদেশি বিনিয়োগেরও বিরোধিতা।
ইস্তাহার নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি লোকসভা ভোটের জন্য আজ প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল সিপিএম। মোট ১৩টি রাজ্যের ২৫টি আসনের জন্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই তালিকায় অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ, কেরল বা ত্রিপুরার মতো রাজ্য নেই। অন্ধ্র বা তামিলনাড়ুর মতো যে সব রাজ্যে সিপিএম একটি-দু’টি হলেও আসন জেতার আশা করছে, সেখানকার প্রার্থীতালিকাও এখনও চূড়ান্ত হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল, এই দুই রাজ্যেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার পরে বামফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। তার পরেই চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করা হবে। সিপিএম সূত্রের খবর, ৫ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের যে কয়েকটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম নিয়ে এখনও জটিলতা রয়েছে, তার মধ্যে আছে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর। উত্তরপ্রদেশ থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক মহিলা সদস্যকে ওই আসনে প্রার্থী করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রকাশ ও বৃন্দা কারাট-সহ সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটা বড় অংশও দলের মহিলা সমিতির ওই গুরুত্বপূর্ণ নেত্রীকে ব্যারাকপুরে প্রার্থী করার পক্ষে। তাঁদের যুক্তি, একে মহিলা মুখ। তার উপরে ব্যারাকপুরের মতো হিন্দিভাষী অধ্যুষিত আসনে কানপুরের ওই নেত্রীকে প্রার্থী করলে তা দলের পক্ষে সহায়ক হবে। বিশেষ করে যেখানে উত্তর ২৪ পরগণায় অন্তর্কলহ সিপিএম নেতৃত্বের কাছে মাথাব্যথার বিষয়, সেখানে বাইরের কোনও প্রার্থী দিলেই লাভ হতে পারে বলে মনে করেন নেতৃত্বের এই অংশ।
উত্তর ২৪ পরগনার ওই কেন্দ্রে তড়িৎ তোপদারকে আর প্রার্থী করতে উৎসাহী নয় আলিমুদ্দিন। তড়িৎবাবুর পরিবর্তে একাধিক নাম উঠলেও তার অনেকগুলি নিয়েই আপত্তি তুলেছে জেলা কমিটির একাংশ। আলিমুদ্দিনের প্রথম সারির নেতারা আবার ওই কেন্দ্রের জন্য বাইরে থেকে কাউকে উড়িয়ে আনার পক্ষপাতী নন। এ বারের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের ফাঁকে দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনাতেও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীকেই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। তার পরে বামফ্রন্টে আলোচনা করে নাম ঘোষণা করা হবে।
আজ প্রথম দফায় যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে অসম, হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের তিনটি করে আসন রয়েছে। অসমের বরপেটা আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক উদ্ধব বর্মণ। হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ থেকে দু’টি করে আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও, একটি করে আসনের নাম রয়েছে গুজরাত, লক্ষদ্বীপ, ওড়িশা এবং উত্তরাখণ্ড থেকে।
নির্বাচনের আগে কোন রাজ্যের কী পরিস্থিতি, তা নিয়েও এ দিন কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে কোন দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা হবে, তা নিয়েও প্রাথমিক ভাবে আলোচনা হয়েছে। সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, কংগ্রেস ও বিজেপির থেকে পৃথক আর্থিক নীতির সন্ধান দিতে পারেন এক মাত্র বামেরা। অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে যে বিকল্প জোট তৈরির চেষ্টা চলছে, সেখানেও কিছু বিকল্প নীতি নিয়ে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। সিপিএমের ইস্তাহারেও সেই বিকল্প নীতিরই সন্ধান দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy