সতেরো দিনে তিনটি ভূমিকম্প ও শতাধিক আফটারশকের ধাক্কা এখনও সামলে ওঠা যায়নি। তারই মধ্যে নতুন বিপদের আঁচ পেল নেপাল। ভূ-বিজ্ঞানীদের একাংশের আশঙ্কা, ভূকম্পজনিত ভূমিক্ষয়ের প্রাবল্যে ওই দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা যে ভাবে চূড়ান্ত ধসপ্রবণ হয়ে পড়েছে, তা অদূর ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা, মার্কিন ভূ-বিজ্ঞান সর্বেক্ষণ (ইউএসজিএস) এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি)-এর যৌথ সমীক্ষক দল জানিয়েছে, প্রথম দু’টি ভূমিকম্প ও তার জেরে সৃষ্ট আফটারশকের চোটে নেপালের বিরাট এলাকার ভূ-ত্বক নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। এতটাই, যে ২৫ এপ্রিল থেকে ৭ মে— মাত্র এই দু’সপ্তাহে মোট অন্তত তিন হাজারটি ধস নেমেছে নেপালের পাহাড়ে। সমীক্ষকদের দাবি, ওই সব ধসের ছবি উপগ্রহের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। অন্তত দু’শোটি ধসের চরিত্রও তাঁরা
বিশ্লেষণ করে ফেলেছেন। কী পাওয়া গিয়েছে তাতে?
সমীক্ষা জানিয়েছে, প্রতিটি ধসে বিশাল অঞ্চল জুড়ে ভূমিক্ষয় হয়েছে। পাহাড় থেকে গড়িয়ে এসেছে বড় বড় পাথর, যেগুলো বহু জায়গায় রুখে দিয়েছে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ। ফলে নদী গতিপথ বদলাতে বাধ্য হয়েছে।
আর এ সবেই মিলছে বড় বিপদের গন্ধ। কী রকম?
সমীক্ষকদের বক্তব্য: ভূকম্পে যে সব জায়গায় পাহাড়ের গায়ে ফাটল ধরেছে, সেখান থেকেই ঘন ঘন ধস নামছে। সেই ধসই আবার নতুন নতুন জায়গায় ফাটল ধরাচ্ছে। ‘‘এ যেন প্রকৃতির এক দুষ্ট-চক্র।’’— বলছেন এক গবেষক।
সব মিলিয়ে গোটা তল্লাট অতিরিক্ত ধসপ্রবণ হয়ে উঠেছে। ধস-বিধ্বস্ত অঞ্চলে অতিরিক্ত ভূমিক্ষয়ের দরুণ ভূস্তরের অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। আইসিআইএমওডি-র তথ্যানুযায়ী, ৭ মে যৌথ সমীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ হওয়ার পরে গত ১১ মে ৭.৩ রিখটার-মাত্রার আর একটা ভূকম্পন হয়েছে নেপাল-চিন সীমান্তে। তাতে পাহাড়ের গায়ের অনেক ছোট ছোট চিড় আকারে বড় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। যার দরুণ আরও কিছু ধসপ্রবণ এলাকা তৈরি হওয়ারও আশঙ্কা থাকছে।
আইসিআইএমওডি-র সূত্রটি জানাচ্ছেন, নেপালের পাহাড়ে কোথায় কতটা চিড় ধরেছে, কোন কোন এলাকা নতুন ভাবে ধসপ্রবণ হয়ে পড়েছে, এ সব যাচাই করতে সমীক্ষকদলের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে এবং জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি। ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, বর্ষার আগে অতি-ভঙ্গুর অঞ্চলগুলোকে চিহ্নিত করা গেলে অনেক জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করা সম্ভব হবে।
উপর্যুপরি ভূমিকম্পে নেপালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যে তিনটি নদী সংলগ্ন এলাকা (ত্রিশূলী, মরশিগন্ডি ও বুড়িগন্ডকী নদীর অববাহিকা), সেখানকার ভূকম্পের আগে-পরের উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে সমীক্ষকেরা দেখেছেন, নদীগর্ভে এবং তীরবর্তী বিশাল এলাকায় প্রচুর ফাটল ধরেছে। কোথাও কোথাও বড় বড় পাথর পড়ে স্রোত আটকে গিয়েছে, ফলে বর্ষায় বাড়তি জল ধরে রাখা যাবে না। বাড়বে হড়পা বানের ভয়।
প্রসঙ্গত, ভূকম্পদীর্ণ নেপালে বর্ষা নামলে অসংখ্য পাহাড়ি ফাটল ভেদ করে ধেয়ে আসা কাদামাটির স্রোত পাহাড়ি জনপদ ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞেরা ক’দিন আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ভূ-বিজ্ঞানীদের অনেকের অভিমত, সাম্প্রতিক এই সমীক্ষা রিপোর্ট দেখিয়ে দিয়েছে, বিপদের পরিধি কতটা। আইসিআইএমওডি-র সূত্রটি জানাচ্ছেন, নেপালে বর্ষায় সম্ভাব্য বিপর্যয় রুখতে একটা সুসংহত পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাহায্যে তা রূপায়ণের চেষ্টা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy