Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দু’চোখে জল, প্রত্যয়ী চিবুক, বেলাশেষেও লড়াই জারি ওবামার

আশঙ্কা আর চোখের জল বনাম ফুৎকার আর ডাঁট। শেষ বনাম শুরু। বারাক ওবামা বনাম ডোনাল্ড ট্রাম্প। যে শিকাগো থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু, যেখানে ২০০৮ সালে প্রথম বার জিতে বিজয়-ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই শহরেই মার্কিন সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে বারাক ওবামার বিদায়ী বক্তৃতা।

বিদায়ী ভাষণে বারাক ওবামা। মঙ্গলবার শিকাগোয়। ছবি: পিটিআই।

বিদায়ী ভাষণে বারাক ওবামা। মঙ্গলবার শিকাগোয়। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
শিকাগো ও নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৮
Share: Save:

আশঙ্কা আর চোখের জল বনাম ফুৎকার আর ডাঁট।

শেষ বনাম শুরু। বারাক ওবামা বনাম ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যে শিকাগো থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু, যেখানে ২০০৮ সালে প্রথম বার জিতে বিজয়-ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই শহরেই মার্কিন সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে বারাক ওবামার বিদায়ী বক্তৃতা। যেন শেষ বারের মতো প্রমাণ করতে চাওয়া, ‘‘ইয়েস উই ক্যান! ইয়েস উই ডিড!’’ যেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখিয়ে দিতে চাওয়া, এখনও পারি!

বুধবার সকাল হতেই আসরে নামলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট হিসেবে নিউ ইয়র্কে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করে বুঝিয়ে দিলেন, ওবামা যাই বলুন না কেন, আমেরিকার ভবিষ্যত তাঁর হাতে। তিনি তাঁর মতো করেই চলবেন। অপ্রিয় প্রশ্নের জবাব দেবেন না। সংবাদমাধ্যমকে কদর করবেন না। সৌজন্যের ধার ধারবেন না। ওবামা প্রশাসনের খোলনলচে বদল করে ছাড়বেন।

উত্তরসূরি হিসেবে এই ট্রাম্পকে যে চাননি এবং এই জয় যে তাঁকে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় রাখল, সে কথা ওবামা নিজে কোনও দিন গোপন করেননি। মঙ্গলবার ছিল তাঁর যাবতীয় চিন্তা-শঙ্কা-সতর্কবার্তা শেষ বার উজাড় করে দেওয়ার দিন। ট্রাম্পের নাম করে আক্রমণ করেননি বটে। ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর হবে বলেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের দীর্ঘ বক্তৃতার গোটাটা জুড়েই ছিল গণতন্ত্রের বিপদের কথা। যে বিপদগুলো, বুঝতে অসুবিধা হয় না, ট্রাম্পের শাসনকালে বাড়বে বলেই তাঁর আশঙ্কা। তা সে অর্থনৈতিক বিভেদই হোক বা সামাজিক বৈষম্য। জাতি-বর্ণভিত্তিক বিদ্বেষই হোক বা অভিবাসী-শরণার্থীদের প্রতি বিতৃষ্ণা। ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণুতাই হোক বা কট্টরবাদের রমরমা। আশঙ্কাগুলো যে উড়িয়ে দেওয়ার নয়, বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প নিজে ফের প্রমাণ করলেন। অভিবাসন ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল যে তুলবেনই আর ওবামার চালু করা স্বাস্থ্যবিমা যে বাতিল করবেনই, সেটা জোর গলাতেই ঘোষণা করলেন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট। দাবি করলেন, কর্মসংস্থান তৈরির কাজে তিনিই ঈশ্বরের সেরা সৃষ্টি।

বিদায়ী আর আসন্ন প্রেসিডেন্টের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধিতা এ বার বেনজির আকার নিয়েছে আমেরিকায়। তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে, মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ। ওবামার দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কমিটি-সহ বিভিন্ন স‌ংগঠনের সার্ভারে রুশ হ্যাকিংয়ের অভিযোগ নিয়ে হইচই হয়েছে আগেই। এখন সংবাদমাধ্যমের দাবি, সিআইএ-সহ চারটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ওবামা এবং ট্রাম্পের কাছে রিপোর্টে দিয়েছেন, ট্রাম্প সম্পর্কে গোপনতম তথ্যও হাতিয়ে ফেলেছে ক্রেমলিনের চরেরা। সাংবাদিক
বৈঠকে অবশ্য এই অভিযোগ পত্রপাঠ উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। ফুৎকারে তাঁর জবাব, কিছু ‘অসুস্থ’ লোক ‘মনগড়া’ খবর তৈরি করছে। তবে হ্যাকিংয়ের কথাটা মানছেন তিনি। এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই ট্রাম্পের দাবি।

বুধবার সকালেই এই সাংবাদিক বৈঠক করার পিছনে ওবামার আগের দিনের বক্তৃতার জবাব দেওয়ার তাড়না কাজ করেছে বলে মনে করছে অনেকেই। কারণ দু’জনের লড়াইটা কোথাও থামেনি। ক’দিন আগেই ওবামা বলেছিলেন— তাঁর বিশ্বাস, দেশের আইন যদি তাঁকে তৃতীয় বার লড়ার সুযোগ দিত, আবারও জিততেন। অর্থাৎ পরোক্ষে যেন বলা, হিলারিকে দিয়ে হয়নি। ট্রাম্পকে আটকাতে পারতেন তিনিই। এ দিন সভার শুরুতে সত্যিই আওয়াজ উঠল, ‘‘আরও চার বছর থাকুন!’’ ওবামা বললেন, ‘‘সেটা তো হয় না।’’ মার্কিন আইনেই তৃতীয় বার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই।

আট বছর আগে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হয়ে পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন। হোয়াইট হাউসে দু’দু’টি মেয়াদ পূর্ণ করার পরে সেই তাঁকেই দেখতে হয়েছে ট্রাম্পের উত্থান। অথচ দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের হয়ে প্রচারে কসুর করেননি ওবামা। এগিয়ে এসেছিলেন স্ত্রী মিশেলও। তবু যে ট্রাম্প-ঝড় ঠেকানো গেল না, সে কি ওবামার নিজেরও পরাজয় নয়? প্রশ্নটা উঠেছে বারবার। এ দিন শিকাগোর মঞ্চটা ছিল ওবামার তরফে উত্তর দেওয়ার দিন। শেষ বারের মতো বুঝে নেওয়ার দিন, জনমনে ঢেউ তোলার ক্ষমতা আজও তাঁর আছে কি না।

ওবামা সেখানে ঘরে-বাইরে নিজের সরকারের সাফল্যের খতিয়ান দিয়েছেন। নাম না করে ট্রাম্প-পন্থীদের নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। আমেরিকান স্বপ্নের কথা উচ্চারণ করার পাশাপাশি দুর্যোগের সম্ভাব্য ঘনঘটার ছবি এঁকেছেন সবিস্তার। প্রতি পদে নাগরিকদের আরও বেশি করে সক্রিয় হতে বলে ট্রাম্প জমানায় বিরোধী রাজনীতির সুরটি কেমন হবে, সেটাও যেন বেঁধে দিতে চেয়েছেন। দাবি করেছেন, এই মুহূর্তে তিনি আট বছর আগের চেয়েও বেশি আশাবাদী।

শেষ পর্বে এসে স্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে গলা কেঁপে গেল। ভিজল টিস্যু। গাল ভাসিয়ে ভিজল প্রত্যয়ী চিবুক। মিশেল বসেছিলেন ঠিক সামনের সারিতে। পাশেই মেয়ে মালিয়া। বাবাকে কাঁদতে দেখে তখন মেয়ের চোখেও জল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farewell speech Obama President
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE