Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্বকাপের মেজাজ

লুলা ফিরুন, জয়ে ফিরবে ব্রাজিলও

ভোর থেকেই চরম ব্যস্ততা ছিল কাল। দুপুর ৩টের সময় খেলা শুরু। তার আগে সব কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে হবে। সকাল থেকেই আমাদের পাড়ার মোড়ে এক ভদ্রলোক ব্রাজিলের জার্সি, ভুভুজেলা বিক্রি করতে বসেছেন।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

চৈতালি চট্টোপাধ্যায় (নেমারের দেশ থেকে)
সাও পাওলো শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮ ০৩:৩৮
Share: Save:

ভোর থেকেই চরম ব্যস্ততা ছিল কাল। দুপুর ৩টের সময় খেলা শুরু। তার আগে সব কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে হবে। সকাল থেকেই আমাদের পাড়ার মোড়ে এক ভদ্রলোক ব্রাজিলের জার্সি, ভুভুজেলা বিক্রি করতে বসেছেন। এক মহিলা খদ্দের পেয়ে ‘গ্যাব্রিয়েল জেসুস হ্যান করেগা...ত্যান করেগা’ এই জাতীয় বাণীও দিচ্ছেন। বাস ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, আপিসে যাওয়া কর্মচারী, কচি ছেলেমেয়ে এমনকি, পোষ্য কুকুরও হলদে-সবুজে পরিবেষ্টিত। কেউ কেউ প্রচুর বিয়ার, চিপসের প্যাকেট কিনেছেন। বাড়িতে খেলার সুবাদে পার্টি যে! দুপুর গড়াতেই রাস্তায় জ্যাম। রেস্তরাঁ, বার উপচে পড়ছে। এক ঘণ্টা আগে থেকে লোকে টেবল ‘বুক’ করে বসে আছে, যাতে টিভির সামনে জায়গাটা হাতছাড়া না হয়।

এ দেশে ৩৪ বছরের বাসিন্দা এক বাঙালি পরিবারে আমাদেরও নিমন্ত্রণ ছিল। ওই বাড়িতেই ওঁরা ব্রাজিলের ১৯৯৪ এবং ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী ছিলেন। অতএব ওই বাড়ি থেকে দেখলে ব্রাজিল জিতবে, সেই আশায় দুপুর দুপুর আমরাও হাজির। খেলা শুরু হল ভুভুজেলা আর বাজি ফাটার আওয়াজে। প্রথম গোল খাওয়ার পরেই নিস্তব্ধতার শুরু। তার পরে আর এক গোল। হাফ টাইমে কোথাও আওয়াজ নেই। সকলের চোখে মুখে অস্থিরতা, মন্ত্রের মতো গুনগুন করে চলেছেন, “ভাই ব্রাসিউ...ভাই ব্রাসিউ”— যার অর্থ এগিয়ে চলো ব্রাজিল ...এগিয়ে চলো।’’ এক গোল শোধ হওয়ার পর হইচই হলেও শেষরক্ষা হল কই?

খেলা শেষের পর কথা বলছিলাম আমার এক ছাত্রীর সঙ্গে। মেয়েটির জন্ম মোজী নামে ছোট্ট একটি শহরে, নেমারের জন্মও সেই শহরেই। কয়েক দিন আগে মেয়েটি নেমারের গড়াগড়ি নিয়ে লজ্জিত ছিল, বলত সে কথা। কাল রাতে দেখি বলছে, “নেমার বেশ ভাল খেলেছে। কিন্তু জেসুস কিছুই খেলতে পারেনি। ফ্রান্সের কাছে হারলে মানতে পারতাম। কিন্তু বেলজিয়ামকে হারানো উচিত ছিল। একটাই সান্ত্বনা, গত বার জার্মানির কাছে সাত গোল খাওয়ার মতো বাজে খেলেনি ব্রাজিল”। হ্যাঁ। গত বার সাত গোল খাওয়ার পরে যা দেখেছিলাম, লোকের চোখেমুখে সেই দুঃখ বা হাউহাউ করে কান্না আমার অন্তত চোখে পড়েনি। খেলা শেষের পরেও আড্ডার শেষ নেই। হাবভাব যেন একটা অনুষ্ঠান চলছিল, সেটা শেষ হল মাত্র। শুধু রাস্তায় ১২-১৩ বছরের দুটো ছেলে ব্রাজিলের জার্সি পরা, বলছিল, ‘‘ফুটবল নিয়ে কথা বলতেই ভাল লাগছে না।’’

যা বুঝলাম, খেলা শেষের পর মিনিট পনেরো দুঃখে চুপচাপ ছিলেন অনেকেই, তার পরেই শুরু হল নেমার, প্রেসিডেন্টদের নিয়ে মজার ‘মিম’। আগেই লিখেছিলাম, ফুটবল নিয়ে লোকে মেতে আছে এখন, বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেই রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হবে। ঠিক তাই! বর্তমানে অস্থায়ী দক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট তেমেরকে ব্রাজিলিয়ানদের একটুও পছন্দ নয়। এখন বলছে, ব্রাজিল হেরে গিয়ে কী কী লাভ হল। বলছে, ফুটবল বিশ্বকাপ জেতা ঐতিহ্যের ব্যাপার, তার সঙ্গে দক্ষিণপন্থী নেতা তেমেরের নাম জুড়ে থাকবে না, ব্রাজিলের কোচ তিতের বক্তৃতা শুনতে হবে না আর নেমারও নিজেকে পেলের মতো ফুটবল সম্রাট হিসেবে দাবি করতে পারবে না— নিশ্চিন্তি! কেউ কেউ জানালেন, ২০০২ সালে ব্রাজিল যে বার বিশ্বকাপ পেয়েছিল, ভোটে জিতেছিলেন বামপন্থী নেতা লুলা। লুলা আবার ফিরে আসুন, বিশ্বকাপ জিতবে ব্রাজিলও।

অক্টোবরে আসন্ন ভোটের সঙ্গে কাতারে আগামী বিশ্বকাপের দিন গুনতে শুরু করেছে ব্রাজিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

FIFA world cup 2018 Brazil Belgium
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE