(বাঁ দিক থেকে) ক্রিস্টিন লোবার, জেনিফার গোলিক ও জেনিফার গঞ্জালেস।
শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা। ক্যালিফোর্নিয়া হাইওয়েতে টহলরত পুলিশের কাছে খবর গেল, নাপা ভ্যালির প্রাক্তন সেনা আবাসে এক বন্দুকবাজ হানা দিয়েছে। আবাসেরই একটি ঘরে চার মহিলাকে আটকে রেখেছে সে। খবর পেয়ে এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। এর পর দু’তরফের সংঘর্ষ, গুলির লড়াই। পুলিশের দিনভর চেষ্টায় এক মহিলাকে বন্দুকবাজ মুক্তি দিলেও ছাড় পাননি বাকি তিন জন। সারা দিন উৎকণ্ঠা আর অপেক্ষার পরে সন্ধে ছ’টা নাগাদ দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে পুলিশ। তবে বাঁচানো যায়নি কাউকেই। হামলাকারী এবং তিন মহিলার গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। অনুমান, তিন জনকে গুলি করে আত্মঘাতী হয়েছে হামলাকারী।
প্রাথমিক আতঙ্ক কাটিয়ে তত ক্ষণে জানা গিয়েছে তিন পণবন্দি এবং হামলাকারীর পরিচয়। ক্রিস্টিন লোবার (৪৮), জেনিফার গোলিক (৪২) এবং জেনিফার গঞ্জালেস (২৯) নামে ওই তিন মহিলা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী। তাঁরা মনোবিদ্ও। প্রাক্তন সেনাকর্মীদের ক্ষত-বিক্ষত মন সারিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতেন তাঁরা। বছর ছত্রিশের হামলাকারী, অ্যালবার্ট উং তাঁদেরই প্রাক্তন রোগী। প্রাক্তন সেনাকর্মী। আবাস থেকে কয়েক দিন আগেই ছাড়া পেয়েছিল সে।
নাপা ভ্যালির এই ঠিকানা আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রাক্তন সেনা আবাস। সবুজঘেরা ওই বাড়িতে মূলত আফগানিস্তান আর ইরাক ফেরত সেনাকর্মীদের মানসিক চিকিৎসা করা হয়। আবাসে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অন্য কর্মীদের মুখে জানা গেল পুরো ঘটনাটা। সে দিন সহকর্মী এক দম্পতির জন্য বিদায়ী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন অন্য কর্মী-বন্ধুরা। আনা হয়েছিল কেক, মিষ্টি। হাসি, ঠাট্টায় শুক্রবারের সকালটা ফুরফুরে মেজাজেই শুরু হয়েছিল। আচমকা বন্দুক হাতে এক ব্যক্তির প্রবেশ। যদিও মুখ চেনা। ‘‘মাত্র কয়েক দিন আগেই ছুটি পাওয়া অ্যালবার্টকে দেখেও তেমন কিছু মনে হয়নি বাকিদের’’, বলছিলেন ল্যারি কামের। ল্যারির স্ত্রী ডেভেরক্স স্মিথ ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেরই কর্মী। তাঁর চোখে মুখে তখনও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। জানালেন, পর পর গুলির আওয়াজে মুহূর্তে বদলে গেল প্রাক্তন সেনা আবাসের পরিবেশ। কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচেন স্মিথ।
তবে অ্যালবার্ট কেন হামলা চালাল, কেনই বা ওই মহিলাদের পণবন্দি করল, কিছুই জানা যায়নি। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। যুদ্ধ-ফেরত ওই সেনার মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর জেরি ব্রাউন শনিবার জানিয়েছেন, ‘‘যাঁরা দেশ ও দেশবাসীর সেবার নিজেদের নিযুক্ত করেছিলেন, তেমন তিন সাহসিনীকে হারালাম আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy