ছবি: এএফপি।
‘মহান মার্কিনদের’ চাকরিতে ভাগ বসানো রুখতে এখন অন্তত কিছু দিনের জন্য কাজের খোঁজে অন্য দেশের কাউকে আমেরিকার মাটিতে পা রাখতে দিতে চান না প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প!
মার্কিন প্রেসিডেন্টের টুইট, “অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ের এই সময়ে মহান মার্কিন নাগরিকদের (গ্রেট আমেরিকান সিটিজ়েন্স) চাকরি সুরক্ষিত রাখা জরুরি। সেই লক্ষ্যে আপাতত আমেরিকায় অভিবাসন (ইমিগ্রেশন) বন্ধ করার জন্য সরকারি নির্দেশে সই করতে চলেছি আমি।”
ট্রাম্পের ওই নির্দেশের নিশানা কারা, সে বিষয়টি স্পষ্ট হবে তার খুঁটিনাটি সামনে এলে। কিন্তু ইতিমধ্যেই এই ঘোষণার জেরে কপালে ভাঁজ মার্কিন মুলুকে কাজ করা অনাবাসী ভারতীয়দের অনেকের। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। ভারতে ওই শিল্পের সংগঠন ন্যাসকম জানিয়েছে, সবার আগে ওই নির্দেশিকার খুঁটিনাটিতে চোখ রাখতে চায় তারা। বিষয়টির দিকে নজর রাখছে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রকও। সূত্রের খবর, ট্রাম্পের তরফ থেকে এমন আশঙ্কা আছে বলেই সম্প্রতি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন চেয়ে তিনি হুমকি দেওয়ার পরেও পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় হাঁটেনি সাউথ ব্লক।
In light of the attack from the Invisible Enemy, as well as the need to protect the jobs of our GREAT American Citizens, I will be signing an Executive Order to temporarily suspend immigration into the United States!
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) April 21, 2020
অবৈধ ভাবে আমেরিকার মাটিতে ঢুকে পড়া অভিবাসীরা যে তাঁর চক্ষুশূল, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তা রুখতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্তে দেওয়াল তোলার কাজেও জোর দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেই শেষ নয়। নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে রক্ষণশীল অর্থনীতির জয়গান গেয়ে মার্কিন মুলুকের চাকরি আরও বেশি ‘ভূমিপুত্রদের’ দেওয়ার পক্ষেও বহু বার সওয়াল করেছেন তিনি। থেকে-থেকেই এইচ-১বি ভিসার সংখ্যা কমার সম্ভাবনার কথা শোনা গিয়েছে তাঁর জমানায়। বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জন্য আমেরিকার যে-ভিসার (বছরে ৮৫ হাজার) দৌলতে সে-দেশে বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করতে যান বহু ভারতীয়। তার উপরে প্রবল ভাবে নির্ভরশীল ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। তাই ট্রাম্পের এই ঘোষণায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে তারা।
আরও পড়ুন: আরও খারাপ দিন আসতে চলেছে, সতর্ক করল হু
এই মুহূর্তে মার্কিন মুলুকে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় নিযুক্ত এক কর্মী যেমন বলছিলেন, “প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের খুঁটিনাটি না-জানা পর্যন্ত ঠিক কাদের তা আঘাত করবে, বলা শক্ত। শুধু কি নতুন অভিবাসনে ছেদ পড়বে, নাকি কোপ পড়বে পুরনোদের উপরেও, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।” কিন্তু তাঁদের আশঙ্কা, এমনিতেই এইচ-১বি ভিসার সংখ্যা কমাতে উৎসুক ট্রাম্প এখন করোনা-সঙ্কটের জেরে বেহাল কাজের বাজারকে ব্যবহার করে তা সত্যিই করতে পারেন। মার্কিন শ্রম দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু লকডাউন শুরুর পর থেকেই কাজ খুইয়েছেন ২.২ কোটি মানুষ। অনেকের ধারণা, এই ক্ষোভের আঁচ থাকতে থাকতেই নিজের অভিবাসন-বিরোধী নীতি আরও বেশি করে দ্রুত চাপিয়ে দিতে চান ট্রাম্প।
তবে এই সিদ্ধান্তের জন্য দেশের মাটিতেও প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে প্রেসিডেন্টকে। বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, যথাসময়ে গুরুত্ব বুঝে পদক্ষেপ না-করার ফলেই আজ করোনা এমন ভয়াল চেহারা নিয়েছে মার্কিন মুলুকে। আর সেই ক্ষোভ সামাল দিতে উগ্র জাতীয়তাবাদকে ঢাল করতে চাইছেন ট্রাম্প। যা আসলে তাঁর নিজের ব্যর্থতা চাপা দেওয়ার কৌশল।
আরও পড়ুন: দ্বিগুণ হবে ক্ষুধার্ত, শঙ্কা রাষ্ট্রপুঞ্জের
অনেকে বলছেন, এই মুহূর্তে জীবন বাজি রেখে আমেরিকায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা করছেন ভারত-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বহু ডাক্তার। করোনা-সঙ্কট কাটিয়ে মার্কিন অর্থনীতিকে ছন্দে ফেরানোর উপায় খুঁজতে খোদ ট্রাম্প যে-কমিটি গড়েছেন, তাতেই রয়েছেন গুগলের মূল সংস্থা অ্যালফাবেটের সিইও সুন্দর পিচাই, মাইক্রোসফটের কর্ণধার সত্য নাদেল্লা-সহ ছয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত! এর পরেও ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্ন তাই উঠছেই।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy