Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

ছিল অষ্টমীর ত্রিধারা, হয়ে গেল দুপুরের সল্টলেক!

আনন্দ-উদ‌্‌যাপনে অনেকটাই জল ঢেলে দিয়েছে করোনা-আতঙ্ক।

আতঙ্কে মাস্ক পরে ঘুরছেন হংকংয়ের মানুষ। ছবি: রয়টার্স

আতঙ্কে মাস্ক পরে ঘুরছেন হংকংয়ের মানুষ। ছবি: রয়টার্স

মোহর
হংকং শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:১৭
Share: Save:

এখানকার প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে শীতকালটা বড্ড প্রিয়। এপ্রিল মাস পর্যন্ত বেশ ঠান্ডা থাকে। তাই সোয়েটার গায়ে চাপিয়ে কফি খাওয়া এবং বারবিকিউয়ের মরসুমও চলতে থাকে তত দিন। এরই মধ্যে চিনা নববর্ষের ধুমধাম। এ বার অবশ্য সেই আনন্দ-উদ‌্‌যাপনে অনেকটাই জল ঢেলে দিয়েছে করোনা-আতঙ্ক।

রোজ সকালে ঘুম ভাঙছে একটা চাপা ভয় নিয়ে— ‘আজ খবরের কাগজ খুললে কে জানে কত দেখব আক্রান্তের সংখ্যা?’ হংকংয়ে ইতিমধ্যে এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আর চিনের মূল ভূখণ্ডে তো মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক সংস্থাই কর্মীদের বাড়িতে বসে কাজের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। এমনিতে নববর্ষের জন্য জানুয়ারির শেষে এক সপ্তাহের ছুটি থাকে। কিন্তু এ বার শুনলাম ৩ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা হয়েছে সব স্কুলে। অনির্দিষ্টকাল বাড়ানো হতে পারে সেই ছুটি।

চিনা নববর্ষের ছুটিতে দেশে গিয়েছিলাম। ফিরলাম গত সপ্তাহে। কলকাতা বিমানবন্দর থেকেই দেখি, সব যাত্রীর মুখে মাস্ক, ব্যাগ থেকে ঝুলছে স্যানিটাইজ়ারের শিশি। হংকংয়ে নেমে দেখি সব সময়ে ভিড়ে ঠাসা এই বিমানবন্দর বেশ ফাঁকা-ফাঁকা। শহরের প্রাণকেন্দ্র সেন্ট্রালে পৌঁছে বুঝলাম— চমক আরও বাকি! ফাঁকা ধু-ধু সেন্ট্রাল। দোকানপাট সব খোলা রয়েছে, কিন্তু লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। যেন দুপুরবেলার সল্টলেক। মনে পড়ে গেল, কয়েক মাস আগে যখন প্রথম হংকংয়ে এসেছিলাম, এই সেন্ট্রালে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল, যেন অষ্টমীর সন্ধের ত্রিধারা!

তবে হংকং এক অদ্ভুত শহর। এখানে যাঁরা অনেক দিন ধরে আছেন, তাঁদের মুখেই শুনেছি, ২০০২-এ এখানে সার্স সংক্রমণ বয়ে এনেছিল মৃত্যু ও আতঙ্ক। ২০১৮-এ তাণ্ডব চালিয়েছে সুপার টাইফুন মাংখুট। দু’বারই কিন্তু দমানো যায়নি এখানকার মানুষজন বা প্রশাসনকে। গত সাত-আট মাস ধরে রাজনৈতিক বিক্ষোভ চলছে। রাতে ভেঙে দেওয়া হয়েছে ফুটপাত, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে মেট্রো স্টেশন। কিন্তু রাতারাতি সিভিক কর্মীরা কাজ করে সারিয়ে ফেলেছেন রাস্তা, ধুয়ে ফেলেছেন ছাই।

করোনাভাইরাসের এই ভীতির মধ্যেই দেখছি, ক্রমে ক্রমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে শুরু করেছেন এখানকার পাঁচমিশেলি মানুষজন। হাতে দস্তানা পরে আর মুখ মুখোশে ঢেকে অনেকেই এই সপ্তাহে কর্মস্থলে যাওয়া শুরু করেছেন। স্কুলের শিক্ষকেরা শুরু করে দিয়েছেন অনলাইন ক্লাস। পড়ানোর ভিডিয়ো আপলোড করছেন তাঁরা, আর পড়ুয়ারা বাড়িতে বসে সেই সব ভিডিয়ো ডাউনলোড করে লেখাপড়া করছে। অনেক স্কুল আবার বাস ভাড়া করে প্রতি সোমবার পড়ুয়াদের বাড়িতে হোমওয়ার্ক পাঠাচ্ছে। আবার প্রতি শুক্রবার সেই হোমওয়ার্ক সংগ্রহ করে শিক্ষক-শিক্ষিকার বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে। সপ্তাহান্তে সে সব দেখে রাখছেন মাষ্টারমশাই-দিদিমণিরা।

স্কুলে-স্কুলে এই তৎপরতাই বলে দিচ্ছে, করোনাভাইরাসের ভয় দেখিয়ে হংকংবাসীদের দমিয়ে রাখা যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Hong Kong
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE