মন্ত্রণা: ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ ইউঙ্কারের সঙ্গে টেরেসা মে। বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে। রয়টার্স
আস্থা ভোটের ফাঁড়া কাটালেন টেরেসা মে। তবে এখনও তাঁর মাথার উপরে ব্রেক্সিট খাঁড়া ঝুলছে।
কনজ়ারভেটিভ নেত্রী তথা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন তাঁর দলের ৪৮ জন এমপি। দলের রাশ নিজের হাতে রাখতে গেলে কমপক্ষে ১৫৮টি ভোট লাগত টেরেসার। কাল রাতের ভোটাভুটিতে দেখা যায়, তিনি পেয়েছেন ২০০টি ভোট। ফলে আগামী এক বছরের জন্য কনজ়ারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে টেরেসাকে আর চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। তবে প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২২-এর নির্বাচনে তিনি আর দলের নেতৃত্ব দেবেন না।
১১৭টি ভোট গিয়েছে টেরেসার বিপক্ষে। ফলে তাঁর চলার পথে যে কাঁটা ছড়ানো থাকছে, তা বেশ টের পাচ্ছেন টেরেসা। সেই কাঁটার মধ্যে সব থেকে বড় কাঁটা— ব্রেক্সিট। যাকে ঘিরেই দলের ভিতরে-বাইরে এত সমালোচনার মুখে পড়ছেন তিনি। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০, ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে টেরেসা বলেন, ‘‘দেশকে পূর্বপরিকল্পিত পথে নিয়ে যাব। দেশের মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করব। সব দলের সব এমপির কাছে অনুরোধ, আপনারা সবাই এ দেশের মানুষের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানান।’’ দলের একটা বড় অংশ যে তাঁর বিপক্ষে, তা মেনে নিয়ে টেরেসা বলেন, ‘‘যাঁরা আমার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন, তাঁদের জন্যই আমি ফের ইইউ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করব।’’ আজকেই ইইউ-এর
সদর দফতর ব্রাসেলসে চলে গিয়েছেন টেরেসা। ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে কথা বলে টেরেসা দেখবেন, ব্রেক্সিট চুক্তিতে বিক্ষুব্ধ ব্রিটিশ এমপিদের প্রস্তাবিত বদল আনা যায় কি না।
কাল গভীর রাতে ভোট গণনা শেষ হওয়ার পরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নানা নাটকীয় দৃশ্য দেখা যায়। টেরেসার সমর্থকেরা আনন্দে চিৎকার করতে শুরু করেন। অন্য দিকে বিক্ষুব্ধ এমপিদের কয়েক জনের চোখে জল! কট্টরপন্থী কনজ়ারভেটিভ নেতা জ্যাকব রিস মগের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর উচিত, অন্য কারও হাতে দলের রাশ তুলে দেওয়া। তিনি যা করছেন, দেশের ভালর জন্যই করছেন, এই আস্থাটা আর তাঁর উপর নেই।’’ বিরোধী নেতা, লেবার পার্টির জেরেমি করবিন বলেন, ‘‘কনজ়ারভেটিভ দলের অন্দরে এই টানাপড়েনে আমাদের কিছু এসে যায় না। প্রধানমন্ত্রীর উচিত অবিলম্বে ব্রেক্সিট চুক্তিটি পার্লামেন্টে পেশ করা, যাতে এমপিরা ভোট দিয়ে এই চুক্তি সম্বন্ধে তাঁদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন।’’ দু’দিন আগে ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ভোট হওয়ার কথা ছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করে দেন প্রধানমন্ত্রী। এখন জানা যাচ্ছে, ভোট হবে জানুয়ারির কোনও এক দিন।
ব্রেক্সিট চুক্তিতে কিছু পরিবর্তন আনার জন্য টেরেসা চেষ্টা চালিয়ে গেলেও ইইউ-এর প্রধান জঁ-ক্লদ ইউঙ্কার কিন্তু অনড়। তাঁর বক্তব্য, ইইউ-এর নেতাদের সামনে খসড়া প্রস্তাব পেশ করার আগে মে-র দেশের নেতাদের সঙ্গে আরও আলোচনা করা উচিত ছিল। তাঁরা চুক্তিটি সমর্থন করেছেন এবং আর তা পাল্টানো সম্ভব নয়। চুক্তি যদি না-ই পাল্টায়, তা হলে পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে সেই চুক্তি খারিজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। আর তা হলে কোনও চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শুরু করে
দিতে হবে ব্রিটেনকে। আগামী বছর ২৯ মার্চ ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ব্রিটেনের।
কনজ়ারভেটিভ দলের প্রবীণ নেতা লর্ড হেসেলটাইনের কথায়, ‘‘চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া ভয়ঙ্কর ভুল হবে। ভবিষ্যতের যদি কোনও দিশা না থাকে, তা হলে ইইউ ছাড়া মানে নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারা।’’ তা হলে উপায়? হেসেলটাইনের মতো অনেকেই মনে করেন, ব্রিটেনের মানুষ সত্যিই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে চায় কি না, তা বুঝতে ফের গণভোট হওয়া উচিত। হেসেলটাইন বলেন, ‘‘দু’বছর আগে যখন গণভোট হয়, তখন ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সুফল ও কুফল সম্বন্ধে সম্যক ধারণা ছিল না সাধারণ মানুষের। এখন ছবিটা স্পষ্ট হয়েছে। ফলে অবিলম্বে উচিত, ফের গণভোট করা।’’ ইউরোপীয় আদালত সম্প্রতি জানিয়েছে, ব্রিটেন চাইলে যে কোনও মুহূর্তে ব্রেক্সিট চুক্তি খারিজ করে ইইউতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ২০১৬ সালের ২৩ জুন ব্রেক্সিট (ব্রিটেন এগজ়িটিং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) নিয়ে গণভোট হয় ব্রিটেনে। ৫১.৮৯ শতাংশ ভোটদাতা ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy