Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মনে ভারত, কমলার কাছে আপন আফ্রো-মার্কিন সত্তা

৫৪-র অভিজ্ঞ সেনেটরের কি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতো জাতি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও আত্মসমীক্ষা রয়েছে? ওবামা তাঁর অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন আত্মজীবনীতে।

কমলা হ্যারিস

কমলা হ্যারিস

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:৫০
Share: Save:

সম্ভাব্য প্রথম মহিলা মার্কিন প্রেসিডেন্ট! অথবা প্রথম আফ্রো-মার্কিন মহিলা... কিংবা ভারতীয়-মার্কিন মহিলা বা প্রথম এশীয়-মার্কিন মহিলা— ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী হিসেবে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ে নামার পর থেকে কমলা হ্যারিসের নামের পিছনে জুড়েছে এত রকমের তকমা। তবে কমলার বার্তা, ‘‘আমি যা, আমি তাই। আমি তাতেই স্বচ্ছন্দ।’’

৫৪-র অভিজ্ঞ সেনেটরের কি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতো জাতি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও আত্মসমীক্ষা রয়েছে? ওবামা তাঁর অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন আত্মজীবনীতে। কমলা বলছেন, নিজেকে কোন বর্গে ফেলা উচিত, তা নিয়ে তিনি কোনওদিনই খুব বেশি ভাবেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা এ সব নিয়ে ভাবুন। আমি সাধারণ মার্কিন নাগরিক।’’ সদ্য প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘দ্য ট্রুথস উই হোল্ড’ –এ এই সেনেটর লিখেছেন, ‘‘আমার মা খুব ভাল করে জানতেন, তিনি দু’জন কৃষ্ণাঙ্গ কন্যাসন্তানকে বড় করে তুলছেন। জানতেন, তাঁর নতুন দেশ মায়া (বোন) আর আমাকে কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে হিসেবেই দেখবে। মা ঠিক করেছিলেন, মেয়েদের আত্মবিশ্বাসী গর্বিত কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক হিসেবেই বড় করে তুলবেন।’’

শৈশব থেকে এই পরিচয় নিয়ে তাঁর কোনও অসুবিধে নেই। সে ব্যাপারে নিজের হিন্দু অভিবাসী মাকে ধন্যবাদ দেন কমলা। একদা চেন্নাইবাসী মা তাঁর কাছে বড় অনুপ্রেরণার জায়গা। জানান, তাঁর মা কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতিকে আপন করেছিলেন, নিজের মেয়েদেরও তার মধ্যেই বড় করেছেন। একই সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচয় ছিল কমলার, তবে মূলগত ভিত্তি ছিল আফ্রো-মার্কিন জীবনটাই।

কমলার মা, শ্যামলা গোপালন নাগরিক অধিকার রক্ষার আন্দোলনে অনুপ্রেরণা খুঁজে পেয়েছিলেন। ১৯৬০-৭০-এর সেই সময়কার আফ্রো-মার্কিন সংস্কৃতিও ভালবাসতে শুরু করেছিলেন। জামাইকার কৃষ্ণাঙ্গ স্বামীর সঙ্গে মিছিলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পরে একাও পথে নেমেছেন। বিচ্ছেদের পরে মেয়েদের নিয়েও স্লোগান দিয়েছেন। কমলা তখন খুবই ছোট।

মেয়েদের ভারতের বাড়িতেও নিয়ে এসেছিলেন শ্যামলা। তাঁদের ভারতীয় খাবার রান্না করে খাইয়েছেন, ভারতীয় গয়নায় সাজিয়েছেন। মায়ের বাবা ছিলেন স্বাধীনতা

সংগ্রামী। দাদুরও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে কমলার মধ্যে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও মা আফ্রো-মার্কিন সংস্কৃতিকেই মেয়েদের বড় হওয়ার ভিত্তি করে দিয়েছিলেন। ক্যালিফর্নিয়ার বার্কলে-তে থাকাকালীন কমলা প্রার্থনা করতেন আফ্রো-মার্কিন গির্জায়। অভিজাত শ্বেতাঙ্গ পাড়া থেকে অন্য কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের সঙ্গে গিয়েছেন এলিমেন্টারি স্কুলে। পরে ওয়াশিংটনে কৃষ্ণাঙ্গ-প্রধান হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা। কমলা-মায়াকে শিশু বয়স থেকে চিনতেন শ্যারন ম্যাকগ্যাফি (৬৭)। তাঁর মতে, ‘‘ভারতীয় সং‌স্কৃতি ওরা ভুলে যায়নি। তবে বড় হওয়াটা কৃষ্ণাঙ্গ শিশু থেকে কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসেবেই।’’ ভারতীয়-মার্কিনদের একটি বড় অংশেরও মত, অতীতে নিজের দক্ষিণ এশীয় সত্তা সে ভাবে মেলে ধরেননি কমলা।

সাত বছর সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এবং তার পরে ক্যালিফর্নিয়ায় ছ’বছর অ্যাটর্নি জেনারেল। ২০১৬ সালে সোজা সেনেটে নির্বাচিত। ধীরে ধীরে নিজের ব্যক্তিজীবন এখন আলোচনার কেন্দ্রে এনেছেন কমলা হ্যারিস। এক সাক্ষাৎকারে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিষয়টা আমাকে নিয়ে নয়। আমি যাঁদের প্রতিনিধি, তাঁদের নিয়ে।’’ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর রাজনৈতিক প্রচারে এ ধরনের কথা বললে জনতার বুঝতে সুবিধে হয় যে, প্রার্থী যা করছেন, সেটা কেন করছেন— মনে করেন সেনেটর। নিজের কথা ঢাক পিটিয়ে না বলার শিক্ষাই পেয়েছিলেন ছোটবেলায়। তাই এখন আত্মজীবনীতে সে কথা বলা।

প্রচারের প্রথম দিনে তাঁর কাছে প্রশ্ন আসে, ‘‘আপনি আফ্রো-মার্কিন। তবে ভারতীয়-মার্কিনও তো বটে?’’ কমলা বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই।’’ আপনি নিজেকে কী ভাবে দেখেন? হেসে তাঁর উত্তর, ‘‘আমার বই পড়েননি? আমি গর্বিত মার্কিন নাগরিক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kamala Harris Us president
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE