দুঃস্বপ্নের পর কেটে গিয়েছে গোটা একটা বছর। ভূমিকম্পের আশঙ্কা পার করে একটু হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে নেপাল। কিন্তু আতঙ্ক এখনও পিছু ছাড়েনি মানুষগুলোর। মাথার ওপরের ছাদটুকু এখনও স্থায়ী হয়নি যে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষা বলছে, প্রায় তিরিশ লক্ষ মানুষ এখনও পথের ধারে অস্থায়ী আস্তানা তৈরি করে রয়েছেন।
গত বছর ২৫ এপ্রিল। ভয়াবহ ভূমিকম্পে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল হিমালয়ের কোল-ঘেঁষা ছোট্ট দেশটা। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ছুঁয়েছিল ন’হাজার। আহত বাইশ হাজার। ঝাঁকুনি-দৈত্যের তাণ্ডবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল লাখ দশেক ঘরবাড়ি। মূল শহর অঞ্চলের থেকেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল গ্রাম। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ শুরু হলেও, পৌঁছনো যায়নি বহু প্রত্যন্ত গ্রামে। পৌঁছয়নি পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীও। ত্রিপল টাঙিয়ে পথের ধারে রাত জেগেছেন হাজারো মানুষ।
আর এই ছবিটা খুব একটা বদলায়নি এই এক বছরেও। ‘‘একটা বর্ষা, আর একটা শীত খোলা আকাশের নীচে পার করেও এখনও বেঁচে আছি। আরও একটা বর্ষা এসে গেল প্রায়। জানি না, আর কত দিন’’ —আকাশের দিকে মুখ তুলে বললেন এক গ্রামবাসী।এই ভয়েই আপাতত সিঁটিয়ে তাঁরা। ফের বর্ষা এসে গেল প্রায়। গত বছর কম্পনের প্রাথমিক ধাক্কা সামলানোর আগেই ঘরছাড়া মানুষগুলোকে ভাসিয়েছিল প্রবল বর্ষা। তথ্য বলছে, বর্ষা পার করতে পারলেও শীতে মারা গিয়েছেন দশ-বারো জন বৃদ্ধ।
সরকারি সূত্রের খবর, পুনর্গঠনের জন্য যতটা অর্থ বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য হিসেবে এসে পৌঁছেছে, তা-ও ঠিকমতো কাজে লাগানো যায়নি। দেশের রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে বারবার বাধা পেয়েছে পুনর্গঠনের কাজ। বাধা হয়েছে আইনি জটিলতাও। ভূমিকম্পে যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁরা ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারি সাহায্য পেলেও, যাঁরা ভাড়াবাড়িতে থাকতেন, তাঁদের বাসস্থানের কোনও সুরাহা হয়নি।
পরিসংখ্যান বলছে, নেপালের প্রতি পাঁচ জন বাসিন্দার মধ্যে চার জনই জানিয়েছেন, তাঁদের বাসস্থানের পুনর্গঠনের ব্যাপারে সরকার কোনও উদ্যোগই দেখায়নি। বছর পার করেও তাই সেই তিমিরেই থেকে গিয়েছে নেপালের বাসিন্দাদের অবস্থান। প্রকৃতির অনিয়মে ভূমিকম্পের ভয় কেটেছে, কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম মেনে ঘটে চলা ঋতু পরিবর্তনও এখন আতঙ্কের কারণ তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy