Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাবা মরে যেও না, শেষ আকুতি আয়লানের

সামনে একটার পর একটা বিশাল ঢেউ। তারই মধ্যে ভিড়ে ঠাসা শরণার্থী বোঝাই নৌকায় কোনও রকমে বাবার হাত ধরে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়েছিল একরত্তি আয়লান। দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে ঢেউয়ের দাপট থেকে রক্ষা করতে গিয়ে যখন নিজেই ডুবতে বসেছিলেন আবদুল্লা কুর্দি, তখন বাবাকে দেখে চিৎকার করে বলে উঠেছিল খুদে আয়লান, ‘‘বাবা, মরে যেও না।’’

স্মরণ। মায়ের সঙ্গে আয়লান। টিমা কুর্দির বাড়িতে। ছবি: রয়টার্স।

স্মরণ। মায়ের সঙ্গে আয়লান। টিমা কুর্দির বাড়িতে। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
টরন্টো শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৫৫
Share: Save:

সামনে একটার পর একটা বিশাল ঢেউ। তারই মধ্যে ভিড়ে ঠাসা শরণার্থী বোঝাই নৌকায় কোনও রকমে বাবার হাত ধরে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়েছিল একরত্তি আয়লান। দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে ঢেউয়ের দাপট থেকে রক্ষা করতে গিয়ে যখন নিজেই ডুবতে বসেছিলেন আবদুল্লা কুর্দি, তখন বাবাকে দেখে চিৎকার করে বলে উঠেছিল খুদে আয়লান, ‘‘বাবা, মরে যেও না।’’

আয়লানের এক পিসি, কানাডার টরন্টোর বাসিন্দা ফতিমা কুর্দি এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চিরতরে চলে যাওয়ার আগে এই ছিল আয়লানের শেষ কথা। কান্না ভেজা গলায় ফতিমা বলেছেন, ‘‘আবদুল্লা বাঁচার শেষ চেষ্টা করেছিল। এক দিকে দুই ছেলে ও স্ত্রী। আর অন্য দিকে, নিজেকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা। এই দুইয়ের মধ্যে প়ড়ে যখন হাঁসফাঁস করছিল আবদুল্লা, সে সময়ই আয়লান বাবাকে বাঁচানোর জন্য চেঁচিয়ে ওঠে।’’

আবদুল্লার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে ফতিমার। তখনই আবদুল্লা বোনকে জানিয়েছেন, আয়লান ও গালিপের হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। যখন উথালপাথাল ঢেউয়ের থেকে বাচ্চাদের আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন, তখনই বুঝতে পারেন যে বড় ছেলে গালিপ আর নেই। ছোট ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখতে পান, আয়লানের চোখ থেকে রক্ত ঝরছে। ওই দৃশ্য দেখে চোখ বুজে ফেলেন আবদুল্লা। অন্য দিকে তাকিয়ে দেখতে পান, জলের মধ্যে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন স্ত্রী। আবদুল্লার কথায়, ‘‘সর্বশক্তি দিয়ে আমি ওঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি।’’

ফতিমার আক্ষেপ, ‘‘দুর্ঘটনার মাত্র দু’সপ্তাহ আগেই আমার সঙ্গে দুই ভাইপোর ফোনে কথা হয়েছিল। ইউরোপ পৌঁছে গালিপকে একটা সাইকেল কিনে দেবে বলেছিল আবদুল্লা। কিন্তু তা আর হল না।’’ ফতিমা জানিয়েছেন, গ্রিস পর্যন্ত আসার খরচ আবদুল্লাকে দিয়েছিলেন তিনি। ফতিমার আক্ষেপ, ‘‘আমি যদি ওঁদের ওই সাহায্য না পাঠাতাম, তা হলে হয় তো এই দুর্ঘটনা ঘটত না।’’

আবদুল্লার আর এক বোন টিমা কুর্দি, যিনি আবদুল্লাদের জন্য কানাডায় থাকার বন্দোবস্ত করেছিলেন, তিনি ব্রিটিশ কলম্বিয়ার বাড়িতে বসে জানিয়েছেন, ভাইকে আর কোবানে থাকতে দেবেন না তিনি। তাঁকে কানাডায় নিজের কাছে নিয়ে আসবেন। তবে এই মুহূর্তে কোবান ছাড়তে রাজি নন আবদুল্লা। স্ত্রী ও দুই ছেলের স্মৃতি সম্বল করেই বাকি জীবনটা কোবানেই কাটিয়ে দিতে চান তিনি। অতি কষ্টে কান্না চেপে টিমা বলেছেন, ‘‘আমি জানি, আবদুল্লা কোবান ছেড়ে এখানে আসতে চাইবে না। কিন্তু এক দিন ঠিক আমি ওঁকে এখানে নিয়ে আসব।’’

নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ইউরোপ চলে আসতে চেয়েছিলেন কুর্দি পরিবার। ইউরোপ আসার জন্য যথেষ্ট অর্থ ছিল না বলে ভাইকে সাহায্য করেছিলেন টিমা। সাহায্য করেছিলেন বলে এখনও আক্ষেপ করে যাচ্ছেন টিমা। কারণ তিনি সাহায্য না করলে আবদুল্লাদের যাত্রা সম্ভব হতো না। আর সেটা হলে, এই দুর্ঘটনাও ঘটত না। আজ গ্রিসে পৌঁছনোর পরে মৃত্যু হয়েছে এক দু’মাসের শরণার্থী শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গ্রিক পুলিশ। তুরস্ক থেকে গ্রিসের আগাথোনিসি দ্বীপে পৌঁছনোর পরে শিশুটিকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়েও যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abdullah Kurdi Syria Canadian Citizenship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE