ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অঝোর বৃষ্টি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মাথায় ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন দেহরক্ষীরা। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ভিজছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ এবং ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নেটো, জি৭-এর মতো প্রথাগত পশ্চিমি শক্তিজোট যখন অস্তিত্বসঙ্কটে ভুগছে, তখন এটাই গত রবিবার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামের ছবি। আর এ ধরনের নানা টুকরো ছবির মধ্যে বিশ্ব রাজনীতির বিভিন্ন প্রবণতা খুঁজে পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকদের একাংশ।
ওই বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বিশ্ব রাজনীতির তাবড় খেলোয়াড়দের ভার এবং ধার যে ভাবে ক্রমশ কমছে, সে ভাবেই ২০১৮-র বিশ্বকাপ দেখিয়ে দিয়েছে, চিরাচরিত ‘শক্তিমান’ দলগুলোর গুরুত্বও ক্রমহ্রাসমান। উদাহরণ হিসেবে ফুটবলের জি-৭ বলা হয় যে দেশগুলোকে, সেগুলোর কথাই ভাবা যাক— ইতালি, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজ়িল, স্পেন এবং ফ্রান্স। ফ্রান্সকে বাদ দিলে ইতালি এবং নেদারল্যান্ডস উঠতে পারেনি কোয়ালিফাইং রাউন্ডেই।। সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি বাকিদের কেউ। আবার এ বারের বিশ্বকাপেই দেখা গিয়েছে, সেনেগাল বা জাপানের মতো ফুটবলের জি-২০ দেশগুলো কী ভাবে হারিয়ে দিচ্ছে জি-৭ দেশগুলোকেই!
তবে এর চেয়েও বড় কথা, বর্ণবিদ্বেষ দিয়ে যে ফুটবল ম্যাচ জেতা যায় না, তা বুঝিয়েছে এই বিশ্বকাপ। কট্টরপন্থী ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ, ঘোর অভিবাসন-বিরোধী নাইজেল ফারাজ এক বার বলেছিলেন, ‘‘ইংল্যান্ড জাতীয় দলে কালো ফুটবলারদের জায়গা নেই।’’ অথচ যে ইংল্যান্ড দল এ বার সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল, তাতে শ্বেতাঙ্গ-অশ্বেতাঙ্গ ফুটবলারের সংখ্যা সমান-সমান (১২:১১)। বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স এবং তিন নম্বরে থাকা বেলজিয়াম দলের ছবিটাও একই রকম। বেলজিয়ামের লুকাকু, ফ্রান্সের এমবাপে, উমতিতি আর পোগবাদের নাম উল্লেখ করে নতুন বিশ্লেষণ হচ্ছে ফ্রান্স, বেলজিয়ামের সমাজের।
গত ৫০ বছর ধরে অভিবাসীরা যে ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন, তাতে নতুন প্রশ্নও উঠছে বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামে। সেনেগালের বিরুদ্ধে যখন জাপানের খেলা হচ্ছে, তখন কোনও আফ্রিকান কিশোর নিশ্চয় সেনেগালের হয়েই গলা ফাটাবে। কিন্তু যখন সেনেগালের প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম বা ফ্রান্স? ইউরোপের এই দু’টি দলে তো যথাক্রমে পাঁচ এবং চার জন কঙ্গো-বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় রয়েছেন!
ফাইনাল হয়ে যাওয়ার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ‘এক অনন্য বিশ্বকাপ’-এর জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। অনেকেই তারপর থেকে বলছেন, এই বিশ্বকাপ অনন্য তো বটেই। কারণ, ট্রাম্প নিজে যে ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী, ফুটবল তার উল্টো পথে হেঁটেছে। মার্কিন সীমান্তে মা-বাবার কোল থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে শিশুদের, আর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে হাত ধরাধরি করে হেঁটে গিয়েছেন এমন দুই রাষ্ট্রনেতা, রাজনীতির আঙিনায় যাঁদের হয়তো আগে কখনওই মোলাকাত হয়নি।
প্রেসিডেন্ট মাকরঁ আর প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা। যাঁদের সখ্যের ছবি অনেক দিন মনে থেকে যাবে দর্শকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy