Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

গোয়েন্দা নজর শ্রীলঙ্কায়, ৬০০ বিদেশি বহিষ্কৃত

দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। শ্রীলঙ্কায় ইস্টারে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের তদন্তে এখনও নানা দিক থেকে তথ্যানুসন্ধানের চেষ্টা চলছে। গত চার মাসে শ্রীলঙ্কা থেকে যে সব নাগরিক ও পর্যটক ভারতে গিয়েছেন, তাঁদের অতীতের রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে দেখা হচ্ছে তাঁদের রেকর্ড, যাঁরা কাশ্মীর গিয়েছিলেন। 

সম্ভাব্য জঙ্গিঘাঁটির খোঁজ পেয়েছে শ্রীলঙ্কা পুলিশ। ছবি রয়টার্স।

সম্ভাব্য জঙ্গিঘাঁটির খোঁজ পেয়েছে শ্রীলঙ্কা পুলিশ। ছবি রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
কলম্বো শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০২:১২
Share: Save:

দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। শ্রীলঙ্কায় ইস্টারে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের তদন্তে এখনও নানা দিক থেকে তথ্যানুসন্ধানের চেষ্টা চলছে। গত চার মাসে শ্রীলঙ্কা থেকে যে সব নাগরিক ও পর্যটক ভারতে গিয়েছেন, তাঁদের অতীতের রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে দেখা হচ্ছে তাঁদের রেকর্ড, যাঁরা কাশ্মীর গিয়েছিলেন।

এই রেকর্ড খতিয়ে দেখার কাজটি শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কার সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক একটি মন্তব্যের পরে। তিনি দাবি করেছেন, কলম্বোয় বিস্ফোরণে যারা জড়িত ছিল, তাদের মধ্যে অনেকেই প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের কেরল, কাশ্মীর এবং বেঙ্গালুরু সফর করেছে। ওই সব জায়গায় সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কতটা ছিল, চেষ্টা করা হচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারত সরকারের এক সিনিয়র অফিসার একটি চ্যানেলে বলেছেন, ‘‘শ্রীলঙ্কা প্রশাসনের দাবি আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে ওদের তরফে আমাদের এখনও কিছু জানানো হয়নি। আমরাও কিছু লোকের অতীতের রেকর্ড নজরে রাখছি।’’ তিনি মনে করছেন, যে সব জঙ্গি গোষ্ঠী নিজেদের আরও বাড়াতে চায়, তাদের নজরে কাশ্মীর সব সময়েই থাকে। তাই সেখানে নজর দেওয়া হচ্ছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দাবি করেছে, এ বছরের প্রথম চার মাসে ১৫ হাজার বিদেশি নাগরিক কাশ্মীর গিয়েছেন। তার মধ্যে বেশির ভাগ মালয়েশিয়ার নাগরিক। তার পরেই আছেন তাইল্যান্ডের নাগরিক। ওই অফিসারের দাবি, গত চার মাসে শ্রীলঙ্কা থেকে শুধু ২০ জন নাগরিক কাশ্মীরে গিয়েছেন। তাঁদের রেকর্ড দেখা হচ্ছে। কিন্তু নথি থেকে এঁরা পর্যটক বলেই মনে হচ্ছে।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলির উদ্বেগ অন্য জায়গায়। শ্রীলঙ্কার বিস্ফোরণ ভারতে চিন্তা বাড়াচ্ছে। ভারতীয় ওই অফিসারের বক্তব্য, ‘‘আইএসকে সিরিয়া আর ইরাক থেকে মুছে ফেলা গেলেও সারা বিশ্বে তাদের এখনও উপস্থিতি রয়েছে। যুবকদের এখনও মগজধোলাই করা হচ্ছে।’’

ইস্টার বিস্ফোরণের পরে তৎপর হয়েছে শ্রীলঙ্কা প্রশাসনও। দেশ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে ছ’শোরও বেশি বিদেশি নাগরিককে। যাঁর মধ্যে রয়েছেন দু’শো মৌলবিও। এই সব মৌলবিরা বৈধ পথেই শ্রীলঙ্কায় এসেছিলেন। কিন্তু ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁরা রয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের জরিমানা করে শ্রীলঙ্কা থেকে বার করে দেওয়া হয় বলে জানান দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাজিরা অবেবর্ধনে। তাঁদের পরিচয় জানানো হয়নি।

পুলিশের দাবি, এঁদের অনেকেই বাংলাদেশ, ভারত, মলদ্বীপ এবং পাকিস্তানের নাগরিক। মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘শ্রীলঙ্কার অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বহু দিন ধরেই বিদেশি মৌলবি আছেন। তাঁদের নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু ইদানীং কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছিল। সেগুলোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’’ বিদেশি মৌলবিরা দেশের যুবকদের কট্টরপন্থার দিকে চালিত করেছে কি না, সেই আশঙ্কা থেকে শ্রীলঙ্কা সরকার এ বার ভিসা নীতিতেও কিছু পরিবর্তন আনছে।

ধারাবাহিক বিস্ফোরণের দু’সপ্তাহ পরে আগামিকাল থেকে শ্রীলঙ্কায় ফের সব স্কুল খুলছে। শুরু হবে পরীক্ষাও। আপাতত ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ক্লাস শুরু হবে। স্কুলে স্কুলে মোতায়েন রাখা থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্কুল চত্বরের সামনে গাড়ি পার্কিং এখন নিষিদ্ধ। আজ থেকে স্কুলে তল্লাশি অভিযানও চালানো হয়েছে।

শ্রীলঙ্কা ৪৪০ কোটি ডলারের পর্যটন শিল্পও বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। এই দ্বীপরাষ্ট্রকে এখন এড়িয়ে চলছেন বিশ্ব জোড়া পর্যটকেরা। বিভিন্ন দেশ তাঁদের নাগরিকের শ্রীলঙ্কা সফরে নিষেধও চাপিয়েছে। প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা বলেছেন, ‘‘অর্থনীতির এমনিতেই খারাপ দশা। তার মধ্যে পর্যটনে আঘাত। আমাদের আর্থিক উন্নতির জন্য পর্যটনকে বিস্ফোরণের আগের জায়গায় ফিরতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE