Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অকল্যান্ডের এফএমেও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র

মহালয়ার ভোরে রেডিয়োয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র! প্রবাসীর পুজোয় এ তো দারুণ এক প্রাপ্তি।

হ্যামিল্টনে একচালার প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

হ্যামিল্টনে একচালার প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

মিতালি রায়
হ্যামিল্টন, নিউজ়িল্যান্ড শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:০৯
Share: Save:

গত বছর অক্টোবরে এক দিন বার্তা ফুটে উঠল এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে— ‘৭ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার ভোর পাঁচটা থেকে সাতটা ১০৬.২, এফএমে মহিষাসুরমর্দিনী সম্প্রচারিত হবে। সকলকে শোনার অনুরোধ জানাই।’

মহালয়ার ভোরে রেডিয়োয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র! প্রবাসীর পুজোয় এ তো দারুণ এক প্রাপ্তি। তবে গত বছর প্রথম নয়। এখানে বেশ কয়েকটা এফএম চ্যানেলে মাঝেমধ্যেই ভারতীয় অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। এখানকার উৎসাহী বাঙালিদের তৎপরতায় অনেক বারই এই সময়ে এফএমে মহালয়া সম্প্রচারিত হয়েছে।

দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ নিউজ়িল্যান্ডে দুর্গাপুজো হয় বসন্ত কালে। জুলাই-অগস্টের বৃষ্টিভেজা শীতের পরে ঝলমলে রোদ দেখা যায় সেপ্টেম্বরে। রাস্তার দু’ধারে টোটো ফুলের ঝাড়গুলো মৃদু হাওয়ায় দোলে, ঠিক যেন কাশবন। পাইন, সিট্রাস, গোলাপ, গন্ধরাজ আর জুঁই ফুলের সুবাসে ভরে যায় চারপাশ। ক্যামিলিয়া গাছের পাতাগুলো স্থল-পদ্মের মতো গোলাপি ফুলে ঢেকে যায়। প্রকৃতির এই সম্ভারের আবহেই আগমনীর আয়োজন শুরু করে দিই।

দুর্গাপুজোর জন্য আলাপ-আলোচনা আরম্ভ হয়ে যায় অগস্ট থেকেই। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে অনেকেই দেশে যান। তখন কিনে আনা পুজোর বাজার এই সময়েই নেড়েচেড়ে দেখি। দেশে ফেলে আসা সব কিছুর জন্য মন কেমন করে— শরতের আকাশ, শিউলির সৌরভ, মায়ের হাতের নাড়ু, আপনজনদের কলরব...।

এখানে প্রায় সব দুর্গাপুজোই সপ্তাহান্তে হয়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বোধন থেকে বিসর্জন সেরে ফেলতে হয়। অকল্যান্ড, হ্যামিল্টন, টুর‌্যাঙ্গা, ওয়েলিংটন, পামারস্টোন, দানেদিন ইত্যাদি মিলিয়ে অনেক পুজো হয় সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারের এই মেঘের রাজ্যে। বিদেশ-বিভুঁইয়ে বিদেশি বেশভূষায় আর বিদেশি চলনে-বলনে ঢেকে থাকা বাঙালিরা এই ক’দিন প্রাণ ভরে বাঙালিয়ানা উপভোগ করে।

শুক্রবার বিকেলে অফিস ছুটি হলেই ‘স্টোরেজ’ থেকে প্রতিমা নিয়ে এসে সবাই মিলে সাজানো শুরু করে দিই। গত চার বছর নানা স্কুলের অডিটোরিয়ামে পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। এ বার পুজো হবে এখানকারই একটি অ্যাংলিকান স্কুলে।

শাঁখ, ঘণ্টা আর উলুধ্বনি জানান দেয়, পুজো আরম্ভ হয়ে গিয়েছে। সিডি-তে বাজতে থাকে ঢাকের বাদ্যি। পুজোর পৌরোহিত্য করেন এক অধ্যাপক-দাদা। প্রাণ প্রতিষ্ঠা, কলাবউ স্নান, নবপত্র, সপ্তমী পুজো, সন্ধিপুজো— সবই চলতে থাকে পরপর। তার সঙ্গেই চলে নৈবেদ্য আর ভোগ-প্রসাদের জোগাড়। ‘ফুড কমিটি’ বাড়িতে নিরামিষ ভোজ রান্না শুরু করে দেয়। ‘মুশকিল আসান দাদা’ হন্যে হয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ছুটোছুটি শুরু করে দেন। ‘মাংস কমিটি’র সেক্রেটারি পেঁয়াজ কাটার জন্য ‘স্বেচ্ছাসেবক’ খুঁজে রাখেন আগেভাগেই। পুষ্পাঞ্জলির পরে গরম নিরামিষ ভোজ অমৃতের মতো লাগে। ছোটবেলায় পাড়ার বারোয়ারি পুজোয় তো এ রকমই মজা হত!

রবিবারের সকালে দর্পণ বিসর্জন হয়। প্রতিমা বরণ আর সিঁদুর খেলার পরেই মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি অন্তর্হিত হয়ে যান ‘স্টোরেজ কন্টেনারে’। এখানে প্রতিমা নিরঞ্জনের উপায় নেই, তাই ‘প্যাক আপ’-এর সময়েই বিসর্জনের বিষাদ আমাদের সবাইকে আচ্ছন্ন করে রাখে। আনন্দ-অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে, যেন এই বিষণ্ণতার চিকিৎসা করতেই, আসরে নামেন ডাক্তারবাবুদের ‘মাংস কমিটি’, তোয়াজ করে রাঁধা বিরাট এক হাঁড়ি মাংস নিয়ে।

ছোটবেলার রবিবারগুলোর নস্ট্যালজিয়া মাখা সেই ভূরিভোজের সঙ্গেই চলতে থাকে সামনের বছর পুজো কবে হবে, সেই নিয়ে আলোচনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

2019 Durga Puja Special Auckland
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE