Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চিনের সঙ্গে প্রাচীন বাণিজ্য যোগেই বাছাই মমল্লপুরম

কূটনাতির কর্তারা বলছেন এই মমল্লপুরম-কূটনীতির সুপ্রাচীন প্রেক্ষাপটটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। পল্লব রাজাদের সময় মমল্লপুরম, কাঞ্চিপুরমের মতো শহরগুলির সঙ্গে বাণিজ্য সংযোগ ছিল পূর্ব চিনের ফুজিয়ান প্রদেশের।

মমল্লপুরম। ছবি: পিটিআই।

মমল্লপুরম। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৯ ০১:২৮
Share: Save:

ভারত-চিন আদি বাণিজ্যপথ এবং প্রাচীন বুদ্ধ-করিডরের স্মৃতিকে সামনে এনে আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে মমল্লপুরম। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তেরোশো বছরের পুরনো এই দ্বিপাক্ষিক সংযোগকে প্রতীক হিসাবে কাজে লাগিয়ে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির নতুন বার্তা চিনা প্রেসিডেন্টকে দিতে চাইছে মোদী সরকার।

আগামিকাল দুপুরে চেন্নাই পৌঁছচ্ছে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর বিশেষ বিমান। সেখান থেকে সোজা মমল্লপুরম যাবেন তিনি। ঘরোয়া মেজাজের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাঁর চব্বিশ ঘণ্টার সফরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সঙ্গে থাকছে বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ, মন্দির এবং প্রাচীন স্থাপত্য পরিদর্শনের ব্যবস্থা। উপকূলবর্তী এই শহরের নিসর্গ এবং প্রাচীন নিদর্শনকে ঘিরেই চলবে মোদী-শি সংলাপ।

কূটনাতির কর্তারা বলছেন এই মমল্লপুরম-কূটনীতির সুপ্রাচীন প্রেক্ষাপটটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। পল্লব রাজাদের সময় মমল্লপুরম, কাঞ্চিপুরমের মতো শহরগুলির সঙ্গে বাণিজ্য সংযোগ ছিল পূর্ব চিনের ফুজিয়ান প্রদেশের। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এক সময় এই ফুজিয়ান প্রদেশেরই গভর্নর ছিলেন শি। সূত্রের খবর, কাল তাঁর কাছে ভারত ও প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চল সম্পর্কে নিজের দর্শন সামগ্রিক ভাবে তুলে ধরবেন মোদী। চিনকে আহ্বান জানাবেন বিরোধিতা না করে, এই উদ্যোগে শামিল হতে। বোঝানো হবে, তাতে আখেরে বাণিজ্যিক লাভ দু’দেশেরই। সমুদ্র রাজনীতিতে কাউকে বাদ দিয়ে নয়, চিন-সহ সংশ্লিষ্ট সব রাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়েই এগোতে চায় দিল্লি। মোদী সরকারের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির সারমর্ম বোঝাতে মমল্লপুরমের ভূকৌশলগত এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটি অনিবার্য ছিল বলেই দাবি করছেন বিদেশ মন্ত্রকের অনেকে।

মমল্লপুরম নামটি এসেছে মমল্লন থেকে, তামিলে যার অর্থ যোদ্ধা। পল্লব রাজা (৬৩০-৬৬৮ খ্রীষ্টাব্দ) নরসিংহবর্মন পরিচিত ছিলেন মমল্ল নামে। তাঁর রাজত্বকালেই চিনা বৌদ্ধ পরিব্রাজক হিউয়েন সাং পৌঁছেছিলেন পল্লব রাজধানী কাঞ্চিপুরমে, যা মমল্লপুরম থেকে মাত্র ৬৬ কিলোমিটার দূরে। কাঞ্চিপুরম থেকে মমল্লপুরমেও যান তিনি। তামিলনাড়ুর এই উপকূল থেকেই বুদ্ধধর্ম উড়াল দিয়েছিল চিনের গুয়াংঝাও প্রদেশে। দক্ষিণ ভারতের পল্লব এবং চোল রাজবংশের সঙ্গে চিনের দক্ষিণ পূর্ব উপকূলের (বিশেষ করে গুয়াংঝাও এবং ফুজিয়ানের) নৌ-বাণিজ্য সম্পর্কও ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে নরসিংহবর্মনের সময় থেকেই। ইতিহাস বলছে, তামিল-চিন এই সংযোগ পল্লব বংশের পরেও চোল সাম্রাজ্যে আরও বাড়ে। সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতকে ওলন্দাজ, ফরাসি এবং ব্রিটিশদের সঙ্গে চিনের বাণিজ্যেও বড় ভূমিকা নেয় এই করমণ্ডল উপকূল।

ওয়াকিবহাল শিবিরের মতে, মমল্লপুরমকে বেছে নেওয়ার আরও একটি কারণ হল এর প্রাচীন ঐতিহ্য। ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করে এই শহরকে। চিনের উহানে প্রথম ঘরোয়া সংলাপের পর কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এমন একটি জায়গারই খোঁজ চলছিল। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মনে করেন বিদেশিদের সামনে ভারতের সব প্রান্তগুলিকেই তুলে ধরা প্রয়োজন। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

China Mamallapuram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE