ভারত উপহার দিয়েছে চারটি ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’। উচ্ছ্বসিত আফগানিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী। দেশের অশান্ত দক্ষিণাংশে তালিবান বিরোধী অভিযান চালাতে বেগ পেতে হচ্ছিল আফগান সেনাকে। কিন্তু আফগানিস্তানকে ভারতের দেওয়া ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’ অর্থাৎ এমআই-২৫ অ্যাটাক হেলিকপ্টার এ বার কাঁপুনি ধরিয়েছে তালিবানের বুকেও। একই সঙ্গে ঘোর চিন্তায় পাকিস্তানও। আকাশ থেকে কীভাবে আগুন ঝরায় এই হেলিকপ্টার গানশিপ, তা ভালই জানে যে কোনও দেশের সেনা। ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের বন্ধুত্ব যে ভাবে বাড়ছে, তাতে অনেক দিন ধরেই উদ্বেগে পাকিস্তান। এবার নিজেদের প্রতিরক্ষা নীতি ভেঙে আফগানিস্তানকে ভারত বিধ্বংসী হেলিকপ্টার দিয়ে দেওয়ায়, দু’দিক দিয়ে ঘেরাও হওয়ার আশঙ্কা দেখছে ইসলামাবাদ।
উড়ন্ত ট্যাঙ্কের গ্যালারি দেখতে ক্লিক করুন:
‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’-এর বিধ্বংসী রূপ
এমআই-২৫ হেলিকপ্টার রাশিয়ায় তৈরি। ভারতীয় বিমানবাহিনীতে তার আধুনিকতম সংস্করণগুলিই রয়েছে। এমআই-২৫ এবং এমআই-৩৫-এর একাধিক স্কোয়াড্রন তৈরি রেখেছে ভারত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই রাশিয়ার এমআই কপ্টারগুলিকে ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’ বলে ডাকা হয়। ট্যাঙ্কের যেমন বিধ্বংসী রূপ দেখা যায় যুদ্ধক্ষেত্রে, এমআই-২৫ আকাশ থেকে অনেকটা সেই রূপেই দেখা দেয়। বলছেন সমর বিশারদরা। ভারী গোলাবর্ষণে প্রতিপক্ষের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া, প্রবল বেগে গুলিবর্ষণ করতে থাকা, শত্রুর উপর আগুন ঝরানো— এই সব বিধ্বংসী ক্ষমতার জন্যই এই হেলিকপ্টারের এমন নামকরণ হয়েছে। এমআই-২৫-এর ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এঁটে ওঠা তালিবানের পক্ষে মুশকিল। ভারত আফগান সেনাবাহিনীকে এই ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’ উপহার দেওয়ায় কন্দহরের আশপাশে ঘাঁটি গেড়ে থাকা তালিবান কম্যান্ডাররা এ বার বিপদের মেঘ দেখতে শুরু তো করেছেনই। সঙ্গে ঘোর চিন্তায় পড়েছে পাকিস্তানও।
আরও পড়ুন:
রাফাল হাতে পেলে কতটা শক্তিশালী হবে ভারতীয় বায়ুসেনা
এস-৩০০ মিসাইল কোথায় মোতায়েন করল ভারত? চিন্তায় পাকিস্তান
কেন চিন্তায় পাকিস্তান?
যুদ্ধাস্ত্র বা যুদ্ধের কোনও সরঞ্জাম ভারত নিজের কোনও প্রতিবেশী দেশকে এত দিন সরবরাহ করত না। ভিয়েতনাম ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কোনও দেশকে ভারত সেভাবে সামরিক সাহায্য কখনও করেনি আগে। ভারতের প্রতিরক্ষা নীতিই সে রকম। কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে ভারতের দেওয়া অস্ত্রই ভারতের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই ভৌগোলিকভাবে কাছে থাকা প্রতিবেশী দেশকে সামরিক সরঞ্জাম দেয় না ভারত। কিন্তু আফগানিস্তানের পরিস্থিতি অন্য রকম। তালিবানদের হঠিয়ে আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই সে দেশ ভারতের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। তালিবান শাসন এবং দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত আফগানিস্তানের পুনর্গঠন এখন ভারতই করছে। রাস্তাঘাট তৈরি, বিদ্যুৎ সংযোগ, টেলিকমিউনিকেশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিকাঠামো তৈরির জন্য কাবুল এখন পুরোপুরিই নয়াদিল্লির মুখাপেক্ষী। সেই পরিকাঠামো তৈরির কাজ নিরাপদে চালানোর জন্য আফগানিস্তানে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ভারী উপস্থিতি রয়েছে বলেও সূত্রের খবর। ভারত-আফগান সম্পর্কের এই নতুন মাত্রার কথা মাথায় রেখেই নীতি বদলে কাবুলকে এমআই-২৫ হেলিকপ্টার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি। নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক কাবুল সফরের দিনেই সেগুলি আফগান সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে এই কৌশলগত মিত্রতা পাকিস্তানের রক্তচাপ স্বাভাবিকবাবেই বাড়িয়েছে। আফগানিস্তানে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে আপত্তি তুলেছে ইসলামাবেদ। কাজ হয়নি। এ বার ভারত-আফগান মৈত্রী এতটাই বেড়েছে যে নীতি বদলে আফগানিস্তানকে বিধ্বংসী হেলিকপ্টার দিতেও দ্বিধা করছে না ভারত। কাবুল যে এখন পুরোপুরি নয়াদিল্লির নিয়ন্ত্রণে, তা ভালই বুঝতে পারছেন ইসলামাবাদের কর্তারা। ফলে পূর্ব এবং পশ্চিম দুই সীমান্তেই ভারতের উপস্থিতি টের পাচ্ছে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy