Advertisement
০৭ মে ২০২৪
মুলার রিপোর্টে ট্রাম্পকে ‘ছাড়’

‘বাধা দিয়েছেন কি না, সত্যিই বলা মুশকিল

চারশো পাতার এই রিপোর্টের একটি ‘সম্পাদিত সংস্করণ’ প্রকাশ করেছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার।

 সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩৮
Share: Save:

পাঁচশোটি সাক্ষাৎকার, পাঁচশোটি তল্লাশি পরোয়ানা এবং ২৩০০টি লিখিত ও মৌখিক সাক্ষ্যের পরে, ২৩ মাস তদন্তের শেষে প্রকাশিত হল মুলার রিপোর্ট। বহু প্রতীক্ষিত এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘তদন্তকারীদের সামনে এমন কিছু কঠিন পরিস্থিতি ছিল যার ফলে সত্যিই বলা মুশকিল যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রুশ হস্তক্ষেপ বিষয়ে তদন্তে বাধা দিয়েছিলেন কি না। হোয়াইট হাউসের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার যে-টুকু আইনি স্বাধীনতা ছিল, তাতে রুশ হস্তক্ষেপের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রচারের সম্পর্ক ছিল কি না, বলা সম্ভব নয়।’’ মুলার বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস চাইলে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যেতে পারে।’’

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠায় এ নিয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশেষ কৌঁসুলি রর্বাট মুলারকে। রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশে সেই নির্বাচনের রিপাবলিকান প্রার্থী, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বা তাঁর কোনও ঘনিষ্ঠ সহযোগীর হাত ছিল কি না, বা তাঁরা পরবর্তী সময়ে এই তদন্তে কোনও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কি না, তা-ই ছিল এই তদন্তের মুখ্য বিষয়।

আজ চারশো পাতার এই রিপোর্টের একটি ‘সম্পাদিত সংস্করণ’ প্রকাশ করেছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। রিপোর্ট প্রকাশের দেড় ঘণ্টা আগে, স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ন’টায় বিচারবিভাগের দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। বলেন, ‘‘বিশেষ কৌঁসুলির রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট যে রাশিয়া ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে নাক গলিয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-ও যে এই হস্তক্ষেপে যুক্ত ছিলেন তা এই রিপোর্ট থেকে নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না।’’ ২৫ মার্চ মুলার রিপোর্টের চার পাতার সারাৎসার প্রকাশ করার সময়ে একই কথা বলেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বারের এই ‘ব্যাখ্যার’ সমালোচনা করে ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, মুলারের ‘অস্পষ্ট’ রিপোর্টকে একটা স্পষ্ট ট্রাম্প-পন্থী চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এক মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘২৬ মিনিটের এই সাংবাদিক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রসঙ্গে সাত বার ‘যোগসাজশ নেই’, ‘বাধা দেননি’ শব্দগুলি উচ্চারণ করেছেন তিনি।’’

খেল খতম...

রিপোর্টটিতে মূলত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দশটি ‘আচরণ’ খুঁটিয়ে দেখেছেন রবার্ট মুলার। তাঁর মতে, ‘‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ স্পষ্ট।’’ কিন্তু একই সঙ্গে মুলারের বক্তব্য, ‘‘আমার যেটুকু আইনি স্বাধীনতা ছিল, তাতে রুশ হস্তক্ষেপের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রচারের সম্পর্ক ছিল কি না, বলা সম্ভব নয়।’’ রিপোর্টটি থেকে হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন স্পষ্ট। মুলার লিখেছেন, ‘‘আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শুনে চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়েছিলেন ট্রাম্প। মাথায় হাত দিয়ে বলেছিলেন, আমার প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ। আমি শেষ হয়ে গেলাম।’’

সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীনই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়ে ওঠেন টুইটার-প্রিয় প্রেসিডেন্ট। প্রথমে পোস্ট করেন একটি ভিডিয়োর কোলাজ। ৫৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিয়োয় অসংখ্য বার ‘নো কলিউশন’ বা ‘যোগসাজস নেই’ বলে চলেছেন ট্রাম্প। কখনও পাশে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, কখনও বা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। কখনও তিনি এয়ার ফোর্স ওয়ানে চড়ছেন, কখনও হাঁটছেন হোয়াইট হাউসের লনে। মুখে একই বুলি— ‘নো কলিউশন’,

‘নো কলিউশন’, ‘নো কলিউশন’! তিন ঘণ্টার মধ্যে সেই ভিডিয়োর দর্শক সংখ্যা ১১ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।

এখানেই শেষ নয়। কিছু ক্ষণের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পোস্ট করেন আর একটি টুইট। জনপ্রিয় ইংরেজি টিভি সিরিজ় ‘গেম অব থ্রোনস’-এর আদলে সেখানে লেখা ‘‘গেম ওভার। কোনও যোগসাজশ ছিল না, তদন্তে কোনও বাধা দেওয়াও হয়নি। যাঁরা শুধু ঘৃণা ছড়ান এবং কট্টরপন্থী ডেমোক্র্যাটদের জন্য— খেল খতম!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE