চাদ, মিশরের পর এ বার মরক্কো। আফ্রিকার তৃতীয় দেশ হিসাবে বোরখা নিষিদ্ধ করতে চলেছে এই মুসলিম রাষ্ট্র। মরক্কোর স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে বোরখার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শুধু বোরখা পরাই নয়, বোরখা তৈরি এবং বেচা-কেনাও নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আধিকারিক সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘‘বোরখা পরা, তৈরি করা এবং তার আমদানি-রফতানি করা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। মরক্কোর সমস্ত শহরেই একই নিয়ম বলবৎ হবে।’’ কিন্তু কেন আচমকা এই সিদ্ধান্ত? ওই আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘‘অনেক দুষ্কৃতী বোরখাকে সহজ আড়াল হিসাবে ব্যবহার করে। আততায়ীরা বোরখার আড়ালে থেকে অনেক দুষ্কর্ম করে অনায়াসেই। তাই দেশের সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
সাধারণত মুসলিম মহিলারা পাঁচ ধরনের বোরখা ব্যবহার করেন। খিমার, বোরখা, নিকাব, হিজাব এবং চাদর। মাথা, গলা ও ঘাড়ের অংশ ঢাকা পোশাককে বলে খিমার। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মুখটাই থাকে অনাবৃত। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা পোশাককে বলে বোরখা। এই পোশাকে পাতলা কাপড় দিয়ে চোখও ঢাকা থাকে। নিকাবের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র খোলা থাকে চোখ দু’টি। হিজাব অনেকটা খিমারের মতোই। তবে মাথা ও গলা ঢাকা থাকে এই পোশাকে। চাদর অনেকটা নিকাবের মতো। এক্ষেত্রে তৈরি পোশাক নয়, বরং একটা আলগা চাদর দিয়ে মাথা ও মুখের কিছুটা অংশ ঢেকে রাখেন মুসলিম মহিলারা।
মরক্কোর বর্তমান রাজা ষষ্ঠ মহম্মদও নিকাব বা বোরখা জাতীয় সম্পূর্ণ ঢাকা পোশাকের বিপক্ষে। উদারমনস্ক মহম্মদ চান মেয়েরা হিজাব বা খিমার জাতীয় পোশাক পরুন। তবে কাসাব্লাঙ্কার মতো মরক্কোর বেশ কিছু এলাকা এখনও বেশ গোঁড়া। এখনও এই সমস্ত অঞ্চলে মহিলাদের বোরখার মতো সারা শরীর ঢাকা পোশাক ছাড়া অন্য কিছু পরার অধিকার নেই।
আরও পড়ুন: ক্যানসারকে হারিয়ে ১৭ বার মিসক্যারেজের পর চার সন্তানের মা হলেন ইনি
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, দেশের প্রতিটি রাজ্যে যাতে যথাযথ ভাবে এই নিষেধাজ্ঞা মান্য করা হয়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। দক্ষিণ মরক্কোর টেরোড্যান্টে রয়েছে বোরখা তৈরির একাধিক কারখানা। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত ‘স্টক’ খালি করে দিতে বলা হয়েছে। মরক্কোর বাণিজ্য নগরী কাসাব্লাঙ্কায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে সরকারের তরফে এর মধ্যেই শুরু করা হয়েছে প্রচার।
এর আগে নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইৎজারল্যান্ড, ইতালি, বুলগেরিয়ায় নিষিদ্ধ হয়েছে বোরখা। মিশরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরখা পরা নিষিদ্ধ। ২০১৫-র জুনে আত্মঘাতী হামলার পর থেকে চাদেও নিষিদ্ধ হয়েছে সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা এই পোশাক।
ইতিমধ্যেই মরক্কো সরকারের এ হেন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন কট্টরপন্থী সালাফি সংগঠন। এই পদক্ষেপ সফল হলে নিকাবের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের তরফে কিছু জানানো হয়নি। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের পর সালাফি নেতা শেখ হাসান কেট্টানি ফেসবুকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে লেখেন, ‘‘এমনটা করা হলে বিপর্যয় নেমে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy