অরল্যান্ডোর ঘাতক ওমর মতিনের বাবা সিদ্দিকি মতিনেরও যোগ রয়েছে সন্ত্রাসের সঙ্গে? তেমনই তথ্য উঠে আসছে তদন্তে। সিদ্দিকি একটি রাজনৈতিক টিভি শো পরিচালনা করতেন। আফগানিস্তানের ভাষায় সম্প্রচারিত সেই টেলিভিশন শো-এ সিদ্দিকি তালিবানের হয়ে সওয়াল করতেন বলে জানা গিয়েছে।
অরল্যান্ডোর নাইট ক্লাবে ওমর মতিন গণহত্যা চালানোর পরই সিদ্দিকি মতিন ক্ষমা চেয়েছেন। দাবি করেছেন, সম্ভবত সমকামীদের উপর আক্রোশ বশতই এই ঘটনা ঘটিয়েছে ওমর। এর সঙ্গে ধর্ম বা কট্টরপন্থার কোনও যোগ নেই। কিন্তু ‘পয়াম-এ-আফগান’ নামের টেলিভিশন চ্যানেলে সিদ্দিকি যে সব রাজনৈতিক শো পরিচালনা করেছেন, সেই সব অনুষ্ঠানের ভিডিওতে চোখ রাখলে সম্পূর্ণ উল্টো ছবিই ধরা পড়ছে। সিদ্দিকি মতিন নিজে যে এক জন কট্টরবাদী, তা ইউটিউবে পোস্ট হওয়া ওই সব ভিডিওয় স্পষ্ট। তাই ওমর ধর্মীয় কট্টরবাদ থেকে হত্যালীলা চালায়নি বলে যে দাবি সিদ্দিকি করছেন, তা খুব একটা ধোপে টিকছে না বলে মার্কিন তদন্তকারীরা মনে করছেন।
পয়াম-এ-আফগান নামের যে টেলিভিশন চ্যানেলে নিজের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতেন সিদ্দিকি মতিন, সেই চ্যানেলটি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে চলে। সিদ্দিকির অনুষ্ঠানটির নাম ‘ডুরান্ড জিগরা’। দারি ভাষায় অনুষ্ঠানটি করতেন সিদ্দিকি। তাঁর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানোর বিভিন্ন এপিসোডের ভিডিও পোস্ট করা রয়েছে। অনুষ্ঠান দেখে সিদ্দিকির সঙ্গে কেউ যোগায়োগ করতে চাইলে কোন নম্বরে ফোন করতে হবে বা কোন ঠিকানায় চিঠি পাঠাতে হবে, তাও জানানো হত অনুষ্ঠানে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন সেই ফোন নম্বর সিদ্দিকির নিজেরই এবং পোস্ট বক্সের ঠিকানাটাও ফ্লোরিডায় তাঁর নিজের বাড়ির ঠিকানা।
‘ডুরান্ড জিগরা’ অনুষ্ঠানে দারি ভাষায় কী বলতেন সিদ্দিকি? ইউটিউবে ভিডিওগুলি দেখার পর তদন্তকারীরা বলছেন, অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যেই অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতেন সিদ্দিকি। এক প্রসঙ্গে থেকে হঠাৎই অন্য প্রসঙ্গে চলে যেতেন। একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, নিজেকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করছেন সিদ্দিকি মতিন। কিন্তু যে তারিখে সেই ভিডিও ইউটিউবে এসেছে, তা আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রায় এক বছর পরের তারিখ। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ যে তথ্য এই ভিডিও থেকে মিলেছে, তা হল সিদ্দিকি মতিন তালিবানের ঘোর সমর্থক। তিনি ‘ডুরান্ড জিগরা’র একটি পর্বে আফগান তালিবানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ‘‘আমাদের ওয়াজিরিস্তানের ভাইয়েরা, আমাদের তালিবান আন্দোলনের ভাইয়েরা এবং আমাদের জাতীয় আফগান তালিবানের উত্থান হচ্ছে।’’ এর পরে সিদ্দিকি বলেছেন, ‘ইনশাল্লাহ্, ডুরান্ড লাইন সমস্যার এ বার সমাধান হয়ে যাবে।’’
আরও পড়ুন:
সমকামী নাইট ক্লাবে আইএসের সন্ত্রাস
ডুরান্ড লাইন হল পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের সীমান্ত রেখা। এই ডুরান্ত লাইন নিয়ে পূর্ব আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় জনজাতি পাশতুনদের মধ্যে ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তান এবং খাইবার-পাখতুনখোয়া অঞ্চলেও পাশতুন সম্প্রদায়ের জনসংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। নিজেদের এলাকার পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়া এই পাশতুন সম্প্রদায় মেনে নিতে পারেনি। তাই ডুরান্ড লাইনের অবলুপ্তির দাবি তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের। পাশতুনদের পাখতুন বা পাঠানও বলা হয়। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ভাগ হয়ে থাকা গোটা পাশতুন অঞ্চলকে এক ছাতার তলায় আনার স্বপ্ন দেখিয়ে তালিবান ওই এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছে। সিদ্দিকি মতিনের অনুষ্ঠানে তার পক্ষেই সওয়াল শোনা গিয়েছে। তবে তিনি নিজে পাশতুন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy