Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
লক্ষ্য ছিল গণহত্যাই: রাষ্ট্রপুঞ্জ

রোহিঙ্গা নিধনে বিচারের মুখে সেনা জেনারেলরা

এক বছর আগে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে পুলিশ ছাউনি এবং সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’-র (আরসা) সদস্যদের বিরুদ্ধে।

বাস্তুহারা: বাংলাদেশের বালুখালি শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা। সোমবার। ছবি: এপি।

বাস্তুহারা: বাংলাদেশের বালুখালি শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা। সোমবার। ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
জেনিভা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩৬
Share: Save:

বহু দিন আগেই রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত মুখপাত্র বলেছিলেন, মায়ানমারে ‘জাতিনিধনের’ ঘটনা ঘটেছে। সোমবার আরও জোর দিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের তদন্তকারীরা জানালেন, ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যেই’ মায়ানমারের সেনাবাহিনী অকাতরে খুন এবং ধর্ষণ চালিয়ে গিয়েছে। আর এই নৃশংস অপরাধের জন্য মায়ানমার সেনাবাহিনীর কম্যান্ডার-ইন-চিফ এবং পাঁচ জন জেনারেলের বিরুদ্ধে বিচার চালানো উচিত বলেও সাফ জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।

এক বছর আগে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে পুলিশ ছাউনি এবং সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’-র (আরসা) সদস্যদের বিরুদ্ধে। যার পর থেকে রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের অবাধে খুন-ধর্ষণ-আশ্রয়হীন করে তোলার পাল্টা অভিযোগ ওঠে দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। দেশছাড়া হতে হয় অন্তত সাত লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিমকে।

এখন রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, ‘আউং সান সুচি-র নেতৃত্বাধীন সরকার বিদ্বেষমূলক কথা প্রচারে বাধা দেয়নি, তথ্য নষ্ট করেছে, রাখাইন, কাচিন এবং শান প্রদেশে সেনা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে গেলেও তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। আর সেটা করতে গিয়েই ভয়ঙ্কর অপরাধের পথে হেঁটেছে সেনা।’ কুড়ি পাতার রিপোর্টে বিস্তারিত বলা হয়েছে, আরসা জঙ্গিদের হামলার জেরে নিরাপত্তা রক্ষার দোহাই দিয়ে সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম তছনছ করেছে। কিন্তু নিরাপত্তা রক্ষার নামে সেনার প্রত্যাঘাত ধারে ও ভারে অনেক বেশি ভয়াবহ। সুচির সরকার অবশ্য বেশির ভাগ অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে। পশ্চিম রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়ে ট্রানজিট সেন্টার তৈরি করা হলেও রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, এখনও তা নিরাপদ নয়।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সংজ্ঞায়, কোনও নাগরিক, সম্প্রদায়, জাতি অথবা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সামগ্রিক বা আংশিক ভাবে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে যা যা করা হয়, সেটাই গণহত্যা। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এই গণহত্যার নজির বিরল। বসনিয়া, সুদানে এক সময়ে গণহত্যার কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়া, ইরাক এবং সিরিয়ায় ইয়েজিদি সম্প্রদায়ের উপরে আইএস জঙ্গিদের নির্যাতন গণহত্যার শামিল।

মায়ানমারে তদন্ত চালিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরপেক্ষ তথ্য-সংগ্রহকারী মিশন বলেছে, ‘‘রাখাইন প্রদেশে যে ভাবে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা অন্যত্র গণহত্যার সঙ্গেই তুলনীয়।’’ আর এই সূত্রে সেনা কম্যান্ডার এবং অন্য জেনারেলদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণের কথাও জানানো হয়েছে রিপোর্টে। প্রকাশ্যে আনার আগে এর আগাম কপি পাঠানো হয়েছিল মায়ানমার সরকারের কাছে। তারা এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। রিপোর্টে রয়েছে, নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী এক সময়ের জননেত্রী সুচি ‘‘জনতাকে রক্ষা করতে সরকারের প্রধান হিসেবে তাঁর অবস্থান, তাঁর নৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কোনও বিকল্প খুঁজে বার করার চেষ্টা করেননি।’’

তদন্তকারীদের মতে, নিরাপত্তা পরিষদের উচিত সব ষড়যন্ত্রকারীকে আন্তর্জাতিক অপরাধদমন আদালতে দায়ী করা অথবা অ্যাড হক ট্রাইবুনাল তৈরি করে সেখানে বিচার চালানো। এই সূত্রে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের উপরে নানা নিষেধ চাপানোর সুপারিশ করার কথাও বলা হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদকে। তদন্তকারীদের দাবি, হিংসা ছড়াতে ব্যবহার করা হয়েছিল ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়াকে। সোমবারই ফেসবুক মায়ানমারের বেশ কিছু সেনা অফিসারের প্রোফাইল মুছে দিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ৮৫৭ জন সাক্ষীর সঙ্গে বাংলাদেশ এবং অন্যত্র কথা বলে, নানা ভিডিয়ো, ছবি, তথ্য ও উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে এই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Trial Rohingya Mayanmar Mass Killing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE