নিজের বাড়িতে হকারদের সঙ্গে আলোচনায় রাহুল গাঁধী। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
বিক্ষিপ্ত ভাবে একটা বা দুটো নয়, লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগে থেকে প্রায় সবক’টি জনমত সমীক্ষাই জানাচ্ছে, কংগ্রেসের এ বার ভরাডুবির আশঙ্কা প্রবল। অভূতপূর্ব ফল করবে বিজেপি তথা এনডিএ। এই সব সমীক্ষা যখন কংগ্রেসের নিচুতলায় আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে, তখন আজ দলকে বরাভয় দেওয়ার চেষ্টা করলেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেসের সহ-সভাপতির কথায়, “কংগ্রেস একশোটি আসন পাবে বলে যে সব সমীক্ষা দাবি করছে, তা তামাশা মাত্র। আসলে ভোটের আগে কংগ্রেস কর্মীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য এই সব সমীক্ষা দেখানো হচ্ছে। তাই এতে কোনও রকম গুরুত্ব না দিয়ে আপনাদের আরও আগ্রাসী হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত।”
লোকসভা ভোট প্রচারের অঙ্গ হিসেবে এ বার গুগল হ্যাংআউটের মাধ্যমে সরাসরি ভোটারদের সঙ্গে কথা বলবেন রাহুল। সেখানে ভোটারদের প্রশ্নের সরাসরি জবাবও দেবেন তিনি। তার আগে আজ এই সোশ্যাল ওয়েবসাইটটিকে ব্যবহার করে পরীক্ষামূলক ভাবে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
কর্মীদের সঙ্গে রাহুলের এই আলাপচারিতার গোড়াতেই অসমের এক যুব কংগ্রেস নেতা রাহুলকে বলেন, “সম্প্রতি তামাম জনমত সমীক্ষা দেখাচ্ছে যে, লোকসভা ভোটে কংগ্রেস একশোটির বেশি আসন পাবে না। নরেন্দ্র মোদীই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। এই অবস্থায় আপনার কৌশল কী?”
জবাবে রাহুল বলেন, “২০০৪ সালেও প্রতিটি জনমত সমীক্ষা জানিয়েছিল যে কংগ্রেস অত্যন্ত খারাপ ফল করবে। কিন্তু সেই সব সমীক্ষার ফলকে ভেস্তে দিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করেছিল কংগ্রেস। একই ভাবে গত লোকসভা ভোটেও সব সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণিত করে আগের থেকে প্রায় দ্বিগুণ আসন পেয়েছিল কংগ্রেস।
তাই ভোটে যাওয়ার আগে কোনও আগাম জল্পনা নিয়ে মাতামাতির প্রয়োজন নেই।” একই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “জনমত সমীক্ষা কোনও আইন নয় যে তা মানতেই হবে। কেন্দ্রে সরকার কাজ করেছে। দুর্নীতি দমনে পদক্ষেপ করেছে। সামাজিক পরিবর্তনের জন্য কর্মসূচী রূপায়ণ করেছে। এর পর কংগ্রেসের ভরাডুবির প্রশ্ন নেই।”
প্রসঙ্গত, গত প্রায় ৬ মাস ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যে সব জনমত সমীক্ষা দেখানো হচ্ছে, তার ফল নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে আশঙ্কার পাশাপাশি ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে। এই ধরনের জনমত সমীক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য তারা বারবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থও হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, যে হেতু প্রায় সবক’টি সমীক্ষাতেই কংগ্রেসের ভরাডুবির কথা বলছে, সে কারণেই কংগ্রেস এই নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চায়। সমীক্ষার ফল অন্য রকম হলে কংগ্রেস হয়তো এমনটা করতো না। যদিও কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রকাশ্যে এ কথা স্বীকার করছেন না। প্রকাশ্যে তাঁদের অনেকেই বলছেন, প্রতি দিন একটা না একটা সংবাদমাধ্যমে সমীক্ষার হিসেব দেখিয়ে আসলে কংগ্রেস বিরোধিতাই জোরদার করা হচ্ছে। এর পিছনে কিছু স্বার্থান্বেষী শিবির কাজ করছে বলেও তাঁদের অভিযোগ।
মূলত সেই কথাটিই আজ কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের সামনে বলে তাঁদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন রাহুল। তাঁকে মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি তার জবাব এড়িয়ে রাহুল বলেন, “আপনাদের চোখেমুখে যে তেজ ও উৎসাহ দেখছি, তা ধরে রাখতে পারলে কংগ্রেসকে কেউ হারাতে পারবে না।”
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দলের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় রাহুল আজ বারবারই বলেন, ইউপিএ সরকারের সাফল্যের বিষয়গুলিকে নিয়ে আরও আগ্রাসী হয়ে প্রচারে নামতে হবে কংগ্রেসকে। তাঁর কথায়, “গত লোকসভা ভোটে বিজেপি তাদের হারের জন্য কোন বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করে, তা হয়তো কংগ্রেসের অনেকেই জানেন না। সেটি হল, একশো দিনের কাজের প্রকল্প রূপায়ণ। ওই প্রকল্প হোক বা খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প এগুলি শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত রূপায়ণ নয়। তার সঙ্গে আবেগ এবং ভালবাসাও জড়িয়ে রয়েছে। তাই সমীক্ষায় যা-ই বলা হোক না কেন, এই ভালবাসাই সেই সব সমীক্ষাকে উড়িয়ে দেবে।”
রাহুল শিবির সূত্রে বলা হচ্ছে, আগামী দিনে কংগ্রেস কর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে এ ভাবেই সরাসরি কথা বলবেন রাহুল। লোকসভা ভোটের বিভিন্ন পর্যায়ে বারবার এ ধরনের আলোচনার ব্যবস্থা করা হবে। তার আগে আজ যে দলীয় কর্মীদের সামনে মহড়া দিলেন, তারও একটা কারণ রয়েছে বলেই কংগ্রেসের একটি সূত্রে বলা হচ্ছে। সূত্রটির বক্তব্য, ক’দিন আগেই একটি সংবাদ চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে খুব মধুর অভিজ্ঞতা হয়নি রাহুলের। তাই কী ধরনের প্রশ্ন ভোটাররা তাঁকে করতে পারেন, এবং তা কী ভাবে তিনি সামলাবেন, সেই প্রস্তুতি নিতেই আজ দলীয় কর্মীদের সঙ্গে প্রথমে কথা বলে নেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy